মাঠ আর জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া এক সৈনিক মোশাররফ রুবেল
জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। মাত্র ৪০ বছরেই নিভে গেছে তার জীবন প্রদীপ। মরনঘাতি ব্রেইন টিউমারের সঙ্গে লড়াই করে আর পেরে উঠেনি। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ার পর দীর্ঘূ লড়াইয়ের পর আজ বিকালে হার মানেন রাজধানীর একটি হাসপাতালে।
জীবন যুদ্ধে যেমন মোশাররফ হোসেন রুবেল হেরে গেছেন, তেমনি যেন তিনি গিয়েছিলেন ২২ গজের ময়দানেও। তার এই হার মানা ছিল জাতীয় দলে। কোনো টেস্ট কিংবা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ তিনি পাননি। শুধুমাত্র ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন। তাও তিন দফায় মাত্র ৫টি। ব্যস। সেখানই থেমে গেছে তার আর্ন্তজাতকি ক্যারিয়ার। উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র ৪টি। যার ৩টিই ছিল আবার এক ম্যাচে।
রুবেলর আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ২০০৮ সালে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সিরিজের তিন ম্যাচই খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র ১টি। ফলে পরেরবার আর তাকে বিবেচনা করেননি নির্বাচকরা। দ্বিতীয়বার তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে। কিন্তু কোনো ম্যাচ না খেলেই বাদ পড়েছিলেন। এরপর আবার তার সামনে সুযোগ এসেছিল ২০১৬ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে।
এবার সেরা একাদশে সুযোগ পান। সময়ের হিসেবে জাতীয় দলের জার্সি পরে আবার মাঠে নামনে ৮ বছর পর। এবার তিনি নিজেকে মেলে ধরেন। উইকেট নেন ৩টি। যা দলের জয়ে রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। কিন্তু পরের ম্যাচে তিনি আবার কোনো উইকেট পাননি। ফলে বাদ পড়েন আবার। এরপর তার আর সুযোগ পাওয়া হয়ে উঠেনি।
বাঁহাতি এই স্পিনার জাতীয় দলে আর সুযোগ না পেরেও ঘরোয়া ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটেই নিয়মিত খেলেছেন। তিনি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন ১১২টি। উইকেট নিয়েছিলেন ৩৯২টি। ৫ উেইকেট নিয়েছিলেন ১৯ বার। ম্যাচে ১০ উইকেট ছিল ৩ বার। ব্যাট হাতেও তিনি বেশ সফল ছিলেন। সেঞ্চুরি ২টি ও হাফ সেঞ্চুরি ১৬টিসহ রান করেছিলেন ৩৩০৫ রান। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলেছিলেন ১০৪টি। ১২০ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি রান করেছিলেন ১৭৯২। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সংখ্যা ৫৬টি। উইকটে ৬০টি। আর রান করেছিলেন ৬২।
মোশাররফ হোসের রুবেল প্রথম মাঠে নেমেছিলেন ২০০১-০২ মৌসুমে আর শেষ ম্যাচ খেলেন ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে তিনি ১টি উইকেটও নিয়েছিলেন। এরপর তার লড়াই শুরু হয়েছিল ব্রেইন টিউমারের সঙ্গে। টিউমার ধরার পড়ার পর সে বছরেরই মার্চ মাসে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথে তার সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল।
পরে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। ২০২০ সালের নভেম্বরের দিকে তিনি মাঠে নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু তার আর সম্ভব হয়নি। আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরের বছর জানুয়ারিতে তার আবার এমআরআই করানো হলে দেখা যায় টিউমার বেড়ে গেছে। সেই থেকে চলে আবার যুদ্ধ। যে যুদ্ধে তিনি আর জয়ী হতে পারেননি। তাকে বাঁচিয়ে রাখতে তার ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য বিসিবি থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংগঠক, জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অনেকেই সহায়তা করেছিলেন।কিন্তু কোনো কিছুই মোশাররফ হোসেন রুবেলকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি।
এমপি/এমএমএ/