চলতে পথে বিমাবন্দর থেকে বাফুফে ভবন
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই সবার দৃষ্টি হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে এখানেই এসে নামবেন যে নারী সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন সাবিনা-কৃষ্ণা-সানজিদা-মনিকারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে একটা সময় মেয়েদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি এসে নামে বাংলার জমিনে। শুরু হয় মেযেদের বরন করে নেওয়ার পালা।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টুসহ আরও অনেকে।
ফুলে দিয়ে বরণ, মিষ্টিমুখ করানো, ছবি তুলা, সংবাদ সম্মেলন সবই হচ্ছে।, ঠিক তখন বাফুফে ভবনে অনেকটা নীরবে বসে বীর কন্যাদের জন্য অপেক্ষা করছেন বাফুফে ও সাফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন।
বেলা ৩টার দিকে তিনি হাস্যোজ্জ্বলভাবে আসেন প্রিয় আঙিনায়। আগের দিনই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন বিমাবন্দরে যাবেন না। এই না যাওয়ার কারণ তিনি জানিয়েছিলেন যাতে করে মেয়েদের দিকে সম্পূর্ন ফোকাস থাকে।
বিমান বন্দর থেকে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে ছাদখোলা বাস সাবিনাদের নিয়ে রওয়াান হয়। সেই বাস শুরু করে তাদের নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিন। যাত্রা পথে রাস্তার দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে জনতা হাত নেড়ে, করতালি দিয়ে, বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্লোগান তুলে, মোবাইলে ছবি ধারণ করে মেয়েদের সম্মান জানাতে থাকেন।
বিমাবন্দরে কাজ করতে থাকা শ্রমিকরাও তাদের কাজ ফেলে সবাই এক হয়ে সাবিনাদের বহনকারী বাস দেখে করতালি দিয়ে মুখরিত করে তুলেন নিজেদের আঙিনা। দুই পাশের দালান থেকেও বসবাসকারী, অফিস স্টাফরাও নিজেদের হাজির করেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে। রাস্তায় এমমও দেখা গেছে ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এসেছেন পিতা-মাতারা।
তারাও বাস দেখে হর্ষধ্বনি দিয়ে উঠেন। দূর থেকে ছবিও তুলে রাখেন। অনেকে আবার গাড়ি থামিয়ে বের হয়ে আসেন সাবিনাদের দেখতে। রাস্তার অপর প্রান্তে তখন দীর্ঘ যানজট। অন্য সময় এ জাতীয় যানজটে যাত্রীরা চরম বিরক্ত প্রকাশ করে থাকেন। আজ ছিল সেখানে ব্যতিক্রম।
সাবিনাদরে বহনকারী বাস দেখা মাত্রই সবাই জানালা দিয়ে মাথা বের করে অভিবাদন জানাতে থাকেন। মোবাইলে ছবিও তুলে রাখেন। তাদের মনোভাব এমন ছিল যে যানজটকে স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ, যানজট না হলে তারা এমন মুহূর্ত পেতেন না। গাড়ি এগুচ্ছিল ধীর গতিতে। এমনি করে বাফুফে ভবনে এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সূর্য ডুবে যায়। সন্ধ্যা ৭টার পর এসে সাবিনারা বাফুফে ভবনে এসে পৌঁছান। এটিই তাদরে বসতবাড়ি। এখানে তারা খেলেন, বসবাস করেন। বলা যায় ছুটিতে বাড়ি যাওয়া ছাড়া এই বাফুফে ভবনই তাদরে মূল ঠিকানা। বাফুফে ভবনে আসার পর কাজী সালাহউদ্দিন তাদের বরণ করে নেন। এ সময় বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীও উপস্থিত ছিলেন। মেয়েদের সঙ্গে করে আসেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলও।
বাফুফে ভবনে আসার পর উপরে উঠতে সাবিনাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখানেও ছিলে প্রচুর জনতার ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে কোনো রকমে তারা উপরে গিয়ে উঠেন। সাবিনাদের নিয়ে বসানো হয় বাফুফের সভা কক্ষে।
মেয়েরা ট্রফি নিয়ে আসনে সেই সভা কক্ষে। সেই ট্রফি স্পর্শ করে সালাহউদ্দিন আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। চোখে চলে আসে পানি। হাত দিয়ে মুছেন সেই পানি। তিনি এতটাই আনন্দিত আর উল্লাসিত হয়েছিলেন যে তার জন্য নির্ধারিত চেয়ারে তিনি বসে থাকতে পারেননি। অন্যরা যখন বসে তখন তিনি চেয়ার হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। দাঁড়ানো অবস্থায়ই তিনি খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলছিলেন। বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। সভা কক্ষের আনুষ্ঠানিকতা সেরে রাত ৯টার দিকে তিনি অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও কোচ গোলাম রব্বানি ছোটনকে নিয়ে যান সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। সেখানে তিনি কথা বলেন কোচ ও অধিনায়কের পর। এমনকি তারা চলে যাওয়ার পর।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এখন সময় এসেছে সবাই এক সঙ্গে কাজ করার। ফুটবলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আমাদের লক্ষ্য সামনের দিকে, এশিয়া পর্যায়ে।’
এমপি/এমএমএ/