ছবির মতো গারো পাহাড় আর বনভূমি
ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলা আর এ পারে বাংলাদেশের জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা। সীমান্তঘেঁষা বকশীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছবির মতো গারো পাহাড়ের সারি আর বনভূমি। গারো আদিবাসীদের পাহাড়ি গ্রাম, বনভূমি, পাহাড়-টিলা। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে অজস্র ছোট-বড় স্বচ্ছ ঝরনা ধারা, পাখির কলকাকলী আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ সব মিলিয়ে নিসর্গ সুন্দরের অপূর্ব এক বিশাল ক্যানভাস। প্রকৃতি, আলো-হাওয়া, সুন্দরের টানে যারা বেড়াতে ভালোবাসেন- তারা নির্দ্বিধায় চলে আসতে পারেন এখানে।
প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি গ্রামগুলো। বন, পাহাড়, পাথর, ঝরনা আর আদিবাসীদের নিজেদের মতো জীবনযাপন দেখতে আর নগর কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির কোলে ডুবে যেতে এবং সবুজ-সুন্দর আকণ্ঠ পান করতে এখানে আসতে পারেন। এই সুন্দরের টানে এখানে ছুটে আসতে পারেন একা, পরিবার নিয়ে অথবা দলবেঁধে পিকনিক করতে। আপাত নির্জন-নিভৃত এই অঞ্চলে এসে ভুলে যেতে পারেন শহরের কোলাহল আর নাগরিক যন্ত্রণা।
দর্শনীয় স্থান
এখানে হিংস্র কোনো প্রাণী নেই। তবে ধানী মৌসুমে সীমান্তের ওপারের গভীর পাহাড় থেকে নেমে আসতে পারে বন্য হাতির দল। এখানে আছে নানান জাতের অসংখ্য পাখ-পাখালি। জোছনা রাতে পাহাড়ে বসে অবগাহন করতে পারেন চরাচর ব্যাপী আলোকিত জ্যোৎস্না। পাহাড়ের খাঁজে-ভাঁজে অবস্থিত লাউচাপড়া, দিঘলাকোনা, বালুঝুড়ি, সাতানীপাড়া, পলাশতলা, মেঘাদল, শুকনাথপাড়া, গারোপাড়া, বালিজোড়া, সোমনাথপাড়া, বাবলাকোনা গ্রামের গারো, কোচ, হাজং আদিবাসী পরিবারের জীবনযাপনে মুগ্ধ হতে পারেন। এখানকার আদিবাসীরা বেশ সহজ-সরল ও বন্ধুসুলভ।
পাহাড়ে রাত কাটানোর পর ভোরে আপনাকে সুপ্রভাত জানাবে অসংখ্য পাখির কলতান। দুপুরে সবুজের উপরে ঢেউ খেলানো চিক চিক রোদ আপনাকে আকর্ষণ করবে। গারো পাহাড়ের ১৫০ ফুট উপরে নির্মিত ৬০ ফুট উঁচু টাওয়ারে উঠলেই এক লাফে চোখের সামনে চলে আসবে দিগন্ত বিস্তৃত সারি সারি সবুজ পাহাড়-টিলা।
চোখে পড়বে সীমান্তের ওপারের মেঘালয় রাজ্যের সুবিস্তৃত পাহাড় ছাড়াও তুরা জেলার পাহাড়ি ছোট্ট থানা শহর মহেন্দ মুগ্ধ করবেই। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে অজস্র ছোট-বড় স্বচ্ছ ঝরনা ধারা। পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে স্বচ্ছ লেক। এই পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে নানা জাতের পাখি। চোখে পড়বে কাঠ ঠোকরা, হলদে পাখি, কালিম পাখিসহ অসংখ্য পাখির মেলা। এখানে পড়ন্ত আলোর বিকালটা হয়ে ওঠে অসম্ভব মায়াবি। আর এখানকার পূর্ণিমা রাতের থই থই জোছনা আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে স্বপ্নলোকে।
যেভাবে যাবেন
জামালপুর সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে বকশীগঞ্জ উপজেলা। উপজেলা সদর থেকে পাকা রাস্তায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে এগোলেই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে প্রায় ১০ হাজার একর জায়গাজুড়ে বিশাল পাহাড়ি এলাকা। গারো পাহাড়। এখানেই লাউচাপড়া পিকনিক স্পট। এলাকাটি বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এলাকাটি জামালপুর জেলার অধীনে হলেও ঢাকা থেকে শেরপুর হয়ে যাওয়া অনেকটা সহজ। ঢাকা থেকে ডে-নাইট বাসে চলে আসতে পারেন শেরপুর। শেরপুর থেকে বাস, সিএনজি, অটো বা ভ্যানে শ্রীবর্দী কর্ণজোড়া হয়ে যাওয়া যায় লাউচাপড়া। শেরপুর থেকে লাউচাপড়ার দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। আবার ঢাকা থেকে ট্রেনে জামালপুর জেলা শহরে এসে জামালপুর থেকে সিএনজি বা অটোয় বকশীগঞ্জ হয়ে লাউচাপড়ায় যাওয়া যায়।
থাকা-খাওয়া
পর্যটকদের কথা ভেবে জামালপুর জেলা পরিষদ ১৯৯৬ সালে ২৬ একর জায়গাজুড়ে গারো পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করেছে পিকনিক স্পট 'ক্ষণিকা'। এখানে রাতে থাকার জন্য রয়েছে জেলা পরিষদের একটি ডাকবাংলো। এ ছাড়া ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল রিসোর্ট 'বনফুল রিসোর্ট'। রিসোর্টটির মালিকানায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুবুল হক চিশতী। বনফুল রিসোর্টে আপনি আধুনিক সব সুযোগ সুবিধাই পাবেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। এই রিসোর্টে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ছাড়াও রয়েছে সাধারণ কক্ষ। রিসোর্টে নিজস্ব বাবুর্চি দিয়ে রয়েছে রান্নার ব্যবস্থা। এই রিসোর্টে আপনি থাকতে পারবেন নিশ্চিন্তে নিরাপদে।
এসএন