নাটোরে গাছে গাছে ঝুলছে সৌদি খেজুর
নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ও দিঘাপতিয়া ইউনিয়নে দুই উদ্যোক্তার বাগানে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে সৌদি আরবের খেজুর। এরমধ্যে এক বাগানে ৮০টি গাছে আর অপর বাগানে ছয়টি গাছে এসেছে ওই খেজুর। গাছে আসা এসব কাঁচা খেজুরই এখন মিষ্টি স্বাদে ভরপুর।
উদ্যোক্তারা আশা করছেন, চলতি জুন মাসের শেষ থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে তারা বাজারজাত করতে পারবেন খেজুর। আর স্বাভাবিক নিয়মে আরও প্রায় ৪০-৫০ বছর তারা ওই খেজুর বাজারজাত করতে পারবেন।
নাটোর শহরের মাছ ব্যাবসায়ী ও কৃষি উদ্যোক্তা গোলাম নবী জানান, ২০১৮ সালে তিনি সৌদি আরব ও ভারত থেকে প্রায় ১০ প্রজাতির ২০০ সৌদি খেজুরের চারা সংগ্রহ করেন। এরপর চারাগুলো ছাতনী ইউনিয়নের মাঝদিঘা এলাকায় প্রায় ৬ বিঘা জমিতে রোপন শেষে পরিচর্যা করতে থাকেন। এরপর ওই গাছের গোড়া থেকে নতুন চারা গজালে সেগুলোও রোপন করেন। বর্তমানে বাগানে ৩ বছরের অধিক বয়সী ১০০ টির বেশি এ প্রজাতির খেজুর গাছ রয়েছে৷ এ ছাড়া ৩ বছর ও আড়াই বছরের গাছ রয়েছে। সাধারণত ৫-৬ বছরে ওই খেজুর গাছে ফল আসার কথা শোনা গেলেও গত বছর কয়েকটি গাছে খেজুর আসে। এবছর প্রায় ৮০টি গাছে খেজুর এসেছে। আগামী বছরে সব গাছে খেজুর আসবে এমন আশা করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাছে গাছে সৌদি খেজুর ঝুলে থাকতে দেখা যায়। এসময় ওই বাগানে গোলাম নবী ছাড়াও বেশ কিছু শ্রমিককে ওই খেজুর ও গাছের পরিচর্যা করতে দেখা যায়।
গোলাম নবী জানান, কাঁচা খেজুরের স্বাদও মিষ্টি। এরপর ওই খেজুরের রং হলুদ হলেই সেগুলো সংগ্রহ করে বাজারজাত করতে পারবেন। চলতি জুন মাসের শেষ থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই খেজুরগুলো সংগ্রহ করা যাবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আজুয়া, বারহী, শিশির, সুককাইসহ অন্তত ১০ প্রজাতির খেজুর ৮০টি গাছে ৫-৬টি করে থোকা এসেছে। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-২০ কেজি পর্যন্ত খেজুর পাওয়া যাবে।
সাধারণত একটি পরিণত গাছ ৫০-৬০ বছর ফলন দেয় দাবি করে তিনি জানান, গত বছর যে ১০-১৫টি গাছে খেজুর এসেছিল, সেগুলো তারা নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি মেহমান, পরিচিতজন ও অনেক প্রতিবেশীকে দিয়েছেন।
খেজুরগুলোর আসল স্বাদ পাওয়া গেছে দাবি করে তিনি বলেন,ওই গাছগুলোর খেজুর বিক্রি করে তিনি দীর্ঘমেয়াদে অনেক লাভ পাবেন।
অপরদিকে নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর এলাকার ‘রাজধানী থাই এলুমিনিয়াম’র স্বত্বাধিকারী মোবারক হোসেন জানান, তার বাড়ি পাশের করোটা গ্রামে। তার বাবা-মা প্রথমে বীজ থেকে ওই খেজুরের চারা তৈরি করেন। চারাগুলোর বয়স এক বছর হলে তিনি ওই ৬০০ চারা ২ বিঘা জমিতে রোপন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছয়টি গাছে এসেছে খেজুর। কোনো গাছে তিনটি কোনো গাছে দুটি আবার কোনো গাছে একটি থোকা। তবে গাছগুলো বেশ ঘন করে লাগানো হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মোবারক হোসেন জানান, প্রথমে চারাগাছগুলো ঘন করে লাগানো হলেও এখন পুরুষ গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া সঠিক দূরত্ব ১২-১৫ ফুট করতে কিছু গাছ তুলে অন্য জমিতে লাগানো হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ইতোমধ্যে সাড়ে ৩ বছরে ওই গাছগুলোর জন্যে তার প্রায় ১১ লাখ টাকা খরচ হলেও বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে পারায় তিনি খুশি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সাধারণত এক একটি পরিণত গাছে ১৫-৩০টি পর্যন্ত থোকা আসে। প্রতি থোকায় ৪-৮ কেজি খেজুর পাওয়া সম্ভব।
এবিষয়ে জাবতে চাইলে নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, তিনি ও তার কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ওই বাগান পরিচর্যাসহ সব বিষয়ে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তবে ওই গাছগুলোতে ঠিক মতো প্রতি বছরই ফলন আসে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ওই দুই বাগানে সফলতা পেলে আরও উদ্যোক্তা ওই সৌদি খেজুর চাষে উদ্যোগী হবেন। নাটোরে ওই সৌদি খেজুর চাষ করা গেলে অনেক উদ্যোক্তারা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান হবে অনেকের। আর দেশে কমবে সৌদি খেজুর আমদানির পরিমাণ যার মাধ্যমে লাভবান হবে দেশ।
এসএন