ছন্দময় ম্যাচে জিতেও বাদ চেলসি
কেন ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা? কেন ফুটবলের জনপ্রিয়তার আশে-পাশে অন্য কোনো খেলা নেই। কেন বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় গোটা বিশ্ব ফুটবলের প্রেমে অন্ধ হয়ে যায়- তার একটা উদাহরণ যেন মঙ্গলবার রাতে রেখে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ ও চেলসির ম্যাচ। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় লেগের কোয়ার্টার ফাইনালে ফুটবলের সব উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ নিয়ে হাজির হয়েছিল। যেখানে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে চেলসি ১-৩ গোলে হারের পরও রিয়ালের মাঠে ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে সেমির পথে এক পা দিয়েই রেখেছিল। সেখানে শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়িয়ে একটি গোল পরিশোধ করে দুই লেগে মেলে খেলা ৪-৪ সমতা আনে রিয়াল। পরে অতিরিক্ত সময়ে আরেকটি গোল পরিশোধ করে সেমির টিকিট নিশ্চিত করে রিয়াল মাদ্রিদই। তখন দুই লেগ মিলে রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে ৫-৪ গোলে।
চ্যম্পিয়নস লিগে প্রত্যাবর্তনের গল্প অনেক আছে। মঙ্গলবার রাতে চেলসি একটুর জন্য নতুন করে আরেকটি প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে পারেনি। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে রিয়ালের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে ১-৩ গোলে হেরে চেলসি অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল। দ্বিতীয় লেগে রিয়ালের মাঠ বার্নাবুতে তাদের শুধু জয়ী হলেই হবে না, ৩ গোলের ব্যবধান হতে হবে। এমন একটি অসাধ্য সাধন মাঠে নেমে টুখেলের ফুটবলারদের ইস্পাত দৃঢ় মনোবল আর প্রাণবন্ত নৈপুণ্যের কাছে নিজেদের মাঠে রিয়াল অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছিল। ব্লুজদের আক্রমণের পর আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েন কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। প্রথম গোল পেতেও খুব বেশি সময় নেয়নি। ১৫ মিনিটে ভেরনার কাছ থেকে বল পেয়ে ম্যাসন মাউন্ট বক্সের ভেতর থেকে শট নিয়ে গোল করে সতীর্থদের মনোবল আরও চাঙা করে দেন। প্রথমার্ধে চেলসির ফুটবলারদের পোস্ট লক্ষ্য করে যেখানে শট ছিল ৭টি, সেখানে রিয়াল মাদ্রিদের শট ছিল ৩টি। তাও বিপজ্জনক ছিল না।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হলে চেলসির ফুটবলার আরও তেড়ে-ফুড়ে শুরু করেন। ৫১ মিনিটেই পেয়ে যায় দ্বিতীয় গোলের দেখা। কর্নার থেকে হেড করে গোলটি করেন রুদিগে। এ গোলের ফলে দুই লেগ মিলে দুই দলের স্কোর ৩-৩ সমতা হয়ে যায়। কিন্তু তখনো এগিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ। কারণ তারা চেলসির মাঠে ৩ গোল দিয়েছিল। যে কারণে চেলসির চাই আর একটি গোল। সেই কাঙ্ক্ষিত গোলের জন্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। ৬২ মিনিটে পেয়ে যায় আরাধ্য গোলের দেখা। কিন্তু ভিএআরে রেফারি গোলটি বাতিল করে দেন রেফারি। তাতে চেলসির ফুটবলারদের যেখানে হতাশ হওয়ার কথা, সেখানে তারা আরও বেশি করে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। কারণ গোল যে তাদের আরেকটি চাই-ই চাই। ৬৫ মিনিটে করিসম বেনজামার শট পোস্টে লেগে ফিরে আসলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচা চেলসির ফুটবলাররা যেন নতুন করে প্রাণ শক্তি ফিরে পান। যার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ৭৫ মিনিটে ভেরনার একক প্রচেষ্টায় গোল করে রিয়ালের মাঠকে স্তব্দ করে দেন। দুই লেগ মিলে চেলসি এগিয়ে ৪-৩ ব্যবধানে। চেলসির মাঠে যে খেলা খেলেছিল রিয়াল মাদ্রিদ, সেই খেলা যেন এবার চেলসি খেলছে রিয়ালের মাঠে। কিন্তু নিজেদের মাঠে এভাবে হেরে গিয়ে বাদ পড়তে নারাজ ছিলেন কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। শেষ চেষ্টা তারা একবার করে দেখতে চান। অন্তত একটি গোল করতে পারলেও শেষ রক্ষা হবে। খেলার ফলাফল সমান সমান হবে। ম্যাচে টিকে থাকা যাবে। সেই কাজটিই করেন রদ্রিগো। ৮০ মিনিটে লুকা মদরিচের কাছ থেকে বল পেয়ে ২ মিনিটে আগে বদলি হিসেবে মাঠে নাাম রদ্রিগো গোল করে রিয়ালের শিবিরে স্বস্তি এনে দেন। এরপর খেলা শেষ হলে স্কোর লাইন হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে মিলে ৪-৪ থাকায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। আর এখানেই চেলসির পেটে পেরেক ডুকিয়ে দেন করিম বেনজামা । যিনি চেলসির মাঠেও হ্যাটট্রিক করে ডুকিয়েছিলেন পেরেক। খেলার ৯৬ মিনিটে ভিনিসিউসের বাম দিক থেকে ভেসে আসা ক্রসে করিম বেনজামা হেড করে গোল করে বার্নাবু যেন উল্লাসে ফেটে পড়ে। এ গোল পরে আর পরিশোধ করতে না পারলে চেলসির মনে রাখার মতো একটি ম্যাচের করুণ পরিণত হয়। ৩-২ গোলে জেতা ম্যাচ তখন তাদের কাছে অসাড়।
এমপি/এসএন