অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের সামনে ৩১৯ রানও টিকেনি
শাবাস মুশি। মার্ক অ্যাডায়ারের করা নো বল থেকে মুশফিকুর রহিম স্কুপ শট মেরে উইকেট কিপারের মাথার উপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে জয় সূচক রান করার পর ইংরেজিতে ধারাভাষ্য দিতে থাকা ধারাভাষ্যকারের কন্ঠ দিয়ে বের হয়ে আসে এ রকমই বাংলা শব্দ।
ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে রূদ্ধশ্বাসে ভরা উত্তেজনাকর হাই স্কোরিং ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ ৩ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেটে।
শেষ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫ রানের। আগের ওভারের শেষ বলে স্ট্রাইক ধরে রাখার জন্য মুশফিক ১ রান নেন। যে বল ছিল, চাইলেই তিনি একটু জোরে খেলে ২ রান নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তার আগের বলে তিনি জোর করে এক নিয়েছিলেন। লিটলের করা ৪৯ ওভারের পঞ্চম বল শরিফুল ব্যাটে লাগাতে পারেননি। ওভারের প্রথম বলে তাইজুল এলবিডব্লিউ হলে দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম বলে শরিফুল চার মারলেও পরের ২ বল ব্যাটেই লাগাতে পারেনি। ফলে ওভারের পঞ্চম ও শরিফুলের চতুর্থ বল উইকেট কিপারের কাছে যাওয়ার আগেই মুশফিক প্রান্ত বদল করে দৌড় দেন। শরিফুল নিজে দৌড় শুরু করেন একটু বিলম্বে। তবে উইকেট কিপারের থ্রো যথাযথ না হওয়াতে শরিফুল নির্বিঘ্নে ক্রিজে পৌঁছান।
তারপর লিটলের করা শেষ ওভারের প্রথম ২ বলে মুশফিক কোনও রান নেননি। ১ রান করে আসত অনায়েসে। কিন্তু তিনি শরিফুলকে ঝুঁকিতে পড়তে দেননি। তাই নিজেই স্ট্রাইক ধরে রাখেন। তৃতীয় বল ছিল ফুলটস। মুশফিক ছক্কা হাঁকাতে গিযেছিলেন। কিন্তু পারেননি। পরে টিভি রিপ্লে দেখে দেওয়া হয় নো বল। এবার আর উত্তেজনা বাড়াতে দেননি মুশফিক। উইকেট কিপারের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মেরে জয়োল্লাসে মেতে উঠেন।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর যেন উড়ছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ যেই হোক যেন ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠে। কোন বাঁধাই যেন তাদের সামনে পাহাড় হয়ে উঠতে পারে না। সব কিছু চুরমার করে দিয়ে জয়ের আপন ঠিকানা খোঁজে পাওয়াই যেন হাথুরুসিংহের বাংলাদেশের একমাত্র কাজ। তাইতো চেমসফোর্ডে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের করা ৬ উইকেটে ৩১৯ রানও বাংলাদেশের সামনে বাঁধার প্রাচীর হয়ে উঠতে পারেনি।
ম্যাচটি ছিল আবার ৪৫ ওভারের। দুরন্ত-দূর্বার বাংলাদেশ নাজমুল ইসলাম শান্তর প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির (১১৭) সঙ্গে তাওহিদ হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে (৬৮) বাংলাদেশ তাদের জয়ের নিবাস খুঁজে পায়।
আগ্রাসী ক্রিকেটে খেলা বাংলাদেশের এই জয়ে ছিল নতুন রেকর্ডও। এই নতুন রেকর্ড হলো আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করার। এরচেয়ে বেশি রান তাড়া করে বাংলাদেশের জয় আছে একটিই। ২০১৯ বিশ্বকাপে উইন্ডিজের ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে করা ৩২১ রান বাংলাদেশ অতিক্রম করেছিল ৪১.৩ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে। এ ছাড়া ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিউ জিল্যান্ডের নেলসনে স্কটল্যান্ডের ৮ উইকেটে করা ৩১৮ রান বাংলাদেশ জিতেছিল ৪৮.১ ওভারে ৪ উইকেটে ৩২২ রান করে। এই দুই ম্যাচের মাঝখানে অবস্থান এখন অবস্থান করছে এই জয়। সব মিলিয়ে তিনশোর্ধ রান তাড়া করে এটি ছিল বাংলাদেশের পঞ্চম জয়।
শেষ ওভারের যে নাটকীয়তা কিংবা মুশফিকুর রহিম নিজে স্ট্রাইক ধরে রেখে ম্যাচ জেতানোর চেষ্টা, তাকে কিন্তু সেই অবস্থান তৈরি করে দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। ১৭ ওভারের মাঝে বাংলাদেশ একে একে দলের সিনিয়র তিন ব্যাটসম্যান ও ভরসারস্থল অধিনায়ক তামিম ইকবাল (৭), লিটন দাস (২১) ও সাকিব আল হাসানের (২৬) উইকেট হারিয়ে বিপদেই ছিল। কারণ তখনও বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৮ ওভারে ২১৯ রানের। ওভার প্রতি রান ৭.৮২ করে।
অনেক লম্বা পথ। কিন্তু সেই লম্বা পথকে ছোট করে নিয়ে আসেন দুই তরুণ বিপিএল মাতানো নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। দুই জনে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ওভার প্রতি ৭.৭-৫ করে রান সংগ্র করে ১৭ ওভারে ১৩১ রান যোগ করেন। তাদের এই রানই ম্যাচকে আয়ারল্যান্ডের কব্জা থেকে বের করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। দুই জনেই মারমুখি ব্যাটিং কনে। তাওহিদ হৃদয় ৪৯ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে আউট হন ৫৮ বলে ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৬৮ রানে ডকরেলের বলে ক্যাম্ফায়ারের হাতে ধরা পড়ে। তিনি আউট হওয়ার আগেই ম্যাচ সেরা নাজমুলও তার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন ৮৯ বলে ২ ছক্কা ও ১১ চারে। তিনি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ৪৯ বলে ১ ছক্কা ও ৬ চারে।
তাওহিদ আউট হওয়ার পর নাজমুল-মুশফিক জুটি বড় হতে পারিনি। ১৭ বলে ২৫ রান যোগ হওয়ার নাজমুল ক্যাম্ফারের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন টেক্টরের হাতে। এরপর সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মুশফিক। মিরাজকে (১২ বলে ১৯) নিয়ে ২৯ রানের জুটি গড়ার পর তাইজুলকে (১৩ বলে ৯) নিয়ে ২৩ রান যোগ করে ম্যাচকে শেষ ওভারের নাটকীয়তা নিয়ে যান। আয়ারল্যান্ডের জর্জ ডকরেল ও কার্টিস ক্যাম্ফার ২টি করে উইকেট নেন।
এমপি/এএস