রাজাপুরে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখা যায় সূর্য পূব আকাশে উঁকি দিচ্ছে। ঠিক তখনই মনে হয় যেন সূর্যের দিকে তাকিয়ে উঁকি দিচ্ছে হাজার হাজার অন্য এক সূর্য। এ আর কিছুই নয়, এ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। এমনই অপরূপ চোখ ধাঁধানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ঝালকাঠির রাজাপুর বিস্তীর্ণ ফসলের জমিতে। মাঠজুড়ে সবুজের মাঝে সূর্যমুখী ফুলের অপরুপ দৃশ্যে যেন হলুদ বরণ সাজে সেজেছে প্রকৃতি। যতদূর চোখ যায়, সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। মাঠের পর মাঠ ফুটে থাকা সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে কৃষকের চোখে-মুখে স্বপ্ন পূরণের আশা দেখা যাচ্ছে।
ঝালকাঠির রাজাপুর একটি কৃষি প্রধান উপজেলা। প্রায় সারাবছর জুড়ে এখানকার বিস্তীর্ণ ফসলী জমিতে থাকে কোনো না কোনো ফসল। আর তাই বর্তমানে এখানে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। রাজাপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রাজাপুর সদর ইউনিয়ন, শুক্তাগড় ইউনিয়ন, মঠবাড়ি ইউনিয়ন, বড়ইয়া ইউনিয়ন এলাকার কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করছেন। এ বছর উচ্চ ফলনশীল আরডিএস ২৭৫, হাইসান-৩৩ ও বারি সূর্যমুখী-৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে বীজ, সার ও ওষুধসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, গত বছর উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর চাষ করা হয়েছিল।
চলতি বছর ৩৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। চাহিদা ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন। অনেক পতিত জমিতে কৃষি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে কৃষকদের বাড়তি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে সূর্যমুখী তেলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কোলেস্টেরল মুক্ত এ তেল উৎপাদনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও এর ব্যাপক চাষাবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজাপুরে বিগত বছরগুলোর মতো এবারেও সূর্যমুখীর চাষাবাদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অধিকতর লাভবান হওয়ার আশায় স্বপ্ন বুনছেন সূর্যমুখী চাষীরা। সূর্যমুখী একটি অতি লাভজনক ফসল, এবারে সূর্যমুখীর ভালো ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে ভালো ফলনে লাভবান হওয়ার আশা কৃষকদের।
সূর্যমুখী ক্ষেত ঘুরে দেখতে এসে মো. সাব্বির হোসাইন বলেন, 'সূর্যমুখী হলুদ ফুলে ছেঁয়ে গেছে তাই বন্ধুদের সঙ্গে একটু দেখতে ও ছবি তুলতে আসলাম। এখানে এসে সূর্যমুখী ক্ষেত ঘুরে দেখতে ও ছবি তুলতে পেরে অনেক ভালো লেগেছে।'
রাজাপুর উপজেলার পূর্ব রাজাপুর এলাকার কৃষক নাসির উদ্দিন খান বলেন, 'গত বছর সূর্যমুখীর চাষ করে সফল হয়েছি। তাই এ বছরও এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো। আশা করছি, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি লাভবান হতে পারব।'
রাজাপুর উপজেলার পূর্ব রাজাপুর এলাকার কৃষক মো. রাকিব বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষি কাজ করেন তিনি। এ বছর এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে সন্তুষ্ট রাকিব।
তিনি বলেন, 'ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি লাভবান হতে পারব। তার জমিতে হাসি ফুটিয়েছে সূর্যমুখী৷ তা দেখতে শহর থেকে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীরাই সেখানে ভিড় জমায়৷'
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর বলেন, এ বছর রাজাপুর উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলন খুব ভালো হয়েছে। আমরা চাষীদের সরকারিভাবে বীজ, সার, ওষুধ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি। আশাকরি ভালো ফলনে চাষিরা বেশ লাভবান হবে।
কোলেস্টেরল মুক্ত সূর্যমুখী তেল উৎপাদনে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে এবং তেল উৎপাদনে বাংলাদেশ হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাজাপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
টিটি/