বরিশালে তরমুজের ফলন কম, দাম ভালো
দেশে তরমুজের চাহিদার বড় একটি অংশ আসে বরিশাল অঞ্চল থেকে। বেশি স্বাদের পাশাপাশি আকারে বড় হওয়ায় পুরো দেশজুড়ে এখানকার তরমুজের চাহিদাও প্রচুর। চলতি বছর বেশি পরিমান জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এতে কিছু তরমুজ চাষির মুখে হাসি ফুটলেও অনেকের মধ্যে হতাশার চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।
বরিশালের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় চলতি মৌসুমে মোট ৪৬ হাজার ৪৫১ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। যা বিগত মৌসুমের (২০২০-২১) চেয়ে ১১ হাজার ৭৬৩ হেক্টর বেশি।
তবে শেষের দিকে উতরা বাতাস এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টির না হওয়ায় তরমুজের ফলন কমে এসেছে। ফলে অনেক ক্ষেতের একটি গাছে মাত্র একটিই তরমুজ ধরেছে। আবার কারো কারো ক্ষেতের তরমুজের আকার ছোট রয়ে গেছে। ফলে চাষিরা তরমুজ বিক্রি করে খরচ উঠিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বরিশাল নগরীর লঞ্চঘাটের তরমুজের পাইকারী বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রলার বোঝাই তরমুজ ঘাটে আসছে। চলছে তরমুজ বেচা-কেনার ধুম। রমজানকে সামনে রেখেও ব্যাপক প্রস্তুতি আছে তরমুজের বাজারে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের কর্মর্কতাদের তদারকি করতেও দেখা যায় এ বাজারে।
ঘাটে তরমুজের দর-দাম নিয়ে এ প্রতিবেদকের কথা হয় চাষি মো. রাজিবের সঙ্গে। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমি প্রায় ৪৫ কানি জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। কিন্তু কৃষি অফিস থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। গত বছরের তুলনা এ বছর আমার ক্ষেতে ফলন কম হয়েছে। প্রায় সব চাষিরই এ অবস্থা। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, উতরা বাতাস। এ ছাড়া শেষের দিকে একদমই বৃষ্টি হয়নি। কেননা, তরমুজ চাষে বৃষ্টির প্রয়োজন আছে। এতে তরমুজে রস বেশি হয় এবং আকাড়ে বড় হয়।
তিনি বলেন, আজ এখানে (বরিশাল পাইকারী তরমুজ বাজার) ৬ হাজার তরমুজ নিয়ে আসছি। প্রতি পিস ১৮০ টাকা করে বিক্রি করেছি।
চাষি রাজিব আরও বলেন, তবে টানা আট বছর ধরে তেতুঁলিয়া নদীপথে ডাকাতির শিকার হচ্ছেন তরমুজ চাষিরা। বিশেষ করে, ভোলার খাসেরহাট আর বাউফলের ধুলিয়া এলাকার পাঁচটি স্পটে ডাকাতি বেশি হচ্ছে।
এসব পথে নৌ-পুলিশের টহল দাবি করেছেন এ অঞ্চরের তরমুজ চাষিরা।
বরিশাল পাইকারী তরমুজ বাজারের আরতদার তরুণ দাস ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বাজারে তিন ধাপে তরমুজ ওঠে। তার দুই ধাপ বিক্রির জন্য উঠে এসেছে। শেষের এক ধাপ এখনও রয়ে গেছে। সেটা রমজানের মধ্যেই চলে আসার সম্ভাবনা আছে। তবে কোনো দুর্যোগ না হলে তরমুজের ক্রাইসিস হবে না।
এদিকে, বরিশালের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে পটুয়াখালী, বরগুনা এবং ভোলা জেলায়। তুলনামূলক কম চাষ হয়েছে বরিশাল, পিরোজপুর এবং ঝালকাঠিতে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর, বরগুনায় ১১ হাজার ৫১২ হেক্টর, ভোলায় ১১ হাজার ২৪৯ হেক্টর, বরিশালে ৬৪৬ হেক্টর, পিরোজপুরে ১০৬ হেক্টর এবং ঝালকাঠিতে ৪৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।
এমএসপি