বিজয়কে লিপুর অভিনন্দন
খেলাধুলার মাঝে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত অর্জনের সুযোগ ক্রিকেটে। ক্রিকেটের প্রতিটি ভাজে ভাজেই যেন ব্যক্তিগত অর্জনের হাতছানি। অভিষেকের প্রথম বলে চার-ছয় কিংবা শূন্য রানে আউট অথবা প্রথম বলে উইকেট কিংবা চার-ছয় হজম থেকে শুরু করে সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি, দ্রুত সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি, ইনিংসে ৫ উইকেট, ১০ উইকেট, ক্যারিয়ারে আবার এই সব অর্জন মোট কতবার হয়েছে তাও মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়। এক হাজার, দুই হাজার, পাঁচ হাজার, দশ হাজার রান কিংবা একশ, দুইশ, পাঁচশ উইকেট। এ সবের পাশাপাশি আছে দ্রুততম অর্জনও। আছে এক ওভারে ছয় বাউন্ডারি কিংবা ছক্কা অথবা পরপর তিন বলে উইকেট। আছে টানা ম্যান অব দ্যা ম্যাচ বা সিরিজ অথবা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ সেরা বা সিরিজ সেরা হওয়া।
দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ বা টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রান বা উইকেট নেওয়া। এক ক্যালেন্ডারে হাজার রান করাও মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এবার এমনিই একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেটে তিনি হাজার রান করার গৌরব অর্জন করেছেন। যা লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বিশ্বে প্রথম দৃষ্টান্ত। তার আগে সর্বোচ্চ রান ছিল অস্ট্রেলিয়ার টম মুডির। তিনি ১৯৯১ সালে সানডে ক্রিকেট লিগে ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে ১৫ ইনিংসে ৯১৭ রান করেছিলেন। টম মুডি পেছনে ফেলেছিলেন আগের বছর একই টুর্নামেন্টে করা সমারসেটের হয়ে জিমি কুকের ১৬ ইনিংসে করা ৯০২ রানকে।
এদিকে এনামুল হক বিজয় ঘরোয়া ক্রিকেটে হাজার রান করার পথে একে পেছনে ফেলেছেন সাইফ হাসানের ৮১৪, মোহাম্মদ নাঈমের ৮০৭, রকিবুল হাসানের ৭৮১ রানকে। এ সবই ছিল লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের পরিসংখ্যান। কিন্তু এনামুল হক বিজয় শুধু তাদেরই পেছনে ফেলেননি, ঘরোয়া ক্রিকেটের এই আসরে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক মৌসুমে হাজার রান করা গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর করা ১০০৮ রানকেও পেছনে ফেলেছেন। লিপু ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ১৯ ম্যাচের ১৮ ইনিংস খেলে এই রান করেছিলেন। একটি সেঞ্চুরি আর দশটি হাফ সেঞ্চুরি তিনি করেছিলেন। ১০টি ইনিংসে ছিলেন অপরাজিত। যে কারণে তার গড় ছিল একশরও উপরে। তার ১৮টি ইনিংস ছিল পিডব্লিউডি ৯৫*, অগ্রনী ব্যাংক ৪২*, রেলওয়ে ৬৪*, লালমাটিয়া ৩৩, সাধারণ বীমা ৫৭*, কলাবাগান ২৭, গুলশান ইয়ুথ ৭৪, ভিক্টোরিয়া ৫৩, সূর্যতরুন ৫৫*, ধানমন্ডি ৪৪, ইয়ং পেগাসাস ৫৭*, ওয়ান্ডারার্স,৭৯* ব্রাদার্স ৬৩*, আজাদ বয়েজ ৪০, রূপালী ব্যাংক ৮৭*, ওয়ারী ১০১*, বিমান ১৯, মোহামেডান ১৮। এ ছাড়া উদিতিরি বিপক্ষে একটি ম্যাচে তিনি ব্যাট করেননি। লিপুর এমন অর্জনে তার নেতৃত্বে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু এনামুল হক বিজয় তার ক্লাবকে চ্যাম্বিপয়ন করাতে পারেননি। এমনকি রানার্সআপও। আছে তৃতীয় স্থানে। ১৪টি ইনিংস তিনি একটিতে ছিলেন অপরাজিত। আছে তিনটি সেঞ্চুরি আর আটটি হাফ সেঞ্চুরি। তার ১৪টি ইনিংস ছিল প্রাইম ব্যাংক ৬০, রূপগঞ্জ টাইগার্স ১২৭, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৫৩, খেলাঘর ৩৩, শাইনপুকুর ১৮৪, ব্রাদার্স ১৫, মোহামেডান ৯৪, শেখ জামাল ৭৭, গাজী গ্রুপ ৮৫, আবাহনী ০, আবাহনী ৭৭, রূপগঞ্জ ৭৭, শেখ জামাল ৫২, রূপগঞ্জ টাইগার্স ১১২। গড় ৮০.১৫। তখন সেটা ছিল প্রথম বিভাহগ ক্রিকেট লিগ। গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর হাজার রানের মাইলফলক গড়ার পর দেশি ক্রিকেটার হিসেবে এনামুল হক বিজয় প্রায় ৩৫ বছল পর রেকর্ড ভাঙ্গলেন। উত্তরসুরির এমন অর্জনে দারুণ খুশি গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। জানিয়েছেন অভিনন্দন। কামনা করেছেন এই ফর্ম যাতে ধরে রাখেন।
তিনি বলেন, ‘গুড এচিভমেন্ট। ভালো ফর্মে আছে। দাপুটের সঙ্গে খেলে এই রান করেছে। নিকট অতিতে এমন দুর্দান্ত ফর্মে অন্য কারও মাঝে দেখা যায়নি। তার এই ফর্ম তাকে জাতীয় দলে ফেরার জন্য ফাইটিং করে তুলবে। এই ফর্ম ধরে রাখতে হবে। অভিনন্দন তাকে।’
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু এক সময় বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। সে সময় এনামুল হক বিজয় ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটার। খুব কাছ থেকে তাকে দেখেছেন। তার খুব প্রিয় ছিল বিজয়।
তিনি বলেন, আমি বোর্ডের দায়িত্বে থাকার সময় বিজয় ছিল অনুর্ধ্ব-১৯ দলে। আমার খুব টাচে ছিল। খুব প্রিয় ছিল। সে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।
লিপুকে বিজয় র্পেছনে ফেলার আগেই স্টিভ টিকোলো পেছনে ফেলেছিলেন। ২০০১ সালে মোহামেডানের হয়ে খেলতে আসা এই কেনিয়ান করেছিলেন ১২২২ রান। টিকোলোকে অতিক্রম করা হয়তো বিজয়ের পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ বিজয়ের বর্তমান রান ১০৪২। টিকোলোকে টপকাতে হলে তাকে করতে হবে আরও ১৮১ রান। ম্যাচ বাকি আছে মাত্র একটি। অবিশ্বস্যা ভালো একটি ইনিংস খেলতে পারলে হয়তো সম্ভব হবে। এই মৌসুমেই আবার বিজয়ের এ রকম একটি ইনিংস আছে।
শাইনপুকুরের বিপক্ষে তিনি করেছিলেন ১৮৪ রান। যদি সম্ভব হয়, তাহলে নিজেকে আরও চূড়ায় নিয়ে যাবেন বিজয়, আর সম্ভব না হলেও, প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে যা অর্জন করেছেন তার জন্য বাংলাদেশ তথা ক্রিকেট বিশ্ব তাকে মনে রাখবে আজীবন।
এমপি/এমএমএ/