অলিখিত ফাইনালে মুখোমুখি শেখ জামাল-আবাহনী
লিগ ম্যাচে সাধারণত ফাইনাল খেলা হয় না। পয়েন্ট টেবিলে সবার থেকে এগিয়ে থাকা দলটিই চ্যাম্পিয়ন হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট ও আকর্ষণীয় প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি অলিখিত ফাইনালে পরিণত হয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও আবাহনী। যেহেতু অলিখিত ফাইনাল তাই এখানে আর কোনো সমীকরণ নেই। নেই বাইলজের কোনো হিসাব-নিকাশ। জয়-ই একমাত্র সমীকরণ! বাইলজ তখনই আসবে যদি বৃষ্টির কারণে খেলা পরিত্যক্ত হয়। অবশ্য রিজার্ভ ডে আছে পরের দিন। তাতেও ফয়সালা না হলে আসবে বাইলজ। এই বাইলজে আবার এগিয়ে শেখ জামাল। প্রথম লিগে তারা মুখোমুখি লড়াইয়ে জয়ী হয়েছিল।
শেখ জামাল ও আবাহনীর লড়াইটা এবারের লিগের শুরু থেকেই চলে আসছে। শুরুতে এই দুই দলের সঙ্গে আরও একাধিক দল ছিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা একে একে হারাধনের ছেলেদের মতো খসে পড়তে থাকে। ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠে দুই দলের আধিপত্য। প্রথম পর্ব শেষ করে দুই দল সমান ২০ পয়েন্ট করে নিয়ে। কিন্তু শেখ জামালের কাছে আবাহনী হেরে যাওয়ায় বাইলজ অনুযাযী শেখ জামালই শীর্ষে থাকে।
সুপার লিগ শুরু হলে প্রথম ম্যাচেই গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের কাছে শেখ জামাল হেরে যাওয়ায় আবাহনী শীর্ষে উঠে যায় নিজেদের ম্যাচ জিতে। সেই শীর্ষ স্থান তারা ধরে রেখেছিল সুপার লিগের তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত। চতুর্থ রাউন্ডে গিয়ে আবাহনী শীর্ষস্থান হারায় সেই গাজী গ্রুপের কাছে হেরে গিয়ে। এই রাউন্ডে আবার শেখ জামাল নিজেদের ম্যাচ জিতে আবাহনীর সমান পয়েন্ট অর্জন করে। দুই দলের পয়েন্ট হয় ২৬ করে। কিন্তু প্রথম পর্বে যেহেতু আবাহনী হেরেছিল শেখ জামালের কাছে। তাই বাইলজে আবার শেখ জামাল উঠে যায় শীর্ষে। তবে শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত অলিখিত ফাইনালে পয়েন্ট টেবিলের এক কিংবা দুইয়ে থাকার কোনো মূল্য নেই। চ্যাম্পিয়ন হতে হলে জিততে হবেই।
ব্যাট হাতে আবাহনীর দুই ইনফর্ম ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ৮৬৪ ও এনামুল হক বিজয় ৭৬২ রান করে শীর্ষ রান সংগ্রাহকের প্রথম দুটি স্থানে আছেন। পিছিয়ে নেই শেখ জামালের ব্যাটসম্যানরাও। তাদের ফজলে মাহমুদ রাব্বি ৬৩১ ও সাইফ হাসান ৬৩০ রান করে আছেন চার ও পাঁচে। তিনে আছেন ৬৩৬ রান করে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ভারতীয় ক্রিকেটার চেরাগ জানি।
দুই দলের এই চার ব্যাটসম্যান ছাড়াও শেখ জামালের অমিত হাসান ৪৯৬ রান করে দলের ভরসার প্রতীক হয়ে আছেন। আবাহনীর হয়ে এ আশা দেখাচ্ছেন আফিফ হোসেন ৪৯০ রান করে। এ ছাড়া শেখ জামালের হয়ে সৈকত আলী ৪৫৮ ও অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ৪২২ রান করে দলকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। এরকম রান সংগ্রাহক আবাহনীর ক্ষেত্রে আছেন তাদের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তিনি করেছেন ৩৭৩ রান।
ব্যাট হাতে শীর্ষ দুইটি স্থান যেমন আবাহনীর ব্যাটসম্যানদ্বয়ের, তেমনি বল হাতে শীর্ষ স্থান শেখ জামালের বোলার ভারতের পারভেজ রাসুলের। তিনি নিয়েছেন ৩১ উইকেট। এখানে আবাহনীর হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন তানভীর ইসলাম। তিনি নিয়েছেন ২২ উইকেট। শেখ জামালের উইকেটশিকারির তালিকায় আছেন আরিফ আহমেদ ২০টি, শফিকুল ইসলাম ১৬টি, তাইবুর রহমান ১১টি। আবাহনীল এই তালিকা সমৃদ্ধ করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১৮, তানজিম হাসান সাকিব ১৫, রকিবুল হাসান ১২ উইকেট নিয়ে। এই ম্যাচে শেখ জামাল মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর অভাব খুব বেশ অনুভব করবে। লিগে ১৫ উইকেট নেওয়া এই বোলার জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো সুযোগ পাওয়ায় বর্তমানে দলের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ডে আছেন।
প্রিমিয়ার লিগের শুরু থেকেই তিনটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগামীকাল শনিবার শেষ দিনও আছে তিনটি ম্যাচ। কিন্তু ফতুল্লায় প্রাইম ব্যাংক ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স এবং বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে মোহামেডান ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ম্যাচের দিকে খুব একটা নজর থাকবে না কারও।
এমপি/এসজি