ঢাকার কাছে কম খরচের ১০ রিসোর্ট
ব্যস্ততার ভিড়ে একটু ছুটি মিললেই কোথায় ঘুরতে যাবেন তা নিয়ে পরিকল্পনার শেষ নেই। যানজট এড়িয়ে কম দূরত্বে যদি কোথাও যাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। এ কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঢাকার কাছের রিসোর্টগুলো। যারা ১ দিনের জন্য ঢাকার আশেপাশে ঘুরে বেড়ানোর মতো জায়গা খুঁজছেন, তাঁরা জেনে নিন ঢাকা বিভাগের আশেপাশের জেলাগুলোতে অবস্থিত এমন ১০টি মনোরম জায়গার নাম ও প্রয়োজনীয় তথ্য । এসব রিসোর্টে তুলনামুলক কম খরচে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
১। ভাওয়াল রিসোর্ট:
সরকারি পিকনিক স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম গাজীপুরের এ ভাওয়াল উদ্যান। চত্ত্বর গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর থানা জুড়ে অবস্থিত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। খেলাধুলার জন্য রয়েছে বড় একটি মাঠ।তাছাড়া রয়েছে এখানে একটি চিড়িয়াখানা। পৃথিবীর অন্যান্য জাতীয় উদ্যানের আদলে ৬,৪৭৭ হেক্টর জমিতে ১৯৭৩ সালে এ উদ্যান সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মূল উদ্ভিদ হলো শাল। এছাড়াও নানারকম গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ এ উদ্যান। জাতীয় উদ্যানের ভেতরে বেশকয়েকটি বনভোজন কেন্দ্র, ১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্ট হাউস রয়েছে। উদ্যানে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৬ টাকা। এছাড়া পিকনিক স্পট ব্যবহার করতে হলে, বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় (০২-৮৮১৪৭০০) থেকে আগাম বুকিং দিয়ে আসতে হবে।
২। ছুটি রিসোর্ট:
ছুটি রিসোর্টে রয়েছে নৌভ্রমণের ব্যবস্থা, বিরল প্রজাতির সংরক্ষিত বৃক্ষের বনে রয়েছে টানানো তাঁবু। ছনের ঘর, রেগুলার কটেজ, বার্ড হাউস, মাছ ধরার ব্যবস্থা, হার্বাল গার্ডেন, বিষমুক্ত ফসল, দেশীয় ফল, সবজি, ফুলের বাগান, বিশাল দুটি খেলার মাঠ, আধুনিক রেস্টুরেন্ট, দুটি পিকনিক স্পট, গ্রামীণ পিঠা ঘর, বাচ্চাদের জন্য কিডস জোনসহ সারা দিন পাখির কলরব, সন্ধ্যায় শিয়ালের হাঁক, বিরল প্রজাতির বাঁদুড়, জোনাকি পোকার মিছিল ও আতশবাজি, ঝিঁঝিঁ পোকার হৈচৈ। আর ভরা পূর্ণিমা হলে তো কথাই নেই।
৩। নক্ষত্রবাড়ী রিসোর্ট:
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি এলাকায় শিল্পীদম্পতি তৌকির-বিপাশা গড়ে তুলেছেন নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট। প্রায় ২৫ বিঘার এই রিসোর্টে রয়েছে কনফারেন্স সেন্টার, রেস্তোরাঁ ও সুইমিংপুল। থাকার জন্য আবাসিক হলের পাশাপাশি রয়েছে বাঁশ এবং প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি ১১টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কটেজ। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭৭২২২৪২৮১ নাম্বারে।
৪। রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট:
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বিপরীত দিকের বড় সড়ক থেকে ডানের গলিপথ ধরে সবুজের অরণ্যে হঠাটি হারিয়ে যাবেন আপনি। ভবানীপুর বাজার পেরিয়ে চিকন রাস্তা ধরে আরও কিছুটা দূর…। পথের দুধারে ঘন শালবন। যতদূর চোখ যায়, শুধুই গাছ আর গাছ। পুকুরপাড়ের গাছটিতে মাছরাঙা পাখি শিকারের আশায় বসে। পুকুরের তীর ঘেঁষে বকের হাঁটাহাঁটি। হরেক রকম পাখি দেখে মনে হতে পারে, হয়তো কোনো গহীন জঙ্গলে এসে পড়েছেন। সত্যিই গহীন অরণ্য। রাস্তার দুধারে দূরের শালবন ছাড়াও খেজুরগাছ, বটগাছ। রাস্তার পাশে আদিবাসীদের কিছু বাড়িঘর।
গাজীপুরের শালবনের গহীনে প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে ২৬টি কটেজ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট। এখানে কয়েকটি মাটির ঘরও রয়েছে। চাইলে রিসোর্টের লেকে মাছ ধরতে এবং নৌকা চালাতে পারেন। সাইমিংপুলের পাশাপাশি সাইক্লিং করার ব্যবস্থাও রয়েছে। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭৯৩৩১৩৬৬২ নাম্বারে।
৫। সারাহ রিসোর্ট:
ঢাকার কাছে পরিবার নিয়ে আনন্দময় সময় কাটাতে পারেন সারাহ রিসোর্টে। গাজীপুরের রাজাবাড়িতে ২০০ বিঘাজুড়ে নির্মিত সারাহ রিসোর্টে আছে ৬টি বাংলো, ওয়াটার লজ, রাজা ভিউ টাওয়ার, সুইমিং পুল, ৯ডি মুভি থিয়েটার, ভিআর গেমস, মিনি বার, জিম, জাকোজি, মাড হাউস, কিডস জোন, ইনডোর ও আউটডোর গেম, কায়াকিং, বোট রাইডিং, সাইকেল রাইডিং, মিনি চিড়িয়াখানা ইত্যাদি। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৯৮০০০৩০০০ নাম্বারে।
৬। জল ও জঙলের কাব্য:
পূর্ণিমায় বিলের পাশে বসে জোসনা দেখার অন্যরকম অনুভূতি পেতে চাইলে যেতে পারেন জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে। পুরোপুরি গ্রামীণ পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে জল ও জঙ্গলের কাব্য। ডে-টুরের জন্য এই রিসোর্ট জনপ্রিয়। চাইলে রাতে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। রিসোর্টের পাশের বিলে নৌকা ভ্রমণেও সময় কাটাতে পারেন। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮৮৫০০৭৭৭৭ নাম্বারে।
৭। পদ্মারিসোর্ট , মাওয়া:
পদ্মা নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই রিসোর্টের কটেজগুলোতে বেশ আরামদায়ক এবং নিরিবিলিতে সময় কাটাতে পারবেন। কটেজগুলোর নামকরণও করা হয়েছে বেশ সুন্দরভাবে। ১২টি কটেজের নাম রাখা হয়েছে বাংলা বছরের ১২টি মাসের নামানুসারে। আর বাকি চারটির নাম নেওয়া হয়েছে চারটি ঋতু থেকে। যদি ভরা বর্ষায় আসেন তাহলে কটেজগুলোর সামনে পানি টলমল করবে। এর ওপর কাঠের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। মনে হয় কটেজগুলো যেন ভেসে আছে পানিতে।
ছুটির দিন কিংবা ঈদের বন্ধ ছাড়া বুকিং না করে গেলেও সাধারণত কটেজ খালি পাওয়া যায়। বুকিংয়ের জন্য পদ্মা রিসোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সব তথ্য পাওয়া যাবে। এখানে যদি শুধু দিনের বেলা ভাড়া করতে চান, তাহলে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত থাকতে পারবেন এবং সেক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ২৩০০ টাকা। আর যদি দিনসহ রাতও কাটাতে চান, তাহলে ভাড়া লাগবে ৩৪০০ টাকা। মোট ১৬টি কটেজ। এই কটেজগুলোই মূল আকর্ষণের জায়গা। ফোনঃ ০১৭৩৭৪৫৮৮৬৬,০১৬৮৯৭৭৭৪৪৪।
৮। রাঙামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট রিসোর্ট:
রাঙামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট রিসোর্ট গাজীপুরের চন্দ্রায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে বনভোজন কেন্দ্র, লেকে মাছ ধরা ও বেড়ানোর ব্যবস্থা এবং কটেজে অবকাশ যাপনের ব্যবস্থা। শালগাছ ঘেরা এই রিসোর্টের লেকে নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থার সঙ্গে সুইমিং পুলও রয়েছে। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮১১৪১৪০৭৪ নাম্বারে।
৯। দ্যা বেজ ক্যাম্প বাংলাদেশ:
দ্যা বেজ ক্যাম্প বাংলাদেশের প্রথম আউটডোর অ্যাক্টিভিটি ক্যাম্প। ২০১৩ সালে এটি গড়ে তোলা হয়। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য দারুণ একটি জায়গা এটি। গরমে শীতলতা পাওয়ার জন্য রয়েছে সুইমিংপুল। শিশুদের জন্য রয়েছে স্পেশাল জোন। শালবনে ট্রেকিংসহ পুকুরে মাছ ধরারও ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে রাতে তাঁবুতে থাকতেও পারব্নে। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৯৫২৭৭৭৯৯৯ নাম্বারে।
১০। নুহাশ পল্লী:
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের বাগানবাড়ি ও শুটিং স্পট। প্রায় ৯০ বিঘা জায়গা নিয়ে এই নন্দন কাননে আছে একটি ছোট আকারের চিড়িয়াখানা, শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি বিশাল পুকুর, দৃষ্টিনন্দন কটেজ, ট্রি হাউস বা গাছবাড়িসহ আরো অনেক আয়োজন। নুহাশ পল্লীর ভেতরের বিশেষ আকর্ষণ হলো ঔষধি গাছের বাগান। এত সমৃদ্ধ ঔষধি বাগান এদেশে বিরল। সবমিলিয়ে নুহাশ পল্লী ছবির মতো সাজানো গোছানো এক প্রান্তর। যেখানে গেলে আপনা আপিনি মন ভালো হয়ে যাবে। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই তিনমাস বনভোজনের অনুমতি মেলে নুহাশপলস্নীতে। যোগাযোগ :০১৬৩৬৯৯৯৩৩৩, ০১৭৩৭৪৫৮৮৬৬।