ইনজুরির শঙ্কায় নিজেকে দমিয়ে রাখবেন না তাসকিন
একসময় বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণ খুব বেশি শক্তিশালী ছিল না। দল খেলতেই নামত স্পিনারদের উপর ভরসা করে। কিন্তু সে দিন আর এখন নেই। দিন বদলেছে। বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণ এখন খুবই শক্তিশালী। দলকে জেতাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বলা যায় বিশ্বমানের বোলিং আক্রমণ।
এই আক্রমণের নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে বলা যায় তাসকিন আহমেদকে কেন্দ্র করে। তিনি বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের প্রাণভোমরা। কিন্তু ইনজুরি তাকে যথাযথভাবে ভূমিকা পালন করতে দেয় না। তার সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় জাতীয় দল। এই যেমন ইনজুরির কারণে তিনি খেলতে পারেননি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে একমাত্র টেস্ট। পরে যেতে পারেননি একই দলের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ডে। বলা যায়, টিম ম্যানেজমেন্ট তাসকিনকে নিয়ে কোনোরকম ঝুঁকি না নিতেই তাকে অনেকটা বিশ্রামে রাখে।
জাতীয় দলের হয়ে তাসকিন সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গত ৩১ মার্চ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে। এরপর ইনুজরির জন্য বোতলবন্দী হয়ে পড়েন। এখন আবার সুস্থ হয়ে মাঠে নেমে ঝরাচ্ছেন ঘাম। রবিবার থেকে শুরু করেছেন এই ফিরে আসার মিশন।
বাংলাদেশের এখন ওয়ানডে ম্যাচ খেলা মানেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। বিশ্বকাপের আগে খেলতে হবে এখনো তিন ফরম্যাটেই বেশ কিছু ম্যাচ। আশা করা হচ্ছে, ঘরের মাঠে আফগানিস্তানর বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে তাসকিন আবার ফিরবেন ২২ গজে। তার শুরুটা হতে পারে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে। কারণ আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শুরুই হবে টেস্ট দিয়ে। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে শতভাগ ফিট তাসকিনকে পেতে তাকে বিশ্রাম দিয়ে দিয়ে খেলানো হতে পারে। সেটা হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট করতেই পারে। কিন্তু তাসকিন নিজেকে দমিয়ে রাখবেন না। যখনই খেলবেন, নিজের শতভাগ উজাড় করে দিয়ে খেলবেন। ইনজুরির ভাবনা তখন মাথায়ই রাখবেন না।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) মিরপুরে সাংবাদিকদের এরকম এক প্রশ্নের জবাবে তাসকিন বলেন, ‘গা বাঁচিয়ে খেলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বল হাতে নিয়ে খেলতে নামলে এটা মাথায় থাকে না যে কীভাবে নিরাপদে খেলা যায়। আবার আমি তো ফাস্ট বোলার। দেশের হয়ে খেলাটা অনেক গর্বের একটা ব্যাপার। যখন খেলতে নামি, মাথায় এটা থাকে না যে সামনে বড় ইভেন্ট আছে না কী আছে। আল্লাহ যাতে সুস্থ রাখেন, এটাই সব সময় দোয়া করি।’
নিজের ফিটনেস নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে ফিটনেসের অবস্থা এখন ভালো। চারটা সেশন করলাম। ওয়ার্কলোড বাড়ছে। ফিটনেস সেশন, বোলিং সেশনগুলো ভালো যাচ্ছে। সামনে ওয়ার্কলোডের মাত্রা আরও বাড়তে থাকবে। এভাবে যেতে থাকলে সব ভালো হবে।’
তাসকিন প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৫ সালে। সেবার তিনি ৯ উইকেট নিয়ে দলের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন। কিন্তু এই ইনজুরির জন্যই তিনি ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি। এ নিয়ে তার আফসোস রয়েই গেছে। কিন্তু এই না খেলতে পারাটাই তাকে আরও শাণিত করে আজকের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘ইনজুরির কারণে দলের বাইরে থাকাটা কখনো আনন্দদায়ক নয়। ক্রিকেটার হিসেবে খারাপ লাগে। ২০১৯ বিশ্বকাপে যখন বাদ পড়েছিলাম, ওই মুহূর্তটা খুব দুঃখজনক ছিল। তবে এখন বুঝতে পারি, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।’
তাসকিন বলেন, ‘বিশ্বকাপের পর নিজের ওয়ার্ক এথিকস, প্রক্রিয়া কিছুটা বদলেছি। যা ক্রিকেটার হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার জন্য। এখন আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো প্রক্রিয়ায় আছি। একটা আত্মবিশ্বাস থাকে যে, আমি নিজের শতভাগ দিচ্ছি। তাই ভালো কিছু হবে আশা করছি।’
বিশ্বকাপে তাসকিনের উপরই ভরসা থাকবে বেশি। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা ম্যাচের আগেই প্রস্তুতি নিতে হয়। নতুন দিন, নতুন ম্যাচ, নতুন প্রস্তুতি। আমরা তো উপমহাদেশেই খেলি। ভারতের উইকেট তুলনামূলক বেশি ভালো হয় ব্যাটিংয়ের জন্য। এক দিক দিয়ে ভালো, ওখানে ভালো করতে পারলে আত্মবিশ্বাস আরও জন্মাবে। আর হারানোর ভয়টা কম রেখে যদি এগোতে পারি তবে আমাদের জন্যই ভালো।’
তাসকিন আরও বলেন, ‘এক-দুই দিন খারাপ যেতে পারে যেকোনো বোলার বা ক্রিকেটারের। তবে আমার বিশ্বাস, আমরা আমাদের সেরাটার সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন করতে পারলে ওই কন্ডিশনেও ভালো করা সম্ভব।’
এমপি/এসজি