ম্যাচ জেতার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন তামিম
বাংলাদেশের ২৭৪ রানের জবাব দিতে আয়ারল্যান্ড ছিল জয়ের পথেই। এক পর্যায়ে তাদের রান ছিল ৪১ ওভারে ৩ উইকেটে ২২৩ রান। জয়ের জন্য ৫৪ বলে ৭ উইকেটে প্রয়োজন ৫২ রানের। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকার। জয়টা বলা যায় হাতরে মুঠোয়। হারের প্রহর গুনছে বাংলাদেশ দল। সেখানে থেকে নাজমুল হোসেন শান্তর ম্যাচের মোড় ঘুরানো মহা মূল্যবান হ্যারি টেক্টরের পর মোস্তাফিজের সফল প্রত্যাবর্তনে বদলে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট। শান্তর উইকেটের পর মোস্তাফিজ টানা ৩ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ বাংলাদেশের দিকে নিয়ে আসেন। ১৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আইরিশরা ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়। পরে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে ৫ রানে। সেই সঙ্গে সিরিজও নিজেদের করে নেয় ২-০ ব্যবধানে।
কিন্তু এই ম্যাচ যে বাংলাদেশ জিতবে সে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেন, ‘এই ম্যাচ আমরা জিতবো এ কথা যদি আমি বলি তাহলে মিথ্যা বলা হবে। একটা পর্যায়ে মনে হয়েছে এই ম্যাচ আমরা হারতে যাচ্ছি। কিন্তু ক্রিকেটেতো অনেক কিছুট ঘটে থাকে। এটা আমরা সবাই অনেক দেখেছি। ১/২টি উইকেটেই ম্যাচর দৃশ্য বদলে যেতে পারে। ফিজ দারুণ বোলিং করেছে। ক্যাম্ফায়ার ও টাকারকে আউট করার পর আমাদের বিশ্বাস ফিরে আসে যে আমরা জিততে পারি।’
প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড। যাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতেই নামে জেতার জন্য ২০১০ সালের পর আর কখনো তাদের কাছে ম্যাচ হারেনি। সেই দলের বিপক্ষে পাওয়া সিরিজের শেষ জয়কে তামিম ইকবাল বলেছেন আবার স্পেশাল। এর ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। তামিম বলেন, ‘এই জয় আমার কাছে খুবই স্পেশাল। কারণ আগে আমরা দেখেছি রেজাল্ট উল্টো হয়। জেতা ম্যাচ আমরা হেরে যাই। এ রকম পরিস্থিতি ম্যাচ জেতার রেকর্ড খুবই কম। বিশেষ করে আমরা আবার যখন বোলিং করছি। এভাবে জয় দেখতে পাওয়া খুবই আনন্দ আর তৃপ্তির। বোলাররা এ রকম জয় থেকে আগামীর জন্য ভালো আত্মবিশ্বাস পাবে।’
প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড হলেও বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেও সেখান থেকে প্রাপ্তির অনেক কিছু দেখছেন তামিম ইকবাল। ৪৫ ওভারে ৩১৯ রান তাড়া করে ম্যাচ যেতার মাঝে, তেমনি শেষ ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতিতে হারা ম্যাচ জেতায়। তিনি বলেন, ‘এই সিরিজে আমরা খুব ভালো ক্রিকেট না খেললেও টাফ ক্রিকেট খেলেছি। প্রতিপক্ষ যেই হোক, ৪৫ ওভারে ৩১৯ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতা খুবই কঠিন কাজ ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে আমাদের ব্যাটিং ছিল এক কথায় অসাধারণ।’
তামিম ইকবাল নাজমুল হোসেন শান্তর ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। সিরিজ এক সেঞ্চুরি করে ৩ ম্যাচে ১৯৬ রান ও ১ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত হয়েছেন সিরিজ সেরা খেলোয়াড়। শান্তকে নিয়ে তামিম ইকবাল বলেন, ‘ সে গত ২/৩ টি সিরিজ থেকেই খুব ভালো খেলছে। রান করছে নিয়মিত। তিন নম্বরে ব্যাটিং করা এমন একটি স্থান, যেখানে দলের প্রয়োজনে লম্বা সময় ব্যাটিং করতে হয়। এখানে আমরা কাউকে পাইনি। এখন মনে হচ্ছে আমরা এখানে তাকে পেয়েছি। সে নিজের স্থান পাকা করেছে। শান্ত শুধু রানই করছে না, ফিল্ডিং করার সময়ও সে নিজের সেরাটা দিয়ে থাকে। সে একজন গ্রেপ টিমম্যান। আমি তার জন্য খুবই খুশি।
তামিমের প্রশংসা ঝরেছে হাসান মাহমুদকে নিয়েও। শেষ ওভারে আইরিশদের প্রয়োজন ছিল ১০ রানের। মার্ক অ্যাডায়ার মৃত্যুঞ্জয়ের করা আগের ওভার থেকে ১৪ রান নিয়ে ম্যাচকে জমিয়ে তুলেন। শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন পড়ে ১০ রানের। তামিম বল তুলে দেন হাসানের হাতে, বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করে হাসান মাত্র ৪ রান দিয়ে তুলে নেন ২ উইকেট। হাসানকে নিয়ে তামিম বলেন, ‘সে (হাসান) যেভাবে বোলিং করছে, তাতে করে তাকে বিশ্বমানের বলা যায়। নতুন বলে সে খুবই দারুণ বল করে থাকে। ডেথ ওভারেও ভালো বোলিং করে থাকে। চাপের সময় সে খুবই ধীরস্থির থাকে। ম্যাচের কঠিন পরিস্থিতিতে এ রকম বোলিং করতে পারাটা দারুণ একটা ব্যাপার। এখান থেকে তার অনেক কিছুই শেখার আছে।’
এমপি/আরএ/