ডিজনিল্যান্ডে ২, ৯, ৯৫ দিন টানা বেড়িয়ে জেফ রেইটজের বিশ্বরেকর্ড
ডিজনিল্যান্ডে বেড়াতে আসা অনেকেই আছেন ও তাদের সবার ওপরে আছেন জেফ রেইটজ। ৫০ বছরের এই মানুষটি ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা। একটানা ২ হাজার ৯শ ৯৫টি দিন বেড়িয়েছেন বিশ্বখ্যাত এই ভুবনে। এসেছেন ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত। একটি দিনও বাদ দেননি। ফলে থিমপার্কটিতে সবচেয়ে বেশিদিন ভ্রমণের বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন রেইটজই।
এক দশক আগে রেইটজের অভিযানের শুরু হয়েছে। তখন কেবল চাকরি হারিয়েছেন মানুষটি। ফলে অপ্রত্যাশিতভাবে তার হাতে অনেকটা সময় কর্মহীন এসে গেল। একদিনের সফরের পর আরেকটি দিন বেড়াতে এলেন। এভাবে ডিজনিল্যান্ডে বেড়াতে ভালো লাগা বাড়তে লাগলো তার। ফলে হাজার দিনে পৌঁছে গেলেন তিনি এবং ডিজনিল্যান্ডের জন্য তার খোলা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজার, হাজার অনুসরণকারী হয়ে গেল। ২০১২ সালটি তার জীবনে আরো একটি অনন্য দিন এ কারণে যে, বছরটি ছিল একটি লিপ ইয়ার। এর মধ্যে তিনি ডিজনিল্যান্ডের বার্ষিক পাস নিয়েছেন। ২০২০ সালের শুরুর দিকের মহামারির সময়ে তার এই অবিশ্বাস্য সফর থেমে যেত। তবে এর মধ্যেই তিনি ইতিহাস গড়ে ফেললেন। টানা আটটি বছর প্রতিটি দিন ডিজনিল্যান্ড বেড়ালেন তিনি। এর ফলে রেইটজ হয়ে গেলেন একজন বড় তারকা। গিনেজের গবেষকরা তার কাজ নিয়ে গবেষণা করলেন ও একটি নতুন বিশ্বরেকর্ডের মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন।
এর ফলে ডিজনিল্যান্ডের সঙ্গে একটি ইতিহাস তৈরি হয়ে গেল তার এবং ডিজনিল্যান্ডেরও। তিনি একটি ইতিহাসের মালিক হয়ে গেলেন ও ডিজনিল্যান্ডকে একটি ইতিহাস গড়ে দিলেন। যখন তিনি এই শিশুদের বিশ্বসেরা বিনোদন পার্কে বেড়াতে গেলেন বুড়ো এই পার্কটি তার একটি বন্ধু হয়ে গেল। বলেছেন তিনি, ‘আমি ক্যালিফোনিয়া অঙ্গরাজ্যের হান্টিংটন বিচ শহরে বড় হয়েছি এবং এখানের অরিগন কাউন্টির আনাহাইম শহরের ডিজনিল্যান্ডের সঙ্গে আমার ছেলেবেলা থেকেই সম্পর্ক আছে। কেননা, আমার বাবা-মা ও ভাই, বোনেরা বছরে কয়েকবার ডিজনিল্যান্ডে বেড়াতে আসতে অভ্যস্থ ছিলেন।’ আরো বলেছেন, ‘এটি একটি বেড়ানোর খুব সুন্দর জায়গা ও মানুষের সঙ্গে আলাপের জন্য অবিশ্বাস্য সুন্দর স্থান। আর আমার এখন মনে হয় সত্যিই ডিজনিল্যান্ড বেঁচে আছে। আমি এখানে অনেককিছু বদলে যেতেও দেখেছি। এছাড়াও ডিজনির মানের তুলনায় খরচ সত্যিই খুব কম।’
তবে যখন চাকরি পেয়ে গেলেন তখনো তিনি ডিজনিল্যান্ডে বেড়ানোর অভ্যাস থামালেন না। চাকরি থেকে বেরিয়ে পার্কে বেড়িয়ে তিনি বাড়িতে ফিরতেন। ‘এই কাজটি আমি মজা পেয়ে করতাম। তবে পার্কে বেড়ানোর সময় ভিন্ন, ভিন্ন জায়গাতে বেড়ানোর চেষ্টা করতাম। আমার পার্কে এখানে, সেখানেও বেড়ানো হতো। একটি কাজই কেবল নিয়মিত করেছি। সেটি হলো আমার সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে প্রতিদিন পোস্ট করেছি। আর প্রতিদিন পার্কের যেকোনো একটি আলাদা ছবি পোস্ট করার চেষ্টা করতাম’ বলেছেন তিনি।
তবে বলেছেন ২০১২ সালে যখন তিনি ইনস্ট্রাগ্রামে পোস্ট করা শুরু করলেন, তখন আজকের মতো বিশালাকায় অবস্থানে এসে পৌঁছেনি এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি। আর স্মার্টফোনগুলোও আজকের মতো উন্নত ছিল না। প্রথম কয়েকটি বছর তিনি তার বø্যাক বেরি বোল্ড ৯৭০০ দিয়ে ছবি তুলতেন ও সেই ডিজনিল্যান্ডের ছবিগুলো ইনস্ট্রাগ্রামে পোস্ট করতেন।
ডিজনিল্যান্ডে রেইটজের প্রিয় জায়গাটি হলো ম্যাটারহর্ন ববসেল্ডস। একজোড়া স্টিলের রোলার কোস্টার। এই যমজ কোস্টারটি অ্যালপাইনের তৃণভূমির আদলে তৈরি জায়গাতে বানানো। কেন প্রিয় এই প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘যখন ছোট ছিলাম তখন থেকে এর প্রতি আমার আকর্ষণ।’
২০১৯ সালে “স্টার ওয়ারস : গ্যালাক্সি’স এজ” নামের একটি কমপ্লেক্স, যেটি ডিজনিল্যান্ডের অন্যতম আকর্ষণ, সেখানে কয়েকটি ভিন্ন, ভিন্ন ধরনের রাইড আছে। আরো আগ্রহের নানা বিষয় আছে। যেকোনো ডিজনিল্যান্ডপ্রেমী জানেন যে, এখানকার আকর্ষণটি কেবল আকর্ষণ নয়, একটি আসলে একটি অভিজ্ঞতা অর্জন। এখানে কোনো রাইডে না চড়েই একটি দিন কাটিয়ে দিতে পারবেন এবং যেকোনো মানুষই পরিবেশটি উপভোগ করবেন। তার ভালো লাগতো কী, কীÑ‘এখানে একটি জাহাজ ঘাট আছে এবং বেড়াতে এলে আমি এখানে বসে বিশ্রাম নিতাম। আমার বসে থাকতে ভালো লাগতো। কখনো, কখনো আমি চলে যেতাম গ্যালাক্সি’স এজে এবং পর্দার পেছনের শব্দগুলো বসে, বসে শুনতাম। সেখানকার সঙ্গীত আমাকে খুব আগ্রহী করতো। আবার কখনো অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ডে উঠে পড়তাম। সেই গাছের বাড়িতে ঢুকে চারপাশের একটি সুন্দর দৃশ্য দেখতাম।’
তবে সমস্যা হলো এই, ডিজনিল্যান্ডে খাবারের দাম কম নয়। সহজও নয়। ফলে রেইটজকে পার্কের ‘টুমরোল্যান্ড’ বিভাগ থেকে পিৎজা পোর্ট রেস্তোরাঁ থেকে পেস্তা কিনে আসতে হতো ও নিয়ে ঢুকে পড়তেন তিনি পার্কে। এই মানুষটিকে উত্তেজনাপূর্ণ রাইডগুলো টানতো। তিনি বলেছেন, ‘কেবল এই জায়গাটি নিজে নয়, এখানে যারা কাজ করেন তারাও জাদুটি তৈরি করেন।’
বছরের পর বছর কেটে গেল ও তিনি ডিজনিল্যান্ডের একজন নিয়মিত মানুষে পরিণত হলেন। তিনি গল্পগুলো সংগ্রহ করতে লাগলেন ও ডিজনিল্যান্ডের পার্কগুলোর কর্মীদের কাছ থেকে নানা গোপন বিষয় জানতে শুরু করলেন। যেহেতু তাদের বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। তাকেও তারা নিজেদের একজন হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসলেন। জেফ রেইটজ বিশ্বরেকর্ড গড়ার দিন ডিজনিল্যান্ডের জন্য ছিল আনন্দের।
ডিজনির নিজস্ব কর্মী ড্যানি ডেকানার সঙ্গে একটি সেফলি তুলেছেন স্টার ওয়ারস : গ্যালাক্সি’স এজে। পার্কের একজন সেট পেইন্টার কর্মী তাকে তাদের বিখ্যাত লিটল ইস্টারের ডিমগুলোর বিষয়ে বলেছেন যে, ‘শিল্পীরা এগুলো নিয়ে আসলে মজা করতে চেয়েছিলেন। যেমনভাবে তারা তৈরি করেছেন ফ্রোন্টায়ারল্যান্ডের গোস্ট টাউনের কেটি বিন নিয়ে।’
২০১৩ সালে তিনি আবার যখন দেখলেন পার্কের পাশের একটি বড় গাছ আর নেই, তখন একজন কর্মী তাকে এর একটি বা দুটি গল্প শোনাবেন জানালেন। রেইটজ বলেছেন, “তিনি আমাকে বলেছেন যে, ‘আসল এই গাছটি খুব বুড়ো হয়ে গিয়েছিল। একেবারেই অসুস্থ গাছটিকে কেটে ফেলতে হয়েছিল। আর ওয়াল্ট ডিজনি যখন এই পার্কটি শুরু করলেন তখন এমন কিছু গাছ তিনিই রোপন করেছিলেন। বাকিগুলো অন্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে আলো হয়ে আছে’।”
ওএসএফ/ ডিএসএস