বৃষ্টির অভাবে পুড়ছে নওগাঁর আমন ক্ষেত
আমন ধান চাষে পানির জন্য বর্ষাকালের উপর নির্ভর করেন কৃষকরা। ৮০ শতাংশ বৃষ্টিপাত এই সময়েই হয়। আষাঢ় শেষে শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ যাচ্ছে চলে তবুও বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে ব্যাহত হচ্ছে আমন ধান রোপণ।
বিকল্প পদ্ধতিতে পানি দিয়ে বীজতলা তৈরি হলেও অনাবৃষ্টি ও প্রখর রোদে নওগাঁয় কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারছেন না। আবার অনেকে নলকূপ বা নদী-নালা থেকে পানি দিয়ে জমিতে চাষাবাদ করেছেন। তবে খরচের অভাবে নিয়মিত পানি দিতে না পারায় ধুঁকছে ক্ষেতের ফসল। সবচেয়ে বেশি বিপন্ন কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু অনাবৃষ্টি ও প্রখর রোদের কারণে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, এই সময়টাতে রোপা আমনের জমি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন তারা। জমিও প্রায় সিংহভাগ প্রস্তুত হয়ে যায়। অথচ এ বছর বর্ষাকালেও বৃষ্টি হচ্ছে না। প্রখর রোদে মাঠ শুকিয়ে যাওয়ায় অলস সময় কাটাতে হচ্ছে তাদের। আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনায় ধুঁকছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকার ধানের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কিছু কিছু এলাকায় সদ্য রোপণ করা হয়েছে চারা। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে তা মরতে বসেছে। ফেটে চৌচির জমির মাটি। এ ছাড়াও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বীজতলা। নওগাঁর প্রতিটি মাঠের চিত্রই প্রায় একইরকম।
নওগাঁ রাণীনগর উপজেলার কৃষক শরিফ মণ্ডল জানান, যখন মাঠে ধান রোপণের ব্যস্ততা থাকার কথা, ঠিক এমন সময়ে বসে কাটছে কৃষকদের দিন। সারাদিন অতিরিক্ত রোদে ঘরের বাইরে বের হওয়াই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এরপর আবার বৃষ্টি নেই প্রায় মাস পার হতে চলল। এভাবে চলতে থাকলে এ মৌসুমের আবাদ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
তিনি আরও জানান, এ মুহূর্তে কৃষক যদি গভীর নলকূপ থেকে পানি সেচে চাষাবাদ করতে চায়, তাহলে খরচ বেড়েছে যাবে অনেক। এত ঘন ঘন সেচ আর অতিরিক্ত খরচ করে চাষাবাদ করলে এ ফসল থেকে কৃষকের কিছুই থাকবে না।
নওগাঁ পত্নীতলা উপজেলার কৃষক জমশেদ আলী জানান, অনেক কষ্টে মাঠের পাশে এক ডোবা থেকে পানি সেচে আড়াই বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছিল। কিন্তু ১৫ দিনের মাথায় রোপণ করা ধান গাছগুলো পুড়ে গেছে, ফেটেছে জমির মাটি। অল্প দিনের মধ্যে যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে এসব ধান আর হবে না। শুধু দুয়েকজনের নয়, মাঠ জুড়ে একই অবস্থা। এবছর পানির অভাবে অনেক কৃষক বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। ফলে অনেকটাই অনিশ্চিত ধান রোপণ করা।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, আজ ২০ জুলাই রাত থেকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই জেলায় কেমন বৃষ্টিপাত হবে সেটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে সার্বিকভাবে বৃষ্টির একটা পূর্বাভাস আছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারহানা নাজনিন জানান, এ সময় রোপা আমন চাষ মূলত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে হয়। সেহেতু এক মাসের বেশি সময় ধরে জেলায় কোনো বৃষ্টিপাত নেই, তাই এমন দুর্যোগ মোকাবিলায় এরই মধ্যে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে গভীর নলকূপগুলো চালুর বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এসএন