১৩৫তম দেশ ভ্রমণে উগান্ডায় আসমা আজমেরী
বাংলাদেশি পাসপোর্টে ১৩৫তম দেশের মাইলফলক উগান্ডা। গত ১৩ অক্টোবর ভোর রাত ১টা ৪৫ মিনিটে এসে কাম্পলায় পৌঁছেন। রাতে এসিয়াকা ভিলা নামে একটি গেস্ট হাউসে অবস্থান করেন বিশ্বপর্যটক কাজী আসমা আজমেরী। দেখা হয় বাংলাদেশি শোলো ট্র্যাভেলার গ্রুপের মেম্বার রাকিব আহাদ ও তার সহকর্মীর সঙ্গে।
বিশ্ব ভ্রমণের এ অসাধারণ জয়ে বাংলাদেশি। ট্রাভেলারদের পেয়ে অসম্ভব আনন্দিত এবং তারা শেয়ার করেন তাদের অনুভূতিগুলো। বিশ্ব ভ্রমণের সময় বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টে কী ধরনের হয়রানি হতে হয়েছে। এভাবেই নিজের বিশ্ব ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন কাজী আসমা আজমেরী।
বাংলাদেশি পাসপোর্ট এর ১৩৫টি দেশ। কখনো এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনের হয়রানি এবং কখনো কখনো বা ফ্লাইট টিকেট কেটেও যেতে পারিনি। হাজার গল্প ১৩৫টি দেশের ভিতরে রয়েছে এবং চৌদ্দশ শহরে আনাচে কানাচে গ্রাম আছে হাজারো গল্প রয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে ১৩ বছরে প্রতি দুই বছরে, চাকরি করে টাকা জমিয়ে ছয় মাসের জন্য বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়েছেন আজমেরী। তরুণ পরিবর্তনকারী (চেঞ্জ মেকার) কাজী আসমার বিশ্বজয়ের উদ্দেশে ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে থেকে বিশ্বজয়ের উদ্দেশে আফ্রিকায় পাড়ি জামান। এখন পর্যন্ত নতুন পাঁচটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। মরিশাস, রিইউনিয়ন, তানজানিয়া, কেনিয়া ও উগান্ডা। কখনো নীলসমুদ্র, ঐতিহ্যবাহী শহর ও পাহাড় পর্বত ক্লেমেন্টজারু, বনে জঙ্গলে, আদি গ্রামবাসীদের সঙ্গে ঘুমিয়েছেন কিংবা আধুনিক শহরে ভ্রমণ করেন।
১৩৫ নম্বর দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টে থাপ্পড় মারেন কেনিয়ান বর্ডারে ব্যুসিয়া শহরে। পূর্ব আফ্রিকার ভিসা যা কি না তিনটি দেশ--কেনিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডা--কাভার করে মাত্র ১১০ ডলারের মাল্টিপল তিস মাসের ভিসা। বর্ডার পার হয়ে উগান্ডা বর্ডারে শুধুমাত্র পাসপোর্টে প্রবেশ এসটেম লাগিয়ে দিয়েছে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে বর্ডারের কাজকর্ম শেষ হয়ে গিয়েছে ।
কেনিয়ার কিছু স্কুল কলেজ কিছু সেশন করে (মোটিভেটর স্পিকার হিসেবে বক্তৃতা দেন) এবং রোটারি ক্লাবের কিছু প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে এখানে দুই দিন থাকার পরে ১৩৫তম দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়ে পৌছানো হয়। উগান্ডার জিনজা শহরে নীল নদের উৎপত্তি তা দর্শন করেন। পরে ইনকুয়াটর দেখতে যান। ‘বর্তমানে কাবালে লেক আছি’। সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধ করেছে।
আজমেরী জানান, বাংলাদেশের থেকে অর্থনৈতিকভাবে অনেক দুর্বল উগান্ডা। দারিদ্র্যসীমার নিচে অধিকাংশ মানুষই একবেলা খেয়ে থাকে গ্রামে। সত্যি দেখলে খুবই খারাপ লাগে। এত দরিদ্র মানুষ আমি আগে জীবনে কখনো দেখিনি। অনেকটা কান্না পায় তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখে।
বিদ্যালয়ের ছোট বড় বাচ্চাগুলো অনেক মজা করে খেতে দেখে অনেক আনন্দই লাগে। জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ১৫ বছরের নিচে। মহিলা ক্ষেত খামারে কাজ করেন বাচ্চা কাধে নিয়ে, রাস্তায় কাদামাখা ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে দেখা যায়। সত্যিই উগান্ডা মানেই আসলেই জোকস করার একটি দেশ। আল্লাহ না করুক কারও যেন এ রকম অবস্থায় না পড়তে হয়,আজমেরী।
অনেকে প্রশ্ন করেন আজমেরী ভ্রমণের জন্য আর্থিক সহযোগিতা কোথা থেকে পান? তাদের কেই উদ্দেশ করে তিনি জানান, ৫ তারিখ থেকে আজকে পর্যন্ত এই পাঁচটি দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এ টাকা তার জমানো টাকা থেকে এবং অনলাইনের কাজ থেকে আসছে।
তবে টাকা থাকলেই যে ভ্রমণ করা যায় সেটা নয়, একজন নারী বিশ্ব ভ্রমণে বের হতে এত সহজেই পারেনি। তার পরিবার সমাজ সবকিছুর সমালোচনার ঊর্ধ্বে গিয়েই সব ওভারকাম করতে পেরেছেন।। এ ছাড়া, এখানে অনেক ঝামেলাও রয়েছে বিশেষ করে ভিসা পাওয়ার, যোগ করেন আজমেরী।
উনি একজন নারী। একজন নারী হিসেবে উনি বিশ্বজয় করে বিশ্বকে এটাই দেখিয়ে দিতে চায় যে নারীরা কোন অংশেই কম নয়। নারীরা চাইলে সবকিছুই পারে। আর বাংলাদেশের মতো একটি দেশকে উনি ১৩৫ টি দেশে পরিচিত করতে পেরেছে এটাই ওনার সার্থকতা। আশা রাখেন একদিন উনি বিশ্ব জয়ী নারী হবেন ইনশাআল্লাহ।।
আজমেরী এক্সাইটেড যে তিনি এ রকম ১৩৫টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। এই ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে মোটিভেটেড স্পিকার হিসেবে মরিশাসের দুটি স্কুল এবং কলেজ, তানজানিয়ার দুই স্কুল, কেনিয়ার দুটি, উগান্ডার কাম্পালা শহরের একটু পাশেই স্কুলে বিভিন্ন সেশনে, কাবালে শহরে একটি স্কুলে প্রায় ৩০০০ ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তার ভ্রমণের গল্প ও ছেলে-মেয়েদেরকে স্বপ্নবাজ হয়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করেন। এবং তিনি স্বপ্ন দেখেন পৃথিবীর সমস্ত তরুণ সম্প্রদায় পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগাবে তাদের নিজস্ব সমাজে।
একটি নারী হয়ে যদি পারেন তাহলে কেন তরুণ প্রজন্ম পারবে না এই উৎসাহ দিয়েই অনুপ্রাণিত করেন ওখানকার ছেলে-মেয়েদেরকে। ইচ্ছা আছে পৃথিবীর সমস্ত দেশে যাওয়ার এবং সেখানকার ছেলে-মেয়েদেরকে তার ভ্রমণের গল্প এবং সেই বাচ্চাদেরকে স্বপ্নবাজ হিসেবে গড়ে তোলা যা এক লক্ষ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার হয়েছে, তিনি বলেন।
এমএমএ/