অনাবৃষ্টি-সেচ অব্যবস্থাপনায় রাজশাহীতে পুড়ছে আউশ
খরতাপে হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহীর আউশের আবাদ। কৃষকদের অনেকের বীজতলা পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অনাবৃষ্টির সঙ্গে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সেচ অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করছেন কৃষকরা। অনেকে পানি না পেয়ে আবাদই করতে পারছেন না। জমি পতিত রাখতেই বাধ্য হয়েছেন। অনেকে সময়মতো পানিও পাচ্ছেন না গভীর নলকূপের। এতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এবার পূরণ হয়নি আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে আউশ আবাদ হয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে। যেখানে আউশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৯ হাজার ৬৯০ হেক্টর। সেই হিসাবে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ৬৯০ হেক্টর কম জমিতে আউশ আবাদের হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৮ টন।
প্রত্যাশিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণও যে এ মৌসুমে অধরাই থাকছে তা এখনই স্পষ্ট। আর এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টারা দায়ী করছেন বৃষ্টিপাত কম হওয়া, খরতাপসহ বিএমডিএ এর সেচ অব্যবস্থাপনাকে।
রাজশাহীর আবহওয়া পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত বছর আষাঢ়ে ২৫ দিনে ৩৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এবার মাত্র ৮ দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ দশমিক দুই মিলিমিটার। সঙ্গে কড়া রোদ আর তাপমাত্রাও থেকেছে গড়ে প্রায় ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহীর পবা উপজেলার তিন মাসের অধিক সময় ধরে নষ্ট গভীর নলকূপ। এতে ৪০০ বিঘার আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আউশও রোপণ করতে পারেননি গভীর নলকূপ দুটির অধীনে থাকা চাষিরা। সংস্করণের জন্য কৃষকরা অর্থ জমা দিয়েও এখনও সমাধান মেলেনি।
উপজেলার মুরারীপুর এলাকার সাইমুর রহমান জানান, পানির কারণে তারা এবার কোনো আবাদই করতে পারেননি। জমি পড়ে আছে। আকাশের পানিও নেই। বিএমডিএর নষ্ট গভীর নলকূপও মেরামত হয় না। এখন আকাশের পানি আর সেচের জন্য নলকূপ ড্রাইভার ও জনপ্রতিনিধিদের পেছনে ঘুরে ঘুরে আশ্বাস শুনেই চলতে হচ্ছে।
গোদাগাড়ির উপজেলার ইশ্বরীপুরের চাষি সাবিয়ার আলী জানান, সেচের পানির জন্য অনেক ঘুরে ঘুরে কষ্ট করে কোনো মতে বীজতলা করতে পেরেছিলেন। তবে প্রায় ৪০ শতাংই নষ্ট হয়েছিল। এখন রোপণ করা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। দিনের পর দিন সেচের পানির জন্য বিএমডিএর কাছে ঘুরতে হচ্ছে। জমি ফেঁটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
৯টি উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সর্বত্রই সমস্যাগুলো জটিল হয়ে উঠছে। এখন যদি লোডশেডিং শুরু হয় তবে নতুন করে আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়বেন অনেক চাষিরা।
রাজশাহীর তানোর উপজেলাতেও গভীর নলকূপের পানির জন্য হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তানোর উপজেলার পাঁচান্দ ইউপির যোগীশো গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, পুরো আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেল কোনো বৃষ্টি নেই। পানি সেচ দিয়ে যেটুকু আবাদ করে ছিলাম তাও শুকিয়ে গেছে। জমিতে পানি শুকিয়ে ফেঁটে চৌচির হয়ে গেছে।
উপজেলার গাল্লা গ্রামের আরেক কৃষক সাদিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে আমরা আবাদ শুরু করতেই পারিনি। আমাদের সব জমি গভীর নলকূপের আওতায় না। সেগুলোর জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি কখন বৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে ছালমা বলেন, বৃষ্টি হওয়া না হওয়া নিয়ে আমাদের কোনো হাত নেয়। বৃষ্টির জন্য আমাদের অপেক্ষায় করতে হবে। আর এটার নেতিবাচক প্রভাব তো অবশ্যই পড়েছে। গভীর নলকূপের প্রতি চাপ বেড়েছে। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষকে কৃষকদের নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। আর সামনে লোডশেডিংয়ের যে বিষয়টি আসছে তেমন হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে কৃষিবান্ধব সরকার উৎপাদন ঠিক রাখতে এক্ষেত্রে নিশ্চয় সু-নজর রাখবেন।
এবিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) নিবার্হী পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, গভীর নলকূপে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এরই মধ্যে চিঠি লিখেছেন। কারণ এখানে লোডশেডিং হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর নষ্ট গভীর নলকূপ সংস্কারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই সমাধান পাওয়া যাবে।
এসএন