বৃষ্টি বনাম বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড লড়াই!
শীত প্রধান দেশ ইংল্যান্ড। এখানকার আবহাওয়া সব সময় খেলার জন্য উপযুক্ত থাকে না। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলার জন্য। সাধারণত জুন মাস থেকেই ক্রিকেট মাঠে গড়ায়। এ সময় গরম থাকে প্রকৃতিতে। মে মাসে খেলা কদাচিৎ হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ যে কয়বার ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়েছে তা জুন-জুলাই মাসেই। কিন্তু জুন মাসে খেলা হওয়ার পরও বৃষ্টির উপদ্রব থেকে রক্ষা পায় না ক্রিকেট। কম-বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ তো বেশ ভালোভাবেই বৃষ্টি দ্ধারা লাঞ্চিত হয়েছিল। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সেমি ফাইনাল খেলেছিল তাও এই বৃষ্টির বদান্যতায়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিশ্চিত হারা ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যায়। সেই ম্যাচ থেকে পাওয়া পয়েন্ট নিয়ে পরে বাংলাদেশ চলে গিয়েছিল সেমিতে।
এবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মে মাসে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ দল বেশ ভালোভাবেই বৃষ্টির কবলে পড়েছে। এই বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য আয়াল্যান্ড নিজেদের দেশে সিরিজ আয়োজন না করে ইংল্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাতেও খুব একটা সুফল পায়নি আইরিশ ক্রিকেট বোর্ড। প্রথম ম্যাচটি চলে গিয়েছে বৃষ্টির পেটে। এর ফলে আইরিশরা হারিয়েছে সরাসরি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ। আজ শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচেও আছে বৃষ্টির চোখ রাঙানি। সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত আছে বৃষ্টির সম্ভাবনা। এর আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও বৃষ্টিতে মাঠেই গড়াতে পারেনি। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ দল ঠিকমত অনুশীলনও করতে পারেনি। আজ দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচকে সামনে রেখেও বাংলাদেশ দল বৃহস্পতিবার অনুশীলন করেছে বৃষ্টির মাঝেই।
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডকে এখন তাই পরস্পরে নিজেদের মাঝে লড়াই না করে বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। যে লড়াই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে জয় পেয়েছে বৃষ্টি। দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের শেষ পরিণতি কী হয় তার জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে?
খেলার শেষ পরিণতি কী হবে কিংবা খেলা হোক বা না হোক বাংলাদেশ দল কিন্তু নিজেদের রণ পরিকল্পনা করেই রেখেছে। ইংল্যান্ড আসার আগে বাংলাদেশ দল এই সিরিজকে নিজেদের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে নিয়েছিল।কিন্তু বিরূপ কন্ডিশনের কারণে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হিমাগারে রেখে দিয়েছেন। আপাতত পরিকল্পনা ম্যাচ জেতা। আজ দ্বিতীয় ম্যাচেও লক্ষ্য একই
বিশ্বকাপ হবে ভারতে। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনও ফায়দা হবে না মনে করেই হাথুরুসিংহে নিজের পূর্ব পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন। দ্বিতীয় ম্যাচেও অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই মাঠে নামার সম্ভাবনা বেশি।
প্রথম ম্যাচে প্রতিকুল কন্ডিশনে টস হেরে খেলতে নেমে বাংলাদেশ বাজে শুরুর পরও শেষ পর্যন্ত অলআউট না হয়ে ৯ উইকেটে ২৪৬ রান করেছিল। বর্তমান সময়ে এই রান মোটেই নিরাপদ না হলেও কন্ডিশন বিবেচনায় তা আবার বেশ পোক্ত ছিল। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আইরিশদের ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলররা। খেলা হয়েছিল ১৬.৩ ওভার।
প্রথম ম্যাচ শুরুর আগের দিন হাথুরুসিংহে বলেছিলেন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাবেন না, আগ্রাসী ক্রিকেটে খেলবেন। কিন্তু প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের সেই আগ্রাসী ব্যাটিং ছিল না। আগ্রাসী ব্যাটিং না করলেও উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ার পরও ব্যাটসম্যানরা উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। মুশফিক (৬১) নাজমুল ( ৪৪) ছাড়া আর কেই সেভাবেরান পাননি। তাওহিদ (২৭),মিরাজ(২৭), সাকিবের (২০) কাছ থেকে এসেছে ছোট ছোট ইনিংস।
বাংলাদেশ দল বর্তমানে খেলতে নামছে ৬ বোলার নিয়ে। ৩ পেসার আর ৩ স্পিনার। এই জায়গায় বেশ শক্তিশালী। কোনো কারণে একজন বোলার ভালো করতে না পারলে বিকল্প আছে । কিন্তু এতে করে ব্যাটসম্যান একজন বেশি খেলানোর সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। একাদশে দেখা যাচ্ছে ৭ ব্যাটসম্যান। কিন্তু এই ৭ জনের পর আবার যারা আসেন, তাদের মাঝে তাইজুল ছাড়া বাকি ৩ জন ব্যাট হাতে রান করতে পারেন না বললেই চলে।
প্রথম ম্যাচে ৩৭ ওভার পরই এই চারজনকে আসতে ক্রমান্বয়ে আসতে হয়েছে ব্যাটিং করতে। এ সময় ১৩.৩ ওভার খেলে রান এসেছিল ৫৯। লোয়ার অর্ডারে বোলারার যাতে করে কিছু রান করে দলে ভূমিকা রাখতে পারেন, সে জন্য বৃহস্পতিবার বৃষ্টির মাঝেও কোচ হাথুরুসিংহে এবাদত-মোস্তাফিজ-হাসান-মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে অনেকক্ষণ ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। কোচ হাথুরুর থিউরি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সবাইকে প্রস্তুতি থাকতে হবে।
প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের একটা পরীক্ষা হয়ে গেছে। ১১ জনই নেমেছেন ব্যাট করতে । কিন্তু বোলারদের পরীক্ষাটা আর হয়নি। ১৬.৩ ওভারের মাঝে তিন পেসার হাসান-এবাদত-শরিফুল মিলে করেছেন ১৪.৩ ওভার। বাকি ২ ওভার করেনে তাইজুল। সাকিব ও মিরাজ বলই হাতে তুলে নিতে পারেননি। বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় বোলারদের পরীক্ষা আজও না হতে পারে!
এমপি