টমেটো চাষ করে সফল কুমিল্লার রাসেল
কৃষিকাজ করেও যে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়, তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মার্স্টাস পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মান লাভ করে কয়েক বছর ধরে চাকরির পেছনে ঘুরতে ঘুরতে যখন ক্লান্ত, ঠিক তখনি নিজ এলাকার এক বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ৪০ শতক জমি বর্গা নিয়ে টমেটো চাষ শুরু করেন।
টমেটো চাষ করে সফলতা পেয়ে সচ্ছলতা এসেছে রাসেলের পরিবারে। পরিবারে চার বোন ও দুই ভাইয়ের মাঝে সবার বড় তিনি। দুই ভাই পড়ালেখা করছেন। জেলার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের পানিপাড়া গ্রামের মাঠজুড়ে দৃষ্টিনন্দন টমেটো খেত তার। সারিবদ্ধ গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত থোকা থোকা টমেটো শোভা পাচ্ছে। অনেকেই টমেটো ক্ষেত দেখতে আসছেন। ক্ষেতে দাঁড়িয়ে কথা হয় টমেটো চাষি রাসেল আহমেদের সঙ্গে।
তিনি জানান, নিজের কোনো আবাদি জমি নেই। নিজ উদ্যোগে করোনাকালীন ২০২০ সালে মায়ের দেওয়া ৪০ হাজার টাকা নিয়ে ৪০ শতক জমি বর্গা নিয়ে প্রথম টমেটো চাষ করেন। প্রথম বছর তার ১ লাখ টাকা বিক্রি হাওয়ায় লাভ হয় ৬০ হাজার টাকা। পরের বছর ২০২১ সালে আবারও ৪০ শতক জমিতে আবাদ করে চারগুণ লাভের মুখ দেখেন তিনি।
বছরের অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে টমেটোর চারা রোপণ করেন। এ বছর তিনি ৪০ একর জমিতে আগাম জাতের টমোটো চাষ করেছেন। আড়ৎদারের কাছে প্রতি কেজি টমেটো এখন গড়ে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা টমেটো এখন বাজারে পাওয়া গেলেও তার ক্ষেতের টমেটোর চাহিদা বেশি ক্রেতাদের কাছে। খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। এরইমধ্যে বাজারজাতকরণ শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করা হয়েছে।
তিনি আশা করছেন, এখন দাম কিছুটা কম হলেও জমিতে যে পরিমাণ টমেটো আছে, তাতে বাজারমূল্য ঠিক থাকলে আরও লাখ টাকা পাওয়া যাবে।
রাসেল আহমেদ জানান, 'করোনাকালে চাকরির পরীক্ষা দিতে দিতে পরিবারের জমানো সব টাকা শেষ হয়ে যায়। একসময় হতাশ হয়ে যাই। পরিবারের বড় সন্তান হাওয়ায় জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করছি ছোটবেলা থেকে। এক বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণা ও মায়ের সহযোগিতা টমেটো চাষে আমার পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। সরকারি কোনো সুযোগসুবিধা পেলে উৎপাদন আরও বাড়াতে পারব। সফলতা দেখে বিভিন্ন আগাম সবজি চাষে ঝুঁকেছেন চান্দিনার তরুণচাষিরা। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে ভবিষতে ১০০ শতকের টমেটো চাষ করতে চাই।'
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, অধ্যবসায় ও পরিশ্রম দিয়ে যে কেউ নিজের ভাগ্য বদলাতে পারে, রাসেল তারই প্রমাণ। চাষিরা যাতে আগাম সবজি চাষ করে লাভবান হতে পারেন সেজন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে প্রচারণা চালানো হয়।
টিটি/