আয়ারল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
৩১৯ রান করে আয়ারল্যান্ড ম্যাচ জিততে পারেনি। বাংলাদেশ জিতেছিল ৩ উইকেটে। কিন্তু ২৭৪ রান করে বাংলাদেশে ঠিকই ম্যাচ জিতে নিয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচের মতো টানটান উত্তেজনায় শেষ হয়েছে তৃতীয় ম্যাচ। আয়ারল্যান্ডকে ৯ উইকেটে ২৬৯ রানে আটকে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ৫ রানে। সেই সঙ্গে ৩ ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে ২-০ ব্যবধানে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ২৪ ম্যাচে ১৫৫ পয়েন্ট নিয়ে তিনে থেকে খেলতে নামবে অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের সমান পয়েন্ট ইংল্যান্ডেরও। কিন্তু নেট রানে রেটে ইংল্যান্ড দুইয়ে। সবার উপরে থাকা নিউ জিল্যান্ডের পয়েন্ট ২৪ ম্যাচে ১৭৫।
আধুনিক জমানার ক্রিকেটে ২৭৪ রান করে ম্যাচ জেতা খুবই কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজটি বাংলাদেশ করতে পেরেছে বোলারদের তৎপরতায়। ম্যাচে কিন্তু বাংলাদেশ জেতার মত অবস্থানে ছিল না। এক পর্যায়ে আইরিশদের রান ছিল ৩ উইকেটে ২২৫। ওভার ছিল ৪১.৪। এ সময় মোস্তাফিজ জ্বলে উঠেন। টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি আইরিশদের ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া করে দেন। ম্যাচে ড্রাইভিং আসনে বসে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে তাদের পরে আর নামানো সম্ভব হয়নি আইরিশদের।
বাংলাদেশের ম্যাচের নায়ক মূলত আবার একাদশে ফেরা কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। তার কারণেই আইরিশদের তিন ব্যাটসম্যানের হাফ সেঞ্চুরি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ছিল তামিম ইকাবলের ৬৯। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান মুশফিকুর রহিমের ৪৫। সেখানে আইরিশদে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান ছিল ৪৫ টেক্টরের। তিন হাফ সেঞ্চুরিয়ানের রান ছিল পল স্টালিংয়ের ৬০, অ্যান্ডি বালবার্নির ৫৩ ও লরকান টাকারের ৫০। এ চার জন ছাড়া শেষের দিকে মার্ক অ্যাডায়ার ১০ বলে ২০ রান করেন। আর কোনও ব্যাটসম্যান দুই অংকের রান করতে পারেননি। ৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজ হন ম্যাচ সেরা।
সিরিজের সেরা হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
শুরুতেই উদ্বোধনী জুটিতে আঘাত হানেন আবার দলে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমান। শুরু থেকেই আঁটোসাঁটো বোলিং করছিলেন মোস্তাফ। তারই ফসল তিনি পান স্টিফেন ডোহেনিকে দ্বিতীয় স্লিপে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করে। ৪ রান করা ডোহেনি বল খেলেন ১৬টি। কিন্তু শুরুর এই বিপর্যয় কাটিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পল সটার্লিং ও অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি ২০.৫ ওভারে ১০৯ রান যোগ দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান। দুই জনেই আউট হন হাফ সেঞ্চুরি করে ২০ রানের ব্যবধানে।
বালবার্নিকে ফেরান এবাদত। ডিপ স্কয়ার লেগে তার ক্যাচ ধরেন রনি তালুকদার। ৭১ বলে ৬ চারে ১৪তম হাফ সেঞ্চুরি করে তিনি আউট হন তারপরই ৫৩ রানে। তার আগেই ৫৮ বলে ২৭তম হাফ সেঞ্চুরি করা ওপেনার পল স্টার্লিং অবশ্য আরও কিছুদূর গিয়ে থামেন ৬০ রানে। মিরাজের বলে কাট করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট থার্ডম্যাচে ক্যাচ উঠে গেলে দারুণভাবে তা তালুবন্দি করেন অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। তার ৭৩ বলের ইনিংসে ছিল ২টি ছক্কা ও ৪টি বাউন্ডারি।
এই জুটির বিদায়ের পর আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকার ১০.৪ ওভারে ৭৯ রান যোগ কর দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান। আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা একাদশে তিন জন স্পিনার ছিলেন। এই ম্যাচে ছিলেন সাকিব ও তাইজুল। পেসাররা রান চেক দিতে না পারলেও মিরাজ বেশ টাইট বোলিং করছিলেন। ফলে আরেকজন স্পিনারের অভাব প্রকটভাবে ফুটে উঠে। সেই অভাব দূর করতেই তামিম ইকাবল ৪২ নম্বার ওভারে শান্তর হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন। পঞ্চম বলেই তিনি সাফল্য পেয়েছিলেন। ২ ছক্কা ও ৩ চারে ৪৬ বলে ৪৫ রান করা হ্যারি টেক্টরকে লং অনে অনেকটা দৌড়ে লিটন দাস চমৎকারভাবে তা মুঠেবন্দি করেন লিটন।
টেক্টর আউট হওয়ার সময় আইরিশদের রান ছিল ৪১.৫ ওভারে ৪ উইকেটে ২২৫। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫৫ বলে ৬ উইকেটে ৫০ রানের। ম্যাচ পুরোটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে। ক্রমেই ভেসে উঠছে বাংলাদেশের হার। এ সময় জ্বলে উঠেন কার্টার মাস্টার মোস্তাফিজ। পরপর তিন ওভারে তিনি একে একে আউট হন কার্টিস ক্যাম্ফার (১), জর্জ ডকরেল (৩) ও হাফ সেঞ্চুরিয়ান লরকান টাকারকে (৫০)। মিডঅফে ক্যাম্ফায়ারের ক্যাচ ধরেন তামিম ইকবাল। ডকরেলের বুলেট গতির নিচু হয়ে আসা বল কভারে দাঁড়িয়ে অসাধারণ তৎপরতায় ক্যাচ ধরেন ইয়াসির আলী। ৫১ বলে ১ ছক্কাও ৪ চারে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করে ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠা লরকান টাকারকে বোল্ড করেন মোস্তাফিজ। এ সময় টাকার যে বোল্ড হয়েছেন তা বুঝতেই পারেননি মোস্তাফিজ। তিনি আম্পায়ারের দিকে ঘুরে আউটের জোরালো আবেদন করে যাচ্ছিলেন। পরে সতীর্থদের এগিয়ে আসাতে বুঝতে পারেন টকারের বোল্ড হওয়াটাকে। ৩ উইকেটে ২২৫ রান থেকে দলের রান দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৪২। মাত্র ১৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে আইরিশরা। জয় হয়ে উঠে দূর আকাশের চাঁদ। আর বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়।
অষ্টম উইকেটের পতন হওয়ার সময় আইরিশদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২ উইকেটে ২০ বলে ৩৫ রানের। ১০ বলে ২০ রানের ঝড়ো ব্যাটিং করে মার্ক অ্যাডায়ার একুট আশার সঞ্চার করেছিলেন। অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয়ের করা ৪৯ ওভারে অ্যাডায়ার ১৪ রান নিয়ে শেষ ওভারে ব্যবধান নামিয়ে আনেন ১০ রানে। কিন্তু হাসান মাহমুদের বুদ্ধিদিপ্ত শেষ ওভারে আইরিশরদের পক্ষে আর লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব হয়নি। ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪ রান সংগ্রহ করে ম্যাচ হারে ৫রানে। মোস্তাফিজ ৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচ সেরা। হাসান মাহমুদও ২ উইকেট নিতে খরচ করেন ৪৪ রান। এ ছাড়া ১টি করে নেন এবাদত, মিরাজ ও নাজমুল।
এমপি/এএস