বাংলার বাঘের মৃত্যুদিন পালন করলো তার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের কাছে সবচেয়ে বিখ্যাত নামগুলোর একটি ‘শেরে বাংলা’। পুরো নাম একে ফজলুল হক। অনেকে তাকে আদর করে ‘হক সাহেব’ নামে ডাকেন। এই অঞ্চলের রাজনীতির এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। ১৯৩৫ সালে হয়েছিলেন অভিভক্ত ভারত ও পাকিস্তানের কলকাতা শহরের মেয়র, এরপর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী টানা ছয়টি বছর-১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল। দেশভাগের চার বছরের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হলেন বাংলার মধ্যবিত্তের প্রধান নেতা, কৃষক দরদী ১৯৫৪ সালে। তারপর পাকিস্তান দেশের স্বরাষ্টমন্ত্রী পরের বছর। পরের দুটি বছর পূব পাকিস্তানের গভর্নরের পদে বসলেন শেরে বাংলা। ভারতবর্ষের রাজনীতিতে বাঙালির নেতা শেরে বাংলাকে নিয়ে লিখেছেন তার নামে প্রতিষ্ঠিত ঢাকার কৃষি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকাপ্রকাশ ২৪.কমের প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম রাকিব
বরিশালের বাকেরগঞ্জের মানুষ। গ্রামের বাড়ি চাখারে। সবাই জানেন। মা-বাবার একমাত্র সন্তান একে ফজলুল হক বাঙালির স্বাধীকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে, নিপীড়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে একটি গল্পের নায়ক। তিনি কিন্তু অসাধারণ মেধাবী ছাত্র। রসায়ন, গণিত ও পদাথে অনার্সসহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের এমএ। আশুতোষ মুখার্জির জুনিয়র হিসেবে আইন পেশায় শুরু। বরিশালের অশ্বিনী কুমার দত্ত ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের স্নেহধন্য। আইনজীবি, কলেজের মাস্টার, সরকারের এই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ১৯০৬ সালের মুসলিম লিগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সমবায়ের সহকারী রেজিস্ট্রার। তারপর সরকারকে ছেড়ে চলে গেলেন জনসেবা ও আইন পেশায়। পেশাজীবি হলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শে।
রাজনীতি শুরু করলেন বাংলার এই মহান পুরুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ এবং টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি জমিদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আলী চৌধুরীর হাতে। ১৯১৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি, এরপর সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের যুগ্ম সভাপতি, সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সভাপতি। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের সমঝোতা সম্পাদন, সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যুগ্ম সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, খিলাফত আন্দোলনের নেতা, ফজলুল হক-কাজী নজরুল ইসলাম-কমরেড মুজাফফর আহমদের ‘নবযুগ’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী, মুসলিম এডুকেশনাল ফান্ডের জনক, মুসলিম বাংলা শিক্ষা পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠাতা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র তার বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমান আসন সংরক্ষণ শুরু করেছেন।
মাদ্রাসা শিক্ষায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানে নতুন অবকাঠামো ও পরিকল্পনার প্রচলক। কৃষক সমিতি, বেঙ্গল প্রজা পাটি, নিখিলবঙ্গ প্রজা সমিতি, কৃষক প্রজা পাটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান। ১৯৩৭ সালের পূর্বপাকিস্তান কোয়ালিশন সরকারে গেলেন ও মুখ্যমন্ত্রী হলেন। এরপর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি-শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মন্ত্রীসভার জনক। গরীব কৃষকদের তিনি মহাজনের সুদ থেকে বাঁচিয়েছেন। ঋণ সালিশি বোর্ড তার কীর্তি। নদী শিকস্তিদের জন্য তার অবদান আছে। মুসলমানদের জন্য ৫০ ভাগ চাকরি কোটা চালু করেছেন। ইসলামিয়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, লেডি বেব্রোর্নের জনক, ওয়াজিদ মেমোরিয়াল গালর্স হাই স্কুল ও চাখার কলেজ তার গড়া।
মুসলিম লীগকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে হটানোর শুরুটি এই শেরে বাংলার। এই বিরোধিতায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মূল রাজনীতি থেকে সরে যেতে থাকেন। দেশভাগের পর তিনি চলে আসেন ঢাকায়। ছিলেন ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল। বাংলা ভাষার আন্দোলনকে তিনি সমর্থন করেছেন ও অংশ নিয়েছেন। হক-ভাসানী-সোহরোয়ার্দী যুক্তফ্রন্টের তিনি প্রধান। এরপর মুখ্যমন্ত্রী। পূব পাকিস্তানের গভর্নর। তিনি বাংলা ও বাঙালির এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রধানতম নেতা হিসেবে আজীবন কাজ করেছেন।
তার নামে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অন্যতম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার ‘শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’। ২৭ এপ্রিল বাংলার বাঘের ৬০তম মৃত্যুদিবস। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তার বিশ্ববিদ্যালয়টি স্মরণ করেছে। সকাল ১০টায় প্রশাসন ভবনে তার স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। আলোচনা সভায় আরো ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ, রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম, পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টাডিজ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. অলোককুমার পাল, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া গবেষণা কেন্দ্র পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী, গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, ছাত্রপরামর্শ ও নির্দেশনাদান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন, আইসিসি পরিচালক ড. মো. মোফাজ্জল হোসেন, আইকিউএসি পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান খান, পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুল হক কাজল, হলগুলোর প্রভোস্ট ও শিক্ষকরা। দিনের আরো আয়োজনে ছিলেন ছিলেন ছাত্র,ছাত্রীরা।
ওএস।