সাতক্ষীরায় ছয় বছরে গম চাষ কমেছে অর্ধেক
গত ছয় বছরে সাতক্ষীরায় গমের চাষ কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। জেলার কৃষকদের চাষের তালিকা থেকে ক্রমেই কমে যাচ্ছে গম চাষ। শ্রমিক সংকট, কম উৎপাদন, ইঁদুরের উপদ্রব, মাড়াই সমস্যা, ভালো বীজের সরবরাহ না থাকা এবং উপকূলীয় জেলা হওয়ায় বৈরি আবহাওয়ার কারণে গম চাষে এখানকার কৃষকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন জেলার কৃষকরা। গমের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছেন তারা।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের বারি গম-৩০ বারি মৌসুম-২০২১-২০২২ থাকলেও কৃষকদের নিজ উদ্যোগে গম চাষ খুব কম হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলায় গত ছয় বছরে শুধু গমের চাষ হ্রাস পেয়েছে ৪৮ শতাংশ জমিতে। ২০১৬ সালে জেলায় গমের আবাদ হয় ১ হাজার ৫৬৬ হেক্টর জমিতে আর ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮১০ হেক্টরে। একই অবস্থা বিরাজ করছে উপকূলের জেলাগুলোতে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, ভোলা জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির গম মারাত্মকভাবে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়; যা মোট আবাদি জমির প্রায় ৩ শতাংশ। এ রোগে ফলন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে ফসল প্রায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। একের পর এক নতুন রোগবালাই নিরাময় এবং বিপর্যয় উত্তরণের প্রযুক্তি না জানার শঙ্কায় সাতক্ষীরা জেলায় গমের চাষ কমে যাচ্ছে কৃষকদের মাঝে।
জেলার তালা উপজেলার বড়বিলা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, গম চাষ বাদ না দিয়ে করব কী? এখন তো গমের ফলন ভালো হয় না। কাটা মাড়াইয়েরও মানুষ পাওয়া যায় না। গমের জমিতে ধান রোপণ করলেও ভালো হয় না। এজন্য গমের আবাদ বাদ দিয়েছি।
কলারোয়া উপজেলার করিম মোড়ল বলেন, অন্য ফসলের উন্নত মানের জাত ও বীজের গুণাগুণ, গুণগত মান সম্পর্কে আমরা সহজে জানতে পারি কিন্তু গমের জাত ও বীজের গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তবে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আমাদের মাঝে প্রশিক্ষণ দিয়ে গমের চাষ পদ্ধতি ও উন্নত জাতের বীজ সম্পর্কে জানালে ভালো হবে। তাহলে গমের চাষের উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্র জানা যায়, গত বছর উপজেলায় এক হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ হলেও সেটা এবার নেমে এসেছে ৮১০ হেক্টর। সাতক্ষীরা জেলায় দিন দিন গমের চাষ ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, গম চাষের উপযোগী জমিতে উচ্চ মূল্যের সবজি চাষ হওয়ায় গম চাষ কমে যাচ্ছে। এ বছর গম চাষের উপর কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও হয়েছে। সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে কৃষকদের।
এসএন