কঠিন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৪৬
ছিল না আগ্রাসী ব্যাটিং। কন্ডিশন ছিল প্রতিকূল। জেতা হয়নি টস। যদিও ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল উইকেট শক্ত। রান হবে। কিন্তু টস না জিতেও বাংলাদেশ ব্যাটিং পায়। কিন্তু সেখানে রান করার পরিবর্তে বিরূপ পরিস্থতিতে পড়ে। যেখানে রান করা ছিল খুবই কঠিন। তারপরও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ৩৪তম জন্মদিনে ব্যক্তিগত ৪৪তম হাফ সেঞ্চুরিতে ৬১ রানের ইনিংসের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তর ৪৪ আর তাওহিদ হৃদয় ও মেহেদি হাসান মিরাজের ২৭ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ২৪৬ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির চোখ রাঙানি ছিল। আকাশও ছিল মেঘাচ্ছন্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি আর আসেনি। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দল বেঁধে চেমসফোর্ডে আসেন লাল-সবুজের হয়ে গলা ফাটাতে। কিছুদিন আগে ঘরের মাঠে এই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ আগ্রাসী ক্রিকেট খেলেছিল। যেখানে ছিল চার-ছক্কার বাহারি আয়োজন। আজ চেমসফোর্ডেও সেরকম দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটবে এমন প্রত্যাশা ছিল প্রবাসীদের। কিন্তু তারা সে রকম সুযোগ কম পেয়েছেন। কারণ গোটা ইনিংসে ছক্কা হয়েছে মাত্র ১টি। তাও শেষের দিকে শরিফুলের ব্যাট থেকে। বাউন্ডারির সংখ্যা ছিল ২৬টি। দলের সংগ্রহের ২৪৬ রানের ১১০ রান এসেছে চার-ছক্কা থেকে।
বৃষ্টির কারণে ঠিকমতো অনুশীলন করতে না পারার কারণে কন্ডিশনের সঙ্গেও খাপ খাইয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি দলের। যে কারণে কোনো রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় না গিয়ে জয়ের মানসিকতা থেকে সেরা একাদশই নামানো হয়। তারপরও শুরুর প্রতিকূলতা কাটিয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত অলআউট না হয়ে ৯ উইকেটে ২৪৬ রান সংগ্রহ করেছে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানিয়েছিলেন প্রথম ১০ ওভারে সুইং চলে যাওয়ার পর ব্যাটিং করা সহজ হবে। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ ভুগেছে ঠিকই। এসময় তারা দুই ওপেনারকেই হারায়। কিন্তু এরপর আর সেভাবে ভুগতে হয়নি। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা সেট হয়ে যাওয়ার পরও উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে এসেছেন। যে বিলিয়ে দেওয়ার মাঝে ভেসে উঠেছে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার মনমানসিকতা।
আইপিএলে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে ব্যাট হাতে ৪ রান ও পরে ২টি স্টাম্পিং মিস করার পর কলকাতা নাইট রাইডার্স পুরো হারের দায় লিটন দাসের উপর চাপিয়েছিল। পরে আর কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ দেয়নি তাকে। কিন্তু এরকম যন্ত্রণার দায়ভার লিটনকে হয়তো এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যে কারণে গোল্ডেন ডাক মারেন তিনি। বোলার ছিলেন গুজরাট টাইটানসের হয়ে আইপিএল খেলা জস লিটল। তার ইয়র্কারে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ফিরেন লিটন।
তামিমও বেশি সময় টিকতে পারেননি। চতুর্থ ওভারেই রিভিউ নিয়ে তাকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখিয়ে দেওয়া হয়। মার্ক অ্যাডায়ারের অফ স্টাম্প বরাবর বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু বল তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে লরেকাব টাকারের গ্লাভসে জমা পড়ে। কিন্তু তাদের আবেদন আম্পায়ার সাড়া না দিলে পরে তারা রিভিউ নেয়। সেখানে তামিম ইকবালের মৃত্যু ঘণ্টা বাজে ১৪ রানে। ১৯ বল খেলে ২টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন তিনি।
৪ ওভারের মাঝে ১৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন বেশ চাপে। এই চাপ সামলে নেওয়ার দায়িত্ব নেন তরুণ নাজমুল ও অভিজ্ঞ সাকিব। দুইজনে এখানে বেশ সফলও হন। জুটি খুব লম্বা হতে পারেনি। ৩৭ রান আসার পর সাকিব বলা যায় উইকেটই বিলিয়ে দিয়ে আসেন। দলের ক্রান্তিকালে উইকেটে গিয়ে তিনি আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করে। গ্রায়াম হিউমের বল উইকেট ছেড়ে বের হয়ে এসে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ২১ বল ৪ চারে ২০ রান করে। তখন সবে মাত্র বাংলাদেশ দল ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শেষ হয়েছে। দলের রানও ৫০ পার হয়েছে।
সাকিবের এই বিদায়ে বাংলাদেশ দল চাপ কাটিয়ে উঠার যে আলামত দিচ্ছিল, তা আবার হারিয়ে যায়। এমতাবস্থায় দলের হাল ধরেন দুই তরুণ নাজমুল ও তাওহিদ। দুইজনে দারুণ খেলে দলের রান শতরান পার করেন। জুটিতেও রান আসে ৫০। কিন্তু এরপরই ঘটে বিপর্যয়। দলের ফিফটি হলেও নাজমুল ছিলেন হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি। ৪৪ রানে ব্যাট করছিলেন। তখনই কার্টিস ক্যাম্ফায়ারের আলগা একটি বল খেলতে গিয়ে মার্ক অ্যাডায়ারের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। তার ৬৬ বলের ইনিংসে ছিল ৭ বাউন্ডারি।
নাজমুল হোসেন শান্ত বিদায় নেওয়ার দলীয় ২০ রান যোগ হওয়ার পর তাওহিদ হৃদয়ও বিদায় নেন ব্যক্তিগত ২৭ রানে। গ্রায়াম হিউমের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় প্রথম স্লিপের দিকে। লরকান টাকার ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে বল তালুবন্দী করেন। তাওহিদের ৩৪ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল ৪টি।
নাজমুল-তাওহিদের দ্রুত বিদায়ে বাংলাদেশ আবার চাপে পড়ে যায়। ইনিংসের অর্ধেক উইকেট নেই দলীয় ১২২ রানে। ওভারও প্রায় অর্ধেক ২৬.৩টি। লম্বা ব্যাটিং লাইন থাকায় এমন চাপেও বাংলাদেশ নুয়ে পড়েনি। যে কারণে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মুশফিক ও মেহেদি হাসান মিরাজের মাধ্যমে গড়ে উঠে ইনিংসের সেরা জুটি। ১১ ওভারে তারা যোগ করেন ৬৫ রান। প্রায় বলে বলে রান। দলের ক্রান্তিকালে এমন স্ট্রাইক রেটে রান সংগ্রহ দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। জুটি ভাঙে মিরাজ উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলে। দারুণ খেলতে থাকা মিরাজ ডকরেলের বলে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ডোহেনির হাতে ধরা পড়েন ৩৪ বলে ৪ চারে ২৭ রান করে।
এরপর বাংলাদেশের ইনিংস এগিয়ে যায় মূলত মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ভর করে। ২০ রানে ক্যাম্ফায়েরর বলে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ চলে যায়। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন টেক্টর কিন্তু তিনি সেটিকে হাতে জমাতে পারেননি। জীবন পেয়ে মুশফিক খেলেন ৬১ রানের ইনিংস। নিজের ৩৬তম জন্মদিনে ক্যারিয়ারের ৪৪তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৬৩ বলে ৫ চারে। এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৬১ রানে রান বাড়ানোর চেষ্টায় আপার কাট করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দেন বাউন্ডারির লাইন থেকে ঝুটে আসা ডোহেনির হাতে। তাইজুলকে নিয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে রান আসে ৩৩। মুশফিকের ৭০ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার। শেষের দিকে তাইজুল ১৪, শরিফুল ইনিংসের একমাত্র ছক্কায় ১৬, হাসান মাহমুদ অপরাজিত ৪ আর এবাদত অপরাজিত ১ রান করলে বাংলাদেশ অলআউট না হয়ে ৯ উইকেটে করে ২৫০ রান। আয়ারল্যান্ডের জস লিটল ৬১ রানে নেন ৩ উইকেট। গ্রায়াম হিউম ৩২ রানে নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন মার্ক অ্যাডায়ার, কাটর্শস ক্যাম্ফায়ার ও জর্জ ডকরেল।
এমপি/এসজি