মাত্র ৫৫ মিনিটেই শেষ বাংলাদেশের স্বপ্ন!
তিন কাঠির খেলা ক্রিকেট এমনই। কখন এর গতিপথ কোন দিক বাঁক নেয় তার কোনো হদিস নেই। এই মেঘ এই রোদ’র মত মুহুর্তেই এর গতি পথ পরিবর্তন হতে পারে। যেমন হয়েছে ডারবান টেস্টে। পঞ্চম দিন ৫৫ মিনিটেই বাংলাদেশের ৭ উইকেট তুলে নিয়ে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ২২০ রানে ম্যাচ জিতে যাবে, তা কিন্তু ম্যাচের প্রথম দিন থেকে শুরু করে চতুর্থ দিন পর্যন্তও কেউ ধারনা করতে পারেননি। এমনকি প্রোটিয়ারাও। তারা ভাববেনই বা কি করে? চতুর্থ দিন যেখানে ১১ রানে ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশের। তারপরও তার উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ জয়ের বানী শুনিয়েছিলেন! তার এমন কথা শুনে প্রোটিয়ারাও হয়তো কিছুটা ভড়কে গিয়েছিল। আর হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ লক্ষ্য যে খুব বেশি ছিল না। বাংলাদেশকে জেতার জন্য ৭ উইকেটে করতে হতো ২৬৩ রান!
কিন্তু খালেদ মাহমুদের কথা ছিল শুধুই বলার জন্য বলা। দলের সবার মনোবল চাঙ্গা রাখা। কারণ বাস্ততবতা ছিল ভিন্ন। উইকেটে যেভাবে বল ঘুরছিল তাতে করে ব্যাটসম্যানদের জন্য টিকে থাকাই ছিল কঠিন এক পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় উতরে যেতে পারেননি মুমিনুল এন্ড কোম্পানি। লড়াই-ই করতে পারেনি। বিনা যুদ্ধে হার। ৫৫ মিনিটে ১৩ ওভারে ৪২ রান যোগ করতেই বাংলাদেশের ইনিংস শেষ। ৫৩ রানে অলআউট হয়ে হার মেনেছে ২২০ রানে।
ডারবানে এটি সর্বনিম্ন রানের ইনিংস। তবে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রানের ইনিংস নয়। বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রান উইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৩। ২০১৮ সালে অ্যান্টিগাতে এই রান করেছিল। বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রানের ইনিংস হয়নি অল্পের জন্য। ৩৩ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর মনে হয়েছিল বাংলাদেশ নিজেদের আগের রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বনিম্ন রানের নতুন রেকর্ড গড়বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই লজ্জ্বায় আর পড়তে হয়নি অষ্টম উইকেট জুটিতে নাজমুল ও তাসকিনের ১৭ রানের জুটির কল্যাণে। মাত্র ২ বলের জন্য বাংলাদেশ সবচেয়ে কম ওভারের ইনিংসও খেলেনি। উইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ইনিংসে খেলেছিল ১৮.৪ ওভার। এবার খেলেছে ১৯ ওভার। ডারবান টেস্ট জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা গেলো ১-০ ব্যবধানে। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে পোর্ট এলিজাবেথে ৮ এপ্রিল।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৬৯ রানে পিছিয়ে থাকার পর দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস যাতে খুব বড় না হয়, সে দিকে লক্ষ্য ছিল। এখানে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবেই সফল হয়েছিল স্বাগতিকদের ২০৪ রানে অলআউট করে। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসেই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছিল উইকেটে বল ঘুরছে। যে কারণে বাংলাদেশের কাপ্তান মুমিনুল হক এক প্রান্ত দিয়ে শুধু অফ স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজকে দিয়ে বোলিং করিয়েছেন। এ সময় দলে দ্বিতীয় স্পিনারের অভাব প্রকটভাবে ফুঠে উঠে। সে সঙ্গে শঙ্কাও। এই শঙ্কা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার সাইমন হার্মার ও কেশভ মহারাজ। এক মিরাজকে সামাল দিতেই যেখানে প্রোটিয়ারা হিমসিম খেয়েছে, সেখানে ওদের দুই স্পিনারকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা কিভাবে সামাল দেবেন? শেষ পর্যন্ত সেই শঙ্কায়ই ঠিক হয়েছে। পারা সম্ভব হয়নি দুই স্পিনারকে সামাল দেওয়া। এই দুই জনকেই দিয়ে কাপ্তান ডিন এলগার বাংলাদেশের ইনিংস শেষ করে দেন। আগের দিন দুই জনে মিলে ৬ ওভার করে ১১ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। মহারাজ ৭ রানে ২টি, হার্মার ৪ রানে ১টি উইকেট পেয়েছিলেন। আজ দুই জনে মিলে ১৩ ওভারে বাকি কাজ সেরে ফেলেন। মহারাজ করেন ৭, হার্মার করেন ৬ ওভার। মহারাজ ২৫ রানে ৫টি ও হার্মার ১৭ রানে ২টি উইকেট নেন। ইনিংসে তাদের বোলিং ফিগার ছিল মহারাজ ১০-০-৩৩-৭, হার্মার ৯-৩-২১-৩।
দক্ষিণ আফ্রিকা যে এভাবে মাত্র ৫৫ মিনিটেই ম্যাচকে নিজেদের করে নেবে, তা যেমন তাদের ভাবনায় ছিল না, তেমনি বাংলাদেশ দলও যে এভাবে অল্পতেই গুটিয়ে যাবে তাও তাদের ভাবনায় ছিল না। কিন্তু বল এতো প্রচন্ডভাবে টার্ন করছিল যে উইকেটে ব্যাটসম্যানদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে যেখানে শেষ করেছিল বাংলাদেশ দল, পঞ্চম দিন ঠিক যেন সেখান থেকেই শুরু করে। উইকেট থেকে গেছে কচু পাতার পানিই। ব্যাটসম্যানরা উইকেটে যাচ্ছেন, আর ফিরে আসছেন। ৪ জন্য ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হন।
শুরুটা মুশফিককে দিয়ে। দিনের পঞ্চম বলেই মহারাজ তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। রিভিউ নিয়েও বাঁচাতে পারেননি মুশফিক। মহারাজের পরের ওভারে নেই ইনফর্ম ব্যাটসম্যান লিটন দাস। ফ্লিঊশ বোল্ড আউট করে পঞ্চম শিকার তুলে নেন। দিনের প্রথম ৩ ওভারেই ৩ উইকেট নিয়ে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়ান মহারাজ। দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬ রানে ৬ উইকেট। তার উইকেট পাওয়া দেখে ভালো লাগেনি হার্মারের। এবার তিনিও এগিয়ে আসেন উইকেট প্রাপ্তিতে। মিরাজকে ফেরান শূন্য রানে। তখন মাত্র ১২ ওভার শেষ হয়েছে। তার মানে দিনের ৬ ওভারে নেই ৪ উইকেট। আউট হওয়া কোনো ব্যাটসম্যানই ২ অংকের রান করতে পারেননি। এ সময় তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত এক প্রান্ত আগলে রেখে নিজে দুই অংকের ঘরে যাওয়ার পাশাপাশি চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। তাসকিনকে নিয়ে অষ্টম উইকেট জুটিতে ১৭ রান যোগ করে বাংলাদেশকে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার লজ্জ্বা থেকে রক্ষা করেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। হার্মারের বলে ড্রাইভ করার চেষ্টা করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন। শেষ হয় তার ৬২ বলে ১টি করে চার ও ছয়ে সাজানো ২২ রানের ইনিংস। দলীয় ৫০ রানে নাজমুল আউট হওয়ার পর মহারাজ তাসকিন ও খালেদ আউট করে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ করে দেন ৫৩ রানে। তাসকিন ১ ছয়ে ১৭ বলে ১৪ রান করেন।
এমপি/এএস