রাণীনগরে ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি দিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
নওগাঁর রাণীনগর কৃষি অফিসে কৃষি যন্ত্রপাতি নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয় বলে অভিযাগ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। কৃষির আধুনিকায়নে ভুর্তকি দিয়ে কৃষি যন্ত্রপাতি নিতে আগ্রহী কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এদিকে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতি বরাদ্দে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তা ও অফিসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।
এমনই ঘটনার ভুক্তভাগী উপজেলার সিংগাড়পাড়া গ্রামের কৃষক মোস্তাক আহম্মেদ। তিনি বলেন, কৃষি অফিসে ঘুষ দিয়ে ভুর্তকির কৃষি যন্ত্র নিতে হয় তা আমার জানা ছিলা না। আগেও আমি যন্ত্র পেয়েছি কাউকে এক টাকা দিতে হয়নি কিন্তু এবার আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪০ হাজার পরে ২০ হাজার টাকা ঘুষের কথা বলছে কৃষি অফিসের এক কর্মচারী।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রতি বছর নিজস্ব ৩০-৩২ বিঘা জমিতে নিজেই ধান চাষ করি। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমের আগে আমি কৃষি কর্মকর্তার কাছে সিডার মেশিন ও পাওয়ার থ্রেসার মেশিনের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু অফিসার আমার নাম তালিকার অনেক নিচে রাখেন। এ কারণে আমার ও আমার বাবার নামে কোনো বরাদ্দ আসেনি। পড়ে বিষয়টি ডিডি মহোদয়কে জানালে তার নির্দেশে আমার নামে একটি সিডার মেশিন আর আমার বাবার নামে একটি পাওয়ার থ্রেসার মেশিন বরাদ্দের চূড়ান্ত তালিকায় নাম এসেছে বলে জানতে পারি। পরে কৃষি অফিসে যোগাযাগ করলে অফিসের কর্মচারী রফিকুল আমাকে বলেন যে, উপরমহল থেকে এসব মেশিন বরাদ্দ আনতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এ ছাড়া স্যারকেও (উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা) কিছু দিতে হয়। তাই আমাকে নাকি ৪০ হাজার টাকা অফিসে দিতে হবে। পরে তা ৪০ থেকে কমিয়ে ২০ হাজার টাকায় নেমে আসে। কিছুদিন আগেই আমি কৃষি অফিস থেকে একটি গার্ডেন টিলার মেশিনও নিয়েছি। সরকার কৃষিতে আধুনিকায়ন করতে ভুর্তকিতে প্রতি মৌসুমে কৃষকদের বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র দিচ্ছে আর সেই যন্ত্রগুলা আমাদের কৃষি অফিস থেকে ঘুষের মাধ্যমে নিতে হচ্ছে। তাহলে কৃষকদের লাভ হচ্ছে কোথায়। আমাকে যদি দুটি যন্ত্র নিতে এত টাকা দিতে হয় তাহলে অন্যান্য বড় বড় যন্ত্র নিতে এবং প্রত্যেক কৃষককে তাহলে কত টাকা ঘুষ দিতে হয়। এটি আমাদের মতো কৃষকদের জন্য খুবই দুঃখজনক।
আরেক ভুক্তভাগী বেলঘরিয়া গ্রামের জালাল উদ্দিন বলেন, অনেক কষ্টে আমি কৃষি অফিস থেকে ধান চাষ করার একটি সিডার মেশিনের বরাদ্দ পাই। এ মেশিনের জন্য অফিসের কর্মচারী রফিকুল আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চেয়েছে। এসব বরাদ্দ নিয়ে আসতে নাকি উপরমহল যোগাযাগ করতে হয়। কিছু খরচও করতে হয় তাই ২০ হাজার টাকা খরচ হিসাবে দিতে হবে। কিন্তু আমি এক টাকাও দিতে পারব না বলে ওই কর্মচারীকে জানিয়েছি।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক কৃষি অফিসের কয়েকজন জানান, বর্তমান কৃষি অফিসারের স্বেছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতিতে পুরা অফিস অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তিনি তার পছন্দ মাফিক লোক দিয়ে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো বিশেষ করে অর্থনৈতিক কাজগুলো করে নেন। অফিসের অন্যান্য স্টাফ থাকা সত্ত্বেও তিনি তার পছন্দের অবসরপ্রাপ্ত স্টাফ দিয়ে অফিসের বিভিন্ন কাজ করেন; যা অফিসের নিয়মের মধ্য পড়ে না। এ ছাড়াও বিভিন্ন কৃষি প্রণাদনা কিংবা বরাদ্দের ক্ষেত্রে নিজের স্বেছাচারিতা উল্লেখ্যযোগ্য। বরাদ্দের কৃষি যন্ত্র প্রদানে কৃষকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া বর্তমানে অফিসের নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও অফিসের বিভিন্ন সরকারি উপকরণ নিজের পরিবারের লোক দিয়ে ব্যবহার করে আসছেন। এমন জনগুরুত্বপূর্ণ অফিসে এমন কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে কখনোই সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না বলে তারা মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ ধরনের বিষয় যদি কেউ লিখিতভাবে জানায় তাহলে অফিসের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা নেব।
উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসাইন বলেন, কৃষি অফিসের কিছু অনিয়মের বিষয় আমি শুনেছি কিন্তু লিখিতভাবে কেউ এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ওই অফিসের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাব।
এসএন