নাটোরে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ সমন্বিত খামারে
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খামার পাথুরিয়া এলাকায় ছাগল-গাড়ল আর দুম্বার সমন্বিত খামারের দিকে ঝুঁকছেন নতুন উদ্যোক্তারা। কেউ কেউ আবার এর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন মাছের চাষ। এসবে লাভের অংকটা বেশ মোটা। আর তাই উদ্যোক্তাদের মনোযোগ এখন সমন্বিত খামার পদ্ধতির দিকে।
উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। ২৮ বিঘা জায়গার উপরে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত খামার। তার খামারে রয়েছে উন্নত জাতের ছাগল, গাড়ল ও দুম্বা। খামারে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ৪০০ পশু।
ওই খামারে গিয়ে দেখা যায়, খামারের প্রবেশ মুখেই রয়েছে উন্নত জাতের ছাগী, পাঁঠা ও ছাগল। রয়েছে ছাগলের বাচ্চাও। ছাগলের খামার পার হতেই রয়েছে বিশাল আয়তনের দুটি পুকুর। পশু পালনের পাশাপাশি পুকুরে মাছও চাষ করছেন তারা। এরপরেই দেখা মিলল দুম্বা খামারের। দুম্বার খামারে পুরুষ-স্ত্রী দুম্বা ছাড়াও রয়েছে সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চা।
ক্রেতাদের জন্যও রয়েছে সুব্যবস্থা। দূর থেকে আসা ক্রেতাদের থাকা আর বিশ্রামের ঘর। ব্যবস্থা রয়েছে তাদের ফ্রি থাকা আর খাওয়ার।
খামারের মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি যখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র তখন বড় ভাই রফিকের সহায়তায় চারটি উন্নত জাতের ছাগল নিয়ে খামার গড়ে তোলেন। এরপর আর তার পেছন ফিরতে হয়নি। তবে পড়ালেখাও ছাড়েননি। নাটোর এন এস সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। এরপর রাজশাহী কলেজ থেকে তিনি প্রিভিয়াস পাস করেছেন।
তিনি বর্তমানে তার চার ভাইসহ আরও ১৩ জন শ্রমিক নিয়ে পরিচালনা করছেন খামার। বর্তমানে তার ৩২৫ থেকে ৩৩০টি ছাগল, ১৩টি দুম্বা আর ৫০ থেকে ৬০টি গাড়ল রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার হোসেন জানান, তার খামারে রয়েছে রাজস্থান থেকে আনা তোতাপুরি, হরিয়ানা, যমুনাপারি, বিটল, পুটলি, কাশ্মীরি, বাতাসি আর আফ্রিকান পাতিরাজসহ ১২ থেকে ১৩ প্রজাতির উন্নত ছাগল।
তিনি আরও জানান, ছাগল আনার পর চার থেকে পাঁচ মাস লালন করে তিনি বিক্রি করেন। এতে বড় আকারের ছাগল ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আর ছোটগুলো ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এতে খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি ছাগলে তার লাভ হয় গড়ে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।
তিনি জানান, ২০০২ সাল থেকে তিনি দুম্বা পালন শুরু করেন। শুরুতে পাঁচটি দুম্বা দিয়ে খামার শুরু করলেও এখন তার খামারে রয়েছে ১৩টি দুম্বা। সম্প্রতি একটি দুম্বার বাচ্চাও হয়েছে। একটি দুম্বার দাম আড়াই লাখের মতো। আর জোড়া ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এতে প্রতিটি দুম্বা বিক্রিতে তার লাভ হয় গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। প্রতিটি গাড়ল বিক্রি করেও তার ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাভ হয়।
আনোয়ার হোসেন জানান, খামার থেকে সারাদেশে নতুন উদ্যোক্তা ও খামারিরা এসে কিনে নিয়ে যান গাড়ল, ছাগল ও দুম্বা। এ খামারে লাভের অংক বেশ মোটা। তাই নতুন উদ্যোক্তারা সমন্বিত খামার গুড়ে তুলতে বেশ আগ্রহী। চলচ্চিত্র অভিনেতা ডিপজল এ পর্যন্ত ১০০’র বেশি উন্নত জাতের ছাগল নিয়েছেন তার খামার থেকে। চলতি বছরে তিনি শতাধিক ছাগল, গাড়ল আর দুম্বা বিক্রি করেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, আনোয়ার হোসেন একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি অনেক আগে থেকেই ওই খামারের সঙ্গে সংযুক্ত। শখের বশে ছাগল পালন থেকে শুরু করে এখন তিনি সফল খামারী ও ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছেন। অনলাইনে তার অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। দেশের বেকার যুব সম্প্রদায় যদি আনোয়ারের পথ অনুসরণ করেন, তবে চাকরির বেতনের তুলনায় অনেক বেশি তারা আয় করতে সক্ষম হবেন।
এসএন