দুবাইয়ে বেসরকারি ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে রুমানা-জাহানারা
ক্রিকেট বিশ্বে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ফ্রাঞ্চাইজি আসর। এই ফ্রাঞ্চাইজি আসরগুলো আয়োজন করে থাকে একেকটি দেশের ক্রিকেট বোর্ড। সেখনে সাধারণত নিজ নিজ দেশের ক্রিকেটারদের বাইরে অন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেটাররা খেলে থাকেন। টেস্ট খেলুড়ে দেশের বাইরে সহযোগী দেশের ক্রিকেটাররা কমই সুযোগ পেয়ে থাকেন। যে কয়দিন এই আসর চলে, সবাই বুঁদ হয়ে থাকেন খেলা নিয়ে। চার-ছক্কার বাহারি মার আর টানটান উত্তেজনায় পার হয় এক একটি দিন। থাকে রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচও।
মেয়েদের ফ্রাঞ্চাইজি আসর এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া শুরু করেছে। তবে এখনো জমজমাট হয়ে উঠতে পারেনি। এরই মাঝে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হংকংয়ের ফেয়ারব্রেক মেয়েদের টি-টোয়েন্টি ফ্রাঞ্চাইজি আসরের উদ্যোগ নিয়ে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। একেতো ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সেখানে আবার ৩৫টি দেশের ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ, যা ছেলেদের ক্রিকেটেও এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি। খেলা হবে মরুর বুকে দুবাইয়ে। রুমানা বার্মি আর্মি এবং জাহানারা ফ্যালকন দলে খেলবেন। দুই জনেকেই ইতিমধ্যে বিসিবি থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ৩০ এপ্রিল দুই ক্রিকেটার দুবাই যাবেন। ছয় দলের আসর শুরু হবে ১ মে। শেষ হবে ১৫ মে। মোট খেলা হবে ১৯টি।
এই আসরকে ইতিমধ্যে আইসিসি স্বীকৃতি দিয়েছে। যে কারণে আসরের প্রতিটি ম্যাচই আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি পাবে। মেয়েদেরে ক্রিকেটে এটি ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বড় আসর। এর আয়োজক হংকং। কিন্তু করোণার কারণে ভেন্যু পরিবর্তন করে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আইসিসি স্বীকৃতি দেওয়াতে পূর্ণ সদস্য দেশের অনেক নামী-দামী ক্রিকেটাররাও এই আসরে খেলছেন। পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি ক্রিকেট খেলুড়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই নারী ক্রিকেটাররা এই আসরে অংশ নিচ্ছেন। ৩৫ দেশের ৯০ জন ক্রিকেটার নাম লিখিয়েছেন এই আসরে। ভারতের হানপ্রিত কাউর, দিপ্তি শর্মা থেকে শুরু করে উইন্ডিজের দেন্দ্রা ডত্তিন, স্টেফানি টেলর, পাকিস্তানের সানা মির, ফতিমা সানা, বিসমা মাহরুফ, দক্ষিণ আফ্রিকার মারিজানে কপ, অস্ট্রেলিয়ার জর্জিয়া রেডমাইন, শ্রীলঙ্কার চামারি আত্তাপাত্তু যেমন খেলছেন, তেমনি ভুটানের আঞ্জু গৌরাং, ব্রাজিলের রবের্টা মরেট্টিও খেলছেন। ৯০ জন ক্রিকেটারের মাঝে ৪০ জন পূর্ণ সদস্য দেশের। বাকি ৫০ জন সহযোগী দেশের। ক্রিকেটারদের কোনো নিলাম হবে না। আয়োজকরাই বিভিন্ন দলে ভাগ করে দেবেন।
ফেয়ারব্রেকের এটি দ্বিতীয় আয়োজন। প্রথমবার তারা করেছিল ছোট পরিসরে হংকংয়ে ২০১৮ সালে। দ্বিতীয় আসর তারা বড় পরিসরে কর্রা উদ্যোগ নেয়। কিন্তু করোনার কারণে হংকং সরকারের নানা বিধি নিষেধের কারণে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভেন্যু পরিবর্তন করে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়।
ফেয়ারব্রেক মূলত বিশ্বে মেয়েদের সমঅধিকার নিয়ে কাজ করে থাকে। বড় পরিসরে দ্বিতীয় আসর আয়োজন করতে গিয়ে তারা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে শুরুতে কোনো রকমের সহযোগিতা পায়নি। ছেলেদের মতো মেয়েদেরও অনাপত্তি পত্র দিতে নারাজ ছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। পরে তারা কয়েকজন ক্রিকেটারকে ছাড়পত্র দিয়েছে। ভারতীয়দের ছাড়পত্র পাওয়াতে আসরের জৌলুষ অনেক বেড়ে গেছে। কারণ ক্রিকেট বিশ্বে ভারত এখন মহা শক্তিশালী দেশ ও বাজার। বেসরকারি উদ্যোগ হওয়াতে বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটারের ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে বিসিবিকেও শুরুতে ভাবতে হয়েছে; কিন্তু আইসিসি স্বীকৃতি দেয়াতে রুমানা ও জাহানারার ছাড়পত্র বিসিবি দিয়ে দেয়।
জাহানারাকে এই আসরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল গত বছর বাংলাদেশ দল জিম্বাবুয়ে সফরের সময়। সব কিছু জানার পর তিনি খেলার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। কারণ এটি শুধু একটি খেলা না, মেয়েদের অধিকারের বিষয়টিও জড়িত। কিন্তু প্রস্তাব প্ওায়ার পর তিনি দিধায় ছিলেন বিসিবির অনাপত্তি পত্র পাবেন কি না? তার শঙ্কার কারণ ছিল আসরটির প্রাইভেটলি করা হচ্ছে। অনাপত্তি পত্র পাওয়ার পর তিনি যারপর নাই খুশি হয়েছেন।
ঢাকাপ্রকাশকে জাহানারা বলেন, ‘অসাধারণ এক অনুভুতি। বলে বুঝাতে পারব না। আমরা তো এমনিতেই ক্রিকেট খেলি। কিন্তু এই সংগঠন বিশ্বে মেয়েদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে। তাই এরকম একটি আসরে খেলতে পারার অনুভুতিই আলাদা।’
জাহানারা গতবার আইপিএলে খেলেছেন ভেলোসিটির হয়ে। আসর বসেছিল দুবাইতে; কিন্তু করোনার কারণে দর্শক বিহীন মাঠে খেলতে হয়েছিল। তাই আলাাদ কোনো উত্তেজনা অনুভব করেননি। এই আসর হবে দর্শকেদের উপস্থিতিতে। দর্শকদের উপস্থিতিতে খেলার উত্তেজনাই আলাদা।
জাহানারা বলেন, ‘বেসরকারি উদ্যোগে এ রকম একটি আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। এই আসরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানে ৩৫টি দেশের ক্রিকেটাররা খেলবেন। আইপিএলে কিন্তু এতো দেশের ক্রিকেটাররা খেলেননি। মাঠে দর্শক থাকবেন। এখানে যেমন তারকা ক্রিকেটাররা খেলবেন, তেমনি অনেক অখ্যাত ক্রিকেটাররাও খেলবেন। পুরানো অনেকের সঙ্গে দেখা হবে। নতুনদের সঙ্গে পরিচয় হবে। আমি যেমন অন্যদের কাছ থেকে শিখতে পারব, তেমনি আমিও অন্যদের হেল্প করতে পারব। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যাতে ভালো করতে পারি।’
জাতীয় দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদের বিদেশে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। তিনি খেলেছিলেন হার্বার হ্যারিকেনে। ফেয়ারব্রেক ফ্রাঞ্চাইজি আসরে খেলার সুযোগ পেয়ে তিনিও পুলকিত। ঢাকাপ্রকাশকে তিনি বলেন, ‘ডিফারেন্ট অনুভূতি। প্রথম খেলতে যাচ্ছি। পরিচিত-অপিরিচিত অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ হবে। অনেক কিছুই শেয়ার করা যাবে। খেলার পাশাপাশি এখানে আমাদের অধিকারের বিষয়টিও আছে। প্রাইভেটলি যে এ রকম বড় একটি টুর্নামেন্ট করা সম্ভব ফ্রেয়ারব্রেক সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমি এক্সাইটেড। সবার কাছে দোয়া চাই, আমি যেন ভালো খেলতে পারি।’
এমপি/এসএ/