দুটি গেট হলেও এখনো পূর্ণ নামফলক বসানো হলো না?
লেখা ও ছবি : রবিউল ইসলাম রাকিব, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ও ঢাকার একমাত্র সরকারী পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দুটির নাম বাংলায় নাকি ইংরেজিতে করা হবে অধ্যাপকদের মধ্যে এই আপত্তিতে ৬ থেকে ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও নামফলক বসানো যায়নি।
ঢাকাপ্রকাশ ২৪.কমের শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম রাকিব জানিয়েছেন, ‘আমাদের এই গেট দুটি অত্যন্ত উপকারী। বিশ্ববিদ্যালয়কে সুরক্ষিত রাখবে। ছেলে ও মেয়েদের নিরাপত্তা দেবে। এই গেট দুটিসহ স্থাপনা বানাতে সরকারের ১ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে সেখানে এ কারণে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাম লিখতে পারেননি। ফলে যারা ভর্তি হয়েছে ও বিভিন্ন কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন, তারা না বলে দিলে চিনতে পারছেন না। অন্যদের কাছে আমরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না। তবে এই ফটকগুলো অত্যন্ত সুন্দর, ছায়াদায়ী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব।’
তিনি বলেছেন, ‘শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীরা নিমার্ণের এতদিন পরেও ফলকে নাম লেখা নেই বলে অত্যন্ত ব্যথিত ও রেগে আছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে তিনি জেনেছেন, ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও সুরক্ষিত ও ভালো মানের করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করতে নিয়ে গিয়েছেন। তবে গর্বের বিষয় হলো, তারা সবাই তাড়া দিয়ে প্রথম তিন মাসের মধ্যেই মার্চে কাজ শেষ করে ফেলেছেন ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দান করেছেন ‘
এখনো পুরো ব্যয় নাম বসানোর অভাবে জানতে না পারলেও আগের হিসেবে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা খরচ হবে জানানো হয়েছিল। স্থপতিদের পরামর্শের ব্যয় সেখানে আছে ৭ লাখ টাকার কাছে।
তবে সেই ফটক এখনো নাম নিতে পারেনি। কী নাম হবে, ‘শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়?’
এই বিষয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারাও। ছাত্রবৃত্তি উপ-সম্পাদক ফাতিন এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নাম না থাকায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের কাছে উপহাস ও অস্বস্তিতে থাকতে হয়।’
একটি অভিজ্ঞতা বলেছেন তিনি, ‘কদিন আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা আমাদের ক্যাম্পাসে বেড়াতে এসেছিল। তারা গেটের বাইরে অনেকক্ষণ ঘুরেছে কিন্তু সামনে থেকেও চিনতে পারেনি। পরে জেনে নিয়েছে।’
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রবৃত্তি উপ-সম্পাদক আরো জানিয়েছেন, ‘নানা গবেষণা, ভর্তি পরীক্ষা ও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষা হয় নিয়মিত আমাদের এই স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে নামফলক না থাকায় ২০১৯ সাল থেকে আজো তারা আমাদের ক্যাম্পাসটি খুঁজে বের করতে পারছেন না একা। পরিচিত ছাড়া অন্যদের এই সমস্যা হচ্ছে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমি গেট দুটিতে নামফলক বসিয়ে দেবার দাবী করছি।’
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মোমেনুল আহসান খুব গর্বিত তারা দারুণ গেট বানাতে পেরেছেন। আরো জানিয়েছেন, ‘আমরা আমাদের প্রধান গেট দুটির কাজ অনেক আগে শেষ করতে পেরেছি। তবে আমাদের কার্যাদেশে তো নামফলক বসানোর নির্দেশ ছিল না। ফলে এই বিষয়ে আমি জানি না।’
প্রকৌশলী মোমেনুল আহসান আরো বলেছেন, ‘শেরে বাংলার নাম ইংরেজিতে নাকি বাংলায় লেখা হবে এই সিদ্ধান্তে আমাদের অধ্যাপকরা এখনো আসতে পারেননি বলে নাম লিখে দিতে দেরি হচ্ছে।’
তবে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূইয়া স্যারের নির্দেশের পর দ্রুত নামফলক বসানো হবে।’
তার অধীনে কাজ করা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এম.এস. টেক স্কয়ার এই গেট দুটি তৈরি করেছে। তারাও খুব খুশি এমন ভালো এবং দীর্ঘদিনের উপযোগী বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বানাতে পেরে। তাদের নাম কী কোথাও রাখা যায়-এই প্রত্যাশা নিয়ে ঠিকাদার মাসুদ বলেছেন, ‘আমাকে দেওয়া কার্যাদেশের ছয় থেকে সাত মাস আগে কাজ শেষ করতে পেরেছি। তবে নাম কী লিখবো না জানতে পারায় আমরা এখনো বিল করতে পারছি না। ফলে শ্রমিকদের অভাব বাড়ছে।’
এর বাদেও তিনি জানিয়েছেন, ‘গেটের নাম লেখার কাজটিও আমাকে দিয়ে করানো হবে বলে শিক্ষকরা মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। তাতেই হবে। তবে স্টিলের করবেন কী না এখনো চূড়ান্ত বলেননি। আর ফ্রন্ট নিয়ে তাদের ঐক্যমত হলো না! আমাকে তারা স্যাম্পল দেখাতে বলেন। আমি নিয়ে যাই। তারা পছন্দ করেন না। তারা গুণী ও জ্ঞানী লোক। আমি তাদের সঙ্গে কীভাবে পারবো? তবে এজন্য আমার খরচ তো বাড়ছে। তারা নিজেরা কোনো স্যাম্পল তৈরি করতে পারেন না। এ তো ভালো সমস্যা।’
এই বিষয়ে ঢাকাপ্রকাশ ২৪.কমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তার ভিসি স্যারের মুখোমুখি হয়েছেন। অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া সাংবাদিক ছাত্রকে বলেছেন, ‘আমাদের টেন্ডারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক বসানোর কথা বলিনি। ফলে তারা লিখে দিতে পারেনি। এখন অন্য কোনো খাত থেকে আমাদের নামফলকের টাকা যোগাড় করতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ফটকে বাংলা ও ইংরেজিতে লিখব।’
ওএস।