মোস্তাফিজ তিন ওভারে ১২ এক ওভারে ১৪!
দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে মোস্তাফিজের এবারের আইপিএলের যাত্রাটা অম্ল মধুর হয়ে শুরু হয়েছে। নিজে ভালো করছেন; কিন্তু দল জিততে পারছে না। তিনি আসার পর দিল্লি দুটি ম্যাচ খেলেছে। দুটিতেই হেরেছে। দুটিই ছিল এবারের আসরের নতুন দল। একটি গুজরাট টাইটানস, অপরটি লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে। অথচ মোস্তাফিজ যোগ দেওয়ার পূর্বে দিল্লি একটি ম্যাচ খেলেছিল। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে চার উইকেটের জয় নিয়ে ছেড়েছিল মাঠ।
মোস্তাফিজ দলে যোগ দেওয়ার পর প্রথম ম্যাচ ছিল গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে। মোস্তাফিজ ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেও অন্য বোলারদের ব্যর্থতায় প্রতিপক্ষের রানের চাকা আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। ৬ উইকেটে তারা করেছিল ১৭১ রান। জবাব দিতে নেমে দিল্লি ৯ উইকেটে ১৫৭ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছিল। এখানে একা মোস্তাফিজের করার কিছুই ছিল না। দল হারলেও মোস্তাফিজের আগুন ঝরানো বোলিংয়ের প্রশংসা ছিল সর্বত্র।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) মোস্তাফিজদের প্রতিপক্ষ ছিল আরেক নতুন দল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। এ দিন মোস্তাফিজের দল টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ভাণ্ডারে বড় পুঁজি জমা করতে পারেনি। প্রতিপক্ষের আঁটোসাটো বোলিংয়ের কারণে মাত্র তিন উইকেট হারালেও রান জমা করতে পেরেছিল ১৪৯; কিন্তু এই অল্প রানের পুঁজি নিয়েও মোস্তাফিজের আঁটোসাটো বোলিংয়ে দিল্লি সহজে ছেড়ে কথা বলেনি। ১৮ ওভার পর্যন্ত ম্যাচে ছিল। এ সময় লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের প্রয়োজন ছিল ১৯ রানের। দিল্লির কাপ্তান রিশভ পন্থ বল তুলে দেন মোস্তাফিজের হাতে। কিন্তু এখানেই ছন্দ পতন ঘটে। আগের তিন ওভারে মোস্তাফিজ যেখানে মাত্র ১২ রান দিয়েছিলেন, সেখানে এই এক ওভারেই রান দেন ১৪। ফলে শেষ ওভারে লখনৌর প্রয়োজন পড়ে মাত্র ৫ রানের। এই রান তারা করে নেয় ২ বল হাতে রেখেই। মোস্তাফিজ এদিন ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। তার চেয়ে কম রান দিয়েছিলেন ললিত যাদব। তিনি ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছিলেন একটি।
এই ম্যাচে মোস্তাফিজের ২৪ বলের মাঝে আট বলেই ব্যাটসম্যানরা কোনো রান নিতে পারেননি। ওয়াইড বল ছিল দুটি। একটি মাত্র ছয় ছিল। আর কোনো বাউন্ডারি ছিল না। আগের ম্যাচে তার ৪ ওভারে একটি বাউন্ডারি ছিল।
মোস্তাফিজ এই ম্যাচে চার ওভার করেন তিন স্পেলে। প্রথমে এক ওভারে করে দুই স্পেল। এরপর দুই ওভারের তৃতীয় স্পেল। তার প্রথম ওভারে একটি ওয়াইডসহ রান আসে ৫। সব কয়টি ছিল সিঙ্গেলস। দ্বিতীয় স্পেল তিনি করেন ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে। এই ওভারে তিনি রান দেন মাত্র তিনটি। যার একটি ছিল আবার ওয়াইড। তৃতীয় স্পেল শুরু করেন ইনিংসের সতেরতম ওভারে। এ সময় লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৮ রানের। ওভার প্রতি সাত করে। মোস্তাফিজ তার ওভারে রান দেন দেন একটি করে চারটি। ফলে শেষ তিন ওভারে লখনৌর টার্গেট বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ওভার প্রতি আট করে ২৪ রানের। শার্দুল ঠাকুরের করা ওভার থেকে পাঁচ রান আসলে জয়ের প্রয়োজন পড়ে ১২ বলে ১৯ রানের। এরপর বল হাতে তুলে নেন মোস্তাফিজ। গুজরাটের বিপক্ষে করেছিলেন ইনিংসের শেষ ওভার। চার রান দিয়ে উইকেট নিয়েছিলেন দুইটি।
এবার ১৯ নম্বর ওভার। আগের তিন ওভারের বিচারে এই ওভার মোস্তাফিজ আঁটোসাটো করতে পারলে শেষ ওভারে গিয়ে টার্গেট আরও বেড়ে যাবে। প্রথম দুই বলে দুই রান দিয়ে মোস্তাফিজ ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্তু এরপর আর তা ধরতে রাখতে পারেননি। ব্যাটসম্যান ক্রুনাল পান্ডিয়া তৃতীয় বলকে আকাশে ভাসিয়ে ছয় মারার পর শেষ তিন বলে দুই রান করে আরো ছয় রান নিলে ওভারে মোস্তাফিজের রান দাঁড়ায় ১৪! প্রথম তিন ওভারে ১২, এক ওভারেই ১৪। ফলে শার্দুল ঠাকুরের করা শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৫ রান তুলে নিতে লখনৌকে আর কঠিন বাঁধার মুখে পড়তে হয়নি। যদিও প্রথম বলে উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় বলে কোনো রান না হওয়াতে বেশ জমে গিয়েছিল ম্যাচ; কিন্তু নতুন ব্যাটসম্যান বাদনি প্রথমে চার ও পরে ছয় মেরে কোনো নাটকীয়তা আর হতে দেননি। মোস্তাফিজদের পরের ম্যাচ ১০ এপ্রিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে।
এমপি/এসএ/