ব্রয়লার ও লেয়ারে ওমেগা-৩ মাংস এবং ডিম মিলবে
লেখা ও ছবি : রাকিবুল হাসান, প্রতিনিধি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
‘ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড’ মানব হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় অতি জরুরী উপাদান। ‘ব্রয়লার মুরগীর মাংস’ ও ‘লেয়ার মুরগীর ডিম’ এই এসিড সমৃদ্ধকরণে সাফল্য লাভ করেছেন তারা। মোট চারজন, শুরু থেকে আছেন। সবাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক। তাদের ফার্ম আছে। ‘আপিজ সেফ ফুড অ্যাগ্রো লিমিটেড (এএসএফডি)’। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের ‘সেফ ওমেগা-৩ ব্রয়লার’ ও ‘সেফ ওমেগা-৩ এগ’ নামের দুটি খাবার আগামী সপ্তাহেই বাজারে বিক্রি শুরু করবেন তারা।
আজ ১৪ মে, দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সম্মেলনে তথ্যগুলো জানিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ক্যাম্পাসটির সাবেক ছাত্র কৃষিবিদ জিকরুল হাকিম। সঙ্গে ছিলেন আরেকজন-নির্বাহী পরিচালক কৃষিবিদ আহসান হাবীব।
কৃষিবিদ জিকরুল হাকিম তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রী সাংবাদিকদের গর্বভরে জানিয়েছেন, ‘আমরাই বিশ্বে প্রথম মুরগিতে এই ফ্যাটি এসিড যুক্ত করতে পেরেছি।' তিনি আরো বলেছেন, ‘দুনিয়াজুড়ে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড প্রাণীজ উৎসের মধ্যে সাগরের মাছগুলোতে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় কিন্তু বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় এবং সাগরে মাছ ধরা ঝুঁকিপূণ, কষ্টের কাজ বলে সব জায়গায় মাছগুলো পাওয়া যায় না। সাগরের মাছের একে প্রাপ্যতা কম, অনেক ব্যয়বহূলও বটে।’
তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ব্রয়লার মুরগির জাতের প্রাপ্যতা অনেক। তবে এই জাতের মুরগির মাংসে ও লেয়ার নামের আরেকটি জাতের মুরগির ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে না বলেই চলে। খুবই কম থাকে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।’
‘আপিজ সেইফ ফুড অ্যাগ্রো লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা ও নিবার্হী পরিচালক বলেছেন, ‘আমাদের এএসএফডি (আপিজ সেফ ফুড অ্যাগ্রো লিমিটেড)’র উদ্যোগেই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই খাদ্য উপাদানটি সবার কাছে কম খরচে পৌঁছে দেবার জন্য গবেষণাটি শুরু করা হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়ে টানা দুই বছরের গবেষণাটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে গবেষণাগার ও মাঠ পর্যায়ে কাজের মাধ্যমে ২০২২ সালের এপ্রিলে।’
কৃষিবিদ জিকরুল হাকিম বলেছেন, ‘আমাদের এই বিশেষ গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রয়লার ও লেয়ার জাতের মুরগিকে গবেষণা সুবিধার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ও তাদের খাদ্যগ্রহণ এবং খাদ্যভাসের পরিবতূন করা হয়েছে। গবেষণার জন্য নিবাচিত মুরগিগুলোকে প্রতিদিন আমরা খাদ্যের সঙ্গে কড লিভার তেল, ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল, ফিশ অয়েল ইত্যাদি ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ উপাদান মিশিয়ে খাইয়েছি। নিধারিত সময় পর সাফল্য লাভ করেছি ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রথমবারের মতো মুরগির মাধ্যমে আমরাই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মুরগীর মাংস উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি গবেষণার ফলাফল জানিয়েছেন, ‘আমাদের মাধ্যমে কেনা লেয়ার জাতের বিশেষ মুরগিতে এখন থেকে প্রতিটির ১শ গ্রাম ওজন হলে ৩৭৪.২৯ মিলিগ্রাম, ব্রয়লার মুরগির প্রতিটির ডিমে ১শ গ্রামে ১৮৭.১৫ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যাবে।’
‘আপিজ সেইফ ফুড এগ্রো লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, ‘আমাদের দেশের এই জাতের বিশেষ মুরগিগুলোতে ওমেগা-৩ অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয় মাত্রা অনেক বেশি আছে।’
তিনি নিশ্চিত করেছেন, তাদের গবেষণায় গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বিসিএসআইআর (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) পরীক্ষিত ও সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত।
‘আপিজ সেফ ফুড অ্যাগ্রো লিমিটেডের নিবার্হী পরিচালক কৃষিবিদ মো. আহসান হাবীব বলেছেন, “ওমেগা-৩’ নামের ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ ‘ব্রয়লার মুরগীর মাংস’ ও ‘লেয়ার মুরগীর ডিম’ মানব হৃদযন্ত্রের প্রয়োজনে অনেক কম দামে বাজারজাত শুরু করা হচ্ছে। আপিজ সেফ ফুড অ্যাগ্রো লিমিটেড বিশেষ জাতের এই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ব্রয়লার বাজারে বিক্রি শুরু করেছে প্রতিটি ৫শ ৯০ টাকা দরে। পুষ্টিগুণটিতে ভরা লেয়ার ডিমের দাম ডজনপ্রতি মোটে ২২৫ টাকা।”
কৃষিবিদ জিকরুল হাকিম ও কৃষিবিদ আহসান হাবীব বলেছেন, ২১ মে ২০২২ সাল থেকে ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেটের সুপারশপগুলোতে মুরগির মাধ্যমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কিনতে পারবেন ক্রেতারা। আগ্রহী ক্রেতা ও দোকানদারা চাইলে এই প্রতিবেদক মো. রাকিবুল হাসান, সভাপতি সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মোবাইল : ০১৭৩৯৮৯৪৭৪৬)’র সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
রাকিবুল হাসান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র ২০১৬ সালে আপিজ সেফ ফুড অ্যাগ্রো লিমিটেড শুরু করেন। পাশ করে তারা একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কাজে নামেন। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের যোগান দিতে মেধাবী এবং পরিশ্রমী জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ও কৃষিজ খাতকে আরো সমৃদ্ধ করা তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এর মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ ৪ বিভাগীয় শহরের প্রায় ৪ হাজারের পরিবারকে নিরাপদ প্রাণীজ আমিষ সরবরাহ করছেন তারা।
ওএস।