কুয়াকাটায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
গত দুই বছর করোনার মহামরিতে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পর্যটকেরা আসেননি বললেই চলে। এ ছাড়া আগে সড়কপথে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হতেও পোহাতে হতো বেশ ভোগান্তি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এখন আর সেই অবস্থা নেই।
কুয়াকাটায় যেতে আগে অন্য যেসব নদীতে ফেরি পার হতে হতো, সেগুলোতেও সেতু হয়েছে। ফলে এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। গতকাল রবিবার (১০ জুলাই) থেকে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠতে শুরু করেছে এ সমুদ্রসৈকত। তবে গতকাল ঈদের দিন এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকায় তেমন বেশি পর্যটক দেখা যায়নি তবে আজ পর্যটক চোখে পড়ার মতো।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ বলেন, এক সময় ঢাকা থেকে ১২ থেকে ১৪টি ফেরি পার হয়ে কুয়াকাটায় আসতে হতো। এভাবে কুয়াকাটায় পৌঁছাতে ২০ থেকে ২৫ ঘণ্টা সময় লাগত। সর্বশেষ ভোগান্তি ছিল মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের ফেরি। এখন সেখানে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। এখন মাত্র ছয় ঘণ্টায় কুয়াকাটায় পৌঁছানো যায়। এতে এবার অন্য বছরগুলোর চেয়ে কুয়াকাটায় পর্যটকদের ভিড় বেশি হবে।
পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটার প্রতি পর্যটকদের কাছে আগ্রহ বেড়েছে জানিয়ে রুম্মান ইমতিয়াজ বলেন, এবার চট্টগাম, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর থেকেও পর্যটকেরা আসছেন।
কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলগুলোর অধিকাংশই আজ সোমবার (১১ জুলাই) থেকে এক সপ্তাহের আগাম বুকিং করছে। পর্যটকদের ভিড় দেখে খাবার হোটেল ও ঝিনুক মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও খুশি।
কুয়াকাটা সৈকতে শামুক-ঝিনুক বিক্রেতা সোহাগ হাওলাদার ঈদ উপলক্ষে তার দোকানে মালামাল এনে সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছর করোনায় পর্যটকদের আগমন বন্ধ ছিল। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছিল। এখন পর্যটকদের ভিড় বাড়ায় আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। এর অন্যতম কারণ হলো পদ্মা সেতু। এখন ঢাকাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ সহজেই কুয়াকাটায় চলে আসতে পারবে।’
সৈকতে কথা হয়, ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা সানাউল হক নামের এক পর্যটকের সঙ্গে। তিসি সপরিবার কুয়াকাটায় ছুটি কাটাতে এসেছেন। সানাউল হক বলেন, এর আগে কুয়াকাটায় আসতে ফেরিতে ভোগান্তি পোহাতে হতো। তবে এবার অল্প সময়ে বাসে করে কুয়াকাটায় পৌঁছেছি। খুব ভালো লাগছে।’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল-মোটেল আছে ৭৪টি। এর বাইরে আছে ৫৬টি হোটেল-মোটেল। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির হোটেল রয়েছে ১৫টি।
এসব হোটেল-মোটেলে সর্বোচ্চ ১৫ হাজারের মতো পর্যটক রাত যাপন করতে পারেন জানিয়ে মোতালেব শরীফ বলেন, ‘আজ সোমবার থেকে আগামী এক সপ্তাহ প্রায় সব হোটেল-মোটেলের ৮০ শতাংশ বুকিং রয়েছে। আগে শুধু শীতকালে কুয়াকাটায় বেশি পর্যটক বেড়াতে আসতেন, এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সারা বছরই কুয়াকাটায় পর্যটকেরা আসতে পারবেন। সেভাবেই আমরা সবকিছু ঢেলে সাজাচ্ছি।’
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের বালুচরে ছাতা-বেঞ্চ ভাড়া দিয়ে সংসার চালান নূর হোসেন। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু খুইল্যা দিছে। ঈদের ছুটিতে মানুষ ভালোই আইবে বইলা মনে হইতেছে। পর্যটকের সংখ্যা বেশি হইলে আমাগো লাভও বেশি হইবে। আগের ক্ষতিও আমরা কাডাইয়া উঠতে পারমু।’
ঈদের ছুটিতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশের কয়েকটি দল প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘সবার নিরাপত্তা দিতে আমরা তৎপর রয়েছি। সাগরের পানিতে গোসল করতে নেমে কেউ যাতে দুর্ঘটনার শিকার না হন, সেজন্য তাদের সতর্ক করতে পর্যটন পুলিশের আলাদা দল তৎপর থাকবে।’
এসএন