গোবিন্দগঞ্জে ব্লাস্ট রোগে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধানের বেশ কিছু ক্ষেতে ব্যাপক হারে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মাত্র দুই-তিন দিন সময়ের মধ্যে শীষ বের হওয়া কাঁচা ধান গাছ হঠাৎ করে হলুদ বর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে যাচ্ছে।
দূর থেকে অনেকটা পাকা ধানের মতো মনে হলেও আসলে তা মরা শীষ। এটিকে চাষিরা পোকার আক্রমণ বললেও কৃষি বিভাগ এটিকে ব্লাস্ট রোগ বলে চিহ্নিত করেছে। আবহাওয়ার কারণে এ রোগের আক্রমণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সারা বছরের পরিবারের খাবারের সংস্থান অকালে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার কৃষকরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ধান চাষিরা অভিযোগ করেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বোরোধানের ভাণ্ডার বলে খ্যাত বিল এলাকা মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের জীবনপুর, পুনতাইড়, শিংজানী, বালুয়া, চরপাড়া,জগদীশপুর,কুমিড়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামের বোরো ধানের ক্ষেতে পোকার আক্রমণে শীষ শুকিয়ে যাওয়া শুরু হয়। অসময়ে এ রোগের আক্রমণে এ এলাকার শতাধিক বিঘার ধান এরই মধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। এরমধ্যে কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মীকে তারা পাশে না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
৪০ বিঘা জমির মধ্যে ২০ বিঘার ধানক্ষেত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিংজানী গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলীর। তিনি বলেন, কৃষি বিষয়ে পরামর্শ বা সহযোগিতা দূরে থাক, এ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কাউকেই আমরা চিনি না। একই গ্রামের আবু তাহেরের চার বিঘা, রেজাউল করিমের তিন বিঘা, আজাহার আলী ও পাকিজা বেগমের তিন-চার বিঘা করে জমির ধান কয়েক দিনের মধ্যেই শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
তারা অভিযোগ করেন, কৃষি বিভাগের লোকজন এখানে আসেন না। তাই তাদের বাজারের কীটনাশক ও সারের দোকানিদের পরামর্শ নিয়ে জমির পরিচর্যা করতে হয়। ফলে জমিতে কখন কোন ওষুধ দিতে হয়, তারা জানেন না।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের শিংজানী ও বালুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কিছু ক্ষেতের ধান শুকিয়ে হলুদ বর্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে ধান পেকে আছে মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।
সেখান থেকে টেলিফোনে উপজেলা কৃষি অফিসে বিষয়টি জানালে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে একটি দল তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত হন। তারা জানান, কোনো পোকা নয়, ধান ক্ষেতগুলোতে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে। চাষে নিরূৎসাহিত করার পরও কৃষকরা ব্রি-২৮, ব্রি-৮১ ও কাটারিভোগ নামে ভারতীয় অননুমোদিত জাতের ধান চাষ করেছেন। সেই ক্ষেতগুলোতেই কেবল ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে।
বালুয়া গ্রামের কৃষক ফেরদৌস আলম আভিযোগ করে বলেন, কৃষি বিভাগের সঠিক নজরদারি না থাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ এ জাতগুলোর ধান চাষ থেকে চাষিরা ফিরে আসতে পারছেন না। পুরোনো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবিহীন জাতের ধান চাষ করে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, রোগাক্রান্ত ক্ষেতের ধান কেটে ফেলে স্বল্প সময়ে ফলনযোগ্য উন্নত জাতের আউশ ধান চাষের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের দ্রুত তালিকা করে প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে।
এসএন