উড়ালের ঘুড়িগুলো
টানা দুটি বছর করোনাভাইরাসের আক্রমণে ‘কভিড ১৯’ রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্যদের মতো বন্ধ ছিল আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে ক্যাম্পাসের প্রথম নববষের আয়োজনে কোনো কমতি রাখিনি আমরা অন্যরকমের আয়োজনগুলোতে। স্থাপত্যবিদ্যা বা আর্কিটেকচার বিভাগ ব্যতিক্রমী উৎসবের আয়োজন করেছে।
প্রথমবারের মতো ঘুড়ি বানিয়ে উড়িয়েছি সবাই নীল আকাশে। আমি সফিকুল আহসান ইমন ছিলাম তাতে। এই উৎসবের নামটি দিয়েছি সবাই ‘উড়াল’। একশর বেশি ঘুড়ি উড়েছে দূর আকাশে। উড়িয়েছি, বানিয়েছি ছাত্র, শিক্ষক মিলে। অংশ নিয়েছেন পুরো ক্যাম্পাসের আগ্রহী ছাত্র, ছাত্রীরা।
তাদের একজন আইনের আকাশ মন্ডল, ‘পহেলা বৈশাখে যে আকাশে ঘুড়ি ওড়ানো হয়, সেই রীতি বাঙালি ভুলেই গিয়েছে। তাতে ছেলে, মেয়েরা যুক্ত হতে পারে। তাদের বিনোদনের উপায় হতে পারে বৈশাখের আয়োজনে। আবার এই উৎসব আধুনিক নগরবাসী বাঙালির যেহেতু জীবনে মিলেছে, গ্রামের কৃষক, শ্রমিকের প্রতি তাদের ভালোবাসা বেড়েছে; ফলে উদযাপনের এই দারুণ উৎসবে আমরা মিলেছি ঘুড়ি উৎসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ব্যথা, অনেক দুঃখ আজ আমরা একটি দিনের জন্য ভুলে গিয়েছি। এ এক অসাধারণ উৎসব। আমাদের শৈশব, কৈশোরের উৎসবের ক্ষণগুলো আবার ফিরে এসেছে, আমাদের জীবনগুলোকে রঙিন করে দিয়েছে। আমারও খুব ভালো লেগেছে এবং আমাদের স্থাপত্যের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ প্রদান করছি।’
উৎসবের অন্যতম পেছনের মানুষ ও স্থাপত্য বিভাগের ছাত্র পার্থ ঘোষ বলেছেন, ‘বাংলা নববষের আমেজ আমাদের জীবনে নানাভাবে ছড়িয়ে আছে, পড়ছে। তবে আমাদের এই ঘুড়ি উৎসব অন্যরকমের। এটি আনন্দের ক্ষণ, আমাদের ভালোবাসার ভুবন। শত, শত বছরের গ্রামের মানুষের, শহরের ছেলেদের ছোট্ট কোনো খোলা জায়গাতে এই আবহমান ঐতিহ্যকে আমরা এবার ফিরিয়ে এনেছি। ঐতিহ্যের প্রতি বাঙালির ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছি। অনেক কষ্ট হয়েছে আমাদের এই কাজটি করতে গিয়ে।’
না ঘুমানো, না খাওয়ার দিনগুলোর কষ্টগুলোকে ভুলেছি আমরা সবাই আকাশে ঘুড়ির ডানা মেলাতে। পাখির সঙ্গে পাল্লা দিয়েছি আকাশে ঘুড়ি নিয়ে। বাঙালি ঐতিহ্যকে নিয়ে এসেছি আমরা দারুণ ক্যাম্পাসে। তারা নতুন ছাত্র, ছাত্রীদের মধ্যে নব উল্লাসের জন্ম দিয়েছেন। আগের বছরের সব ব্যথাকে ভুলেছি আনন্দ আয়োজনে। একাত্মতা, সংকল্প আর মেলবন্ধনের চচা করেছি। সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ ঘটিয়েছি। সুন্দর চিন্তার অনুশীলন করেছি। ফলে বিভাগের ইতিহাসের প্রথম ঘুড়ি উৎসব উড়ালের আয়োজন ও নিমার্ণে আমাদের স্থাপত্য বিভাগের সবাই খুব খুশি।
এই উৎসবের জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করেছিলেন প্রতিটি ছাত্র, ছাত্রী। প্রতি বছরই উড়ালের আয়োজন করবে বলে জানালো স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগ। যত কষ্টই হোক না কেন। এই উৎসবে সবার অংশগ্রহণে খুব খুশি শিক্ষকরা। জানিয়েছেন বিভাগীয় সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান। বলেছেন, ‘ছাত্র, ছাত্রীদের আগ্রহে আমরা এই উড়ালের আয়োজন করেছি।’
ওএস।