বাংলাদেশের জয়ের আশা নিভু নিভু
সুখ স্থায়ী হল না বাংলাদেশ দলের। দক্ষিণ আফ্রিকাকে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২০৪ রানে অলআউট করার যে সুখ, তা খুব বেশি সময় স্থায়ী হতে পারেনি। স্থায়ীত্ব ছিল বলা যায় ড্রেসিং রুমে ফেরা পর্যন্ত। এরপর ব্যাট করতে নেমে উইকেটকে করে তুলা হয় কচু পাতার পানি। শুরু হয় ব্যাটসম্যানদের উইকেটে আসা-যাওয়া। তা এমনই যে কার আগে কে ফিরে আসবেন ড্রেসিং রুমে তার এক অলিখিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। যে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন ডারবানের বাতাসে ভেসে গেছে। দিচ্ছে সেখানে হারের উঁকি। চতুর্থ দিন শেষ করেছে ৩ উইকেট হারিয়ে ১১ রানে। ২৭৪ রানের (প্রথম ইনিংসে এগিয়ে ছিল ৬৯ রানে) জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে জন্য প্রয়োজন আরো ২৬৩ রানের। ব্যাট করতে নামার আগে ২৭৪ রান অতিক্রম যোগ্য মনে হলেও এখন তা দূর আকাশের চাঁদে পরিণত হয়েছে। আগামীকাল পঞ্চম দিন বাংলাদেশ কতক্ষন টিকতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়। ২৬৩ রান করে টেস্ট জিততে হলে ব্যাটসম্যানদের দিতে হবে অসম্ভব ধৈর্য্যের পরীক্ষা আর সামাল দিতে হবে হার্মার-মহারাজের ঘূর্ণি বলের ভেল্কি!
বোলারদের অসম্ভব দৃঢ়তায় দক্ষিণ আফ্রিকা চা বিরতির প্রায় এক ঘন্টা সময়ের মাঝে অলআউট হয়ে যায়। প্রথম সেশন যেখানে বাংলাদেশের বোলারদের কেটেছিল হতাশায়। উইকেট নিয়েছিল মাত্র ১টি। পরের দুই সেশন সেখানে নেমে আসে আলোর ঝর্নাধারা। দ্বিতীয় সেশনে ৪ উইকেট তুলে নেয়ার পর তৃতীয় সেশনে ১৩ ওভারে ৪৭ রানে পড়ে বাকি ৫ উইকেট। তৃতীয় সেশনে কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। অভিষিক্ত রিকেলটন একপ্রান্ত আগলে রেখে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন। এবাদত ও মিরাজ ৩টি করে এবং তাসকিন ২টি উইকেট নেন। ২টি ছিল বোনাস রানআউট। এর আগে প্রথম সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা করেছিল এরউইয়ের উইকেট হারিয়ে ২৯ ওভারের ৯৯। দ্বিতীয় সেশনে ৪ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ২৮ ওভারে মাত্র ৫২ রান। এ সময় আউট হয়েছিলেন কাপ্তান এলগার ৬৪, পিটারসন ৩৬, বাভুমা ৪, ভেরেইনে ৬ রানে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে বাংলাদেশের একমাত্র স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ৩ উইকেট পেলেও তার বল খেলতে ব্যাটসম্যানদের খুবই সমস্যা হয়েছিল। যে কারণে তাকে দিয়ে মুমিনুল ৩৫ ওভার বোলিং করান। যেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওভার ছিল এবাদতের মাত্র ১৩টি। পেসারদের বল খুবই সহজেই মোকাবেলা করছিলেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা। তখনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে সেরা একাদশে দ্বিতীয় স্পিনারের। সেই সঙ্গে শঙ্কার মেঘ দানা বেধেছিল প্রোটিয়াদের সেরা একাদশে দুই স্পিনার হার্মার ও মহারাজকে নিয়ে। উইকেটে স্পিন যেভাবে ধরেছে, তাতে করে এই দুইজনকে মোকাবেলা করে লক্ষ্য পাড়ি দেওয়া উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দেয়ার মতোই কঠিন হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে। পরে হয়েছেও তাই। মাত্র ৬ ওভার খেলা হয়েছে। দুই স্পিনার হার্মার ও মহারাজ ভাগাভাগি করে ৬ ওভার বোলিং করে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ধসিয়ে দেন ৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। শুরুটা করেন প্রথম ইনিংসের মত হার্মার। তার প্রথম ও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই তিনি সাদমানকে কোনো রান করার সুযোগ দিয়ে না দিয়েই আউট করেন পিটারসনের সহযোগিতায়। মহারাজও উইকেট পেতে দেরি করেননি। ২ উইকেটচ তুলে নেন একই ওভারে। প্রথম ইনিংসে তাদের বিপক্ষে বাঁধার প্রাচীর হয়ে উঠা মাহমুদুল হাসান জয়কে এবার আর সে সুযোগ দেননি। মাত্র ৪ রানে বোল্ড করেন তিনি। পরে কাপ্তান মুমিনুলকে আউট করেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। প্রথম ইনিংসে কোনো রান করতে না পারা মুমিনুল এবার করেন ২ রান। বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৮। উইকেট সংখ্যা ৪ হতে পারত যদি দক্ষিণ আফ্রিকা রিভিউ নিতো। সাদমানকে আউট করার পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেট কিপারের গ্লাভসে জমা পড়লে কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আর রিভিউ নেয়নি। পরে টিভি রিপ্লতে (আল্ট্রা এজ) দেখা যায় বল নাজমুলের ব্যাটের কানায় লেগেছিল। তখন রান ছিল ২। আলোর স্বল্পতার কারণে খেলা আগেই শেষ না হলে বাংলাদেশের ইনিংসের চিত্র আরো করুণ হয়ে উঠত?
ডারবানের ইতিহাস বলে চতুর্থ ইনিংসে জয়ের সংখ্যা ১১টি। হারও ১১টি। ড্র আছে ৬টি। বাংলাদেশের টার্গেটের চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ৩টি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৪০, আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ৩৩৬ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কা ৩০৪ রান তাড়া করে জিদেছিল। এশিয়ার ৩ দেশ ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা সবার জয় আছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এবার বাংলাদেশের পালা? যদি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে, তা’হলে জয়ী দলের তালিকায় বাংলাদেশের নাম যোগ হবে পঞ্চম দেশ হিসেবে। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ৭টি অস্ট্রেলিয়া ২টি এবং ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা ১টি করে টেস্ট জিতেছে।
এমপি/এএস