শিরোপার বিজয় কেতন আবাহনীর
দুই দল একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও আবাহনীর পয়েন্ট সমান ২৬ করে। লিগে সাধারণত ফাইনাল খেলা থাকে না। কিন্তু দুই দলের পয়েন্ট সমান আর লিগের শেষ খেলা হওয়াতে অলিখিত ফাইনাল হয়ে উঠেছিল। একমাত্র বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে, তবেই বাইলজের দ্বারস্থ হতে হতো। আবার একদিন রাখা হয়েছে রিজার্ভডে।
লিগের খেলায় শিরোপা নিষ্পত্তি যদি এমন সমীকরণ থাকে, তাহলে ম্যাচের গুরুত্ব বেড়ে যায় বহুলাংশে। অন্তত একটি জমজমাট ম্যাচ দেখার প্রত্যয় থাকে সবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে জমজমাট লড়াই আর দেখা যায়নি। আর এটি হয়েছে শিরোপা পুনরুদ্ধারে বুভুক্ষু হয়ে থাকা আবাহনীর খেলোয়াড়দের দৃঢ় অনমনীয়তার জন্য। শেখ জামালের করা ৭ উইকেটে ২৮২ রানকে তারা অবলীলায় অতিক্রম করে। ৪৯.২ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে আবাহনী সেই রান অতিক্রম করে ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে। এক মৌসুম পর আবাহনী শিরোপা পুনারুদ্ধার করলেও আসলে তা হবে ২০১৮-১৯ সালের পর। কারণ গতবার শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হলেও তার আগের দুইবার ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ মৌসুমে খেলা হয়নি কোভিডের কারণে।
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ২৮২ রান আবাহনী অবলীলায় অতিক্রম করার ভীত রচনা করে দেন দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ৭২ ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ ৬৮ রানের ইনিংস খেলে। পরে সেখানে বিজয়ের প্রলেপ এঁকে দেন আফিফ হোসেন ধ্রুব অপরাজিত ৬০ রানের ইনিংস খেলে।
লিগের দুই সফল জুটি বিজয় ও নাঈম গত কয়েকটি ম্যাচে আর সেভাবে রান পাচ্ছিলেন না। বিশেষ করে এনামুল হক বিজয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তার ব্যাট জ্বলে উঠে। সঙ্গে নাঈমেরও। দুই জনের ব্যাট থেকেই এসেছে হাফ সেঞ্চুরি। এনামুল ৭২ ও নাঈম ৬৮ রান করেন। দুই জনের উদ্বোধনী জুটিতে ২৬.২ ওভারে আসা ১৪৫ রানই আবাহনীর জয়ের ভীত গড়ে দেয়। ৪ রানের ব্যবধানে দুই জনেই ফিরে গেলেও সেটিকে চাপ মনে হতে দেননি। শফিকুলের ইনিংসের প্রথম বলই ছক্কা মেরে শুরু করা এনামুলকে আউট করেন আরিফ। নাঈম শিকার হন তাইবুরের। এনামুলের ৮১ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি করে চার ও ছক্ক। নাঈমের ৭৯ বলে ছিল ৩টি করে চার ও ছক্ক।
এই দুই ব্যাটসম্যান ৪ রানের ব্যবধানে আউট হওয়ার পর মাহমুদুল হাসান ৯ ও জাকের আলী ২১ রান করে ফিরে গেলেও সব সামলে নেন আফিফ হোসেন। শেষ পর্যন্ত ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জয়ী করে মাঠ ছাড়েন। মোসাদ্দেক ২২ বলে ১টি করে চার ও ছক্কা মেরে ২২ ও খুশদিল শাহ ৫ রান করে আউট হলেও আফিফ ছিলেন অবিচল। তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে তিনি ৪ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখেই দলকে শিরোপার স্বাদ এনে দেন। জয়সূচক রান আসে তানজিমের ব্যাট থেকে বাউন্ডারির মাধ্যমে। আফিফ ৫৩ বলে ২ ছক্কা ও বাউন্ডারিতে ৬০ ও তানজিম ৭ বলে ১টি করে চার ও ছক্কা মেরে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন। তাইবুর ৩৭ ও পারভেজ রাসুল ৫১ রানে নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে শেখ জামালের ইনিংস পেটমোটা হয়েছিল মূলত অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের অপরাজিত ৮৯ রানের সঙ্গে তাইবুর রহমানের ৫৩, পারভেজ রাসুলের ৪২, ফজলে রাব্বির ৪০ ও জিয়াউর রহমানের অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংসে ভর করে।
শেখ জামালের ইনিংসে যে এতো দূর যাবে,তা কিন্তু তাদের ইনিংসের শুরু দেখে বুঝা যায়নি। মাত্র ১৬ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। যেখানে ছিল লিগে দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রকারী দুই ওপেনার সাইফ হাসান (০) ও সৈকত আলীর (৮) উইকেটও । অপর উইকেটটি ছিল রবিউল ইসলামের (৫)।
এ সময় মনে হয়েছিল শেখ জামাল আর শিরোপা ধরে রাখার জন্য লড়াই করার মতো স্কোর গড়তে পারবে না। কিন্তু এরপরই ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান পরিবর্তন হতে থাকে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ফজলে রাব্বি ও তাইবুর ৮১ রানের জুটি গড়েন ২০.৩ ওভারে। ফজলে রাব্বি ৭০ বলে ২ চারে ৪০ রান করে তানজিম হাসান সাকিবের বলে নাঈম শেখের হাতে ধরা পড়েন।
ফজলে রাব্বি আউট হওয়ার পর তাইবুর ও নুরুল হাসান সোহান ৪২ রান যোগ করেন। তাইবুর ৮৫ বলে ১ ছক্কা ও ৩ চারে ৫৩ রান করে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বলে আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়লে ভাঙ্গে জুটি। এরপরই তাদের সেরা জুটি গড়ে উঠে সোহান ও পারবেঝ রাসুলের ব্যাটে ষষ্ট উইকেচ জুটিতে। দুই জনে মাত্র ১০.৩ ওভারে ৮৩ রান যোগ করেন। পারভেজ রাসুল ৩৭ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে ৪২ রান করে আউট হন তানজিমের বলে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের হাতে ধরা পড়ে।
শেষের দিকে সোহানের সঙ্গে জুটি গড়ে জিয়াউর রহমানও খেলেন মারুমুখি ইনিংস। তারা জুটিতে ৩.৩ ওভারে ৬০ রান যোগ করন। সোহান ৭০ বলে ৪ ছক্কা ও ৮ চারে ৮৯ ও জিয়াউর ১৪ বলে ৩ ছক্কা ও ১ চারে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। সোহান হাফ সেঞ্চুরি করেন ৫৬ বলে ১ ছক্কা ও ৫ চারে। শেষ ৫ ওভারে শেখ জামাল ৭৯ রান যোগ করে।
১৬ ম্যাচে আবাহনীর পয়েন্ট ২৮। হেরে গিয়ে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে এবার রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে শেখ জামালকে। এ ছাড়া ২০ পয়েন্ট নিয়ে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব তৃতীয়, ১৮ পয়েন্ট নিয়ে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ চতুর্থ, ১৭ পয়েন্ট নিয়ে মোহামেডান পঞ্চম ও ১৫ পয়েন্ট নিয়ে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ষষ্ঠ হয়েছে।
প্রথম বিভাগে নেমে গেলে অগ্রণী ব্যাংক ও ঢাকা লিওপার্ডস। দুই দলই এবার প্রথম বিভাগ থেকে প্রিমিয়ার বিভাগে উঠে এসেছিল।
এমপি/আরএ/