পরীক্ষা-নিরীক্ষার হিমাগারে জয় চায় বাংলাদেশ
প্রতিপক্ষ যখন আয়ারল্যান্ড তখন বাংলাদেশের জন্য ভাবনার কোনো কারণ নেই। আবার ম্যাচটি ওয়ানডে। যেখানে বাংলাদেশ তিন ফরম্যাটে সবচেয়ে শক্তিশালী। বাংলাদেশ ভাবনামুক্ত থাকার আরও একাধিক কারণ আছে। মার্চ-এপ্রিল মাসে এই আয়ারল্যান্ডকেই বাংলাদেশ ঘরের মাঠে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল। কাজেই বাংলাদেশের শক্তি প্রমাণিত।
তিন ম্যাচের সিরিজটি আবার আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ। এখানেও বাংলাদেশ ভাবনামুক্ত। কারণ অনেক আগেই তারা ওয়ানডে বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পেয়ে গেছে। এই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। ২১ ম্যাচে ১৩০ পযেন্ট নিয়ে তারা পয়েন্ট টেবিলের চারে আছে। এই সিরিজ জিততে পারলে বাংলাদেশ পয়েন্ট টেবিলের তিন/চারে থেকেই বিশ্বকাপ খেলতে পারবে। পয়েন্ট টেবিলের উপরের দিক থেকে বিশ্বকাপ খেলতে পারলে মানসিকভাবে অনেক ভালো অবস্থানে থাকা যায় বলেও জানিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
এত সব ভাবনামুক্ত থাকার পরও বাংলাদেশের জন্য ভাবনার কারণ আছে। প্রথম ভাবনার কারণই হলো কন্ডিশন। ইংল্যান্ডের কন্ডিশন সব সময়ই বাংলাদেশের জন্য কঠিন। ৩৫/৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থেকে গিয়ে ১০/১২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ক্রিকেট খেলা। সত্যিকার অর্থেই কঠিন। যে কারণে উপমহাদেশের দেশেগুলোতে মাঠে নামার আগে এ রকম কন্ডিশনকে জয় করতে হয়। তাই ম্যাচ মাঠে গড়ানোর অনেক আগেই বাংলাদেশ ইংল্যান্ডে চলে যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ক্রিকেটের আজন্ম শত্রু বৃষ্টি বাংলাদেশ দলকে নির্বিঘ্নে অনুশীলনই করতে দেয়নি। তাই বাংলাদেশ দলকে আজ প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ জেতার আগে কন্ডিশনকেও জয় করতে হবে। চেমসফোর্ডে খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে। অনলাইনে সরাসরি আইসিসি টিভিতে দেখা যাবে খেলাটি।
বাংলাদেশের জন্য ভাবনার কারণ আছে তেমনি প্রতিপক্ষ হিসেবে আয়ারল্যান্ডেরও। কারণ তারা এই সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিততে পারলে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবে তারা। ২১ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৬৮। তাই তারাও একটা মরন কামড় দেবে। বাংলাদেশেল মাটিতে গিয়ে তারা নাজেহাল হলেও নিজেদের চেনা কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে শেষ চেষ্টা করে দেখবে। দুই দলের ১৩ বার মুখোমুখি সাক্ষাৎয়ে বাংলাদেশের জয় ৯ বার। আয়ারল্যান্ড জিতেছে ২ বার। ২ বার খেলা পরিত্যক্ত হয়েছে।
বিপরীত কন্ডিশন আর আয়াল্যান্ডের মরন কামড় বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেত বয়ে আনলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাইতো কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কোনো রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাবেন না। ইংল্যান্ডের কন্ডিশন মাথায় রেখেই তিনি দল সাজাবেন জেতার জন্য। যেখানে থাকবে না ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোনো বিষয়। তাই এই সিরিজে বিশ্বকাপের বিষয়টিকে ‘হিমাগারে’ পাঠিয়ে দিয়েছেন কোচ হাথুরুসিংহে ।
এ প্রসঙ্গে সোমাবার হাথুরুসিংহে বলেন, ‘বিশ্বকাপে আমরা এই ধরনের কন্ডিশনে খেলব না। আমাদের নজর থাকবে সিরিজ জয়ের দিকেই। বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে আমরা খুব বেশি কিছু করব না মূলত কন্ডিশনের কারণে। আমরা দেখব এমন কন্ডিশনে কেমন খেলতে পারি।
কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আসার পর থেকে বাংলাদেশ দল যে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলছে, যে খেলা তারা শুরু করেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে থেকে, পরে তা ধরে রেখেছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও। এই সিরিজেও কোচ সেই আগ্রাসী মনোভাব ধরে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল এই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই সিলেটে। হাথুরুসিংহের কথার সূত্র ধরে সেই ম্যাচে খেলা সেরা একাদশে খুব একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দুইটি পরিবর্তন এমনিতেই হতে যাচ্ছে তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ দলে না থাকাতে। তাদের পরিবর্তে তাইজুল ইসলাম এবং মোস্তাফিজুরও রহমানের খেলা অনেকটা নিশ্চিত। সর্বশেষ ম্যাচে খেলা সেরা একাদশের বাকি ৯ ক্রিকেটার ছিলেন তামিম, লিটন, নাজমুল, তাওহিদ, সাকিব, মুশফিক, মিরাজ, এবাদত ও হাসান মাহমুদ। এই ১১ জনের বাইরে দলে থাকা বাকি ৪ ক্রিকেটার হলেন রনি তালুকদার,ইয়াসীর আলী,শরিফুল ইসলাম ও নবাগত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।
আজকের ম্যাচে ইংল্যান্ডের যে কন্ডিশন তাতে করে টস জেতা দলের অধিনায়ক বোলারদের হাতেই বল তুলে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। কিন্তু চেমসফোর্ডের উইকেটের কারণে আজ টস জেতা দলের অধিনায়ককে সিদ্ধান্ত দিতে একটু বেশি ভাবতে হবে। কারণ উইকেট বেশ শক্ত। রান হবে। ৩০০ ছাড়ানো ইনিংসের সম্ভাবনাই বেশি। তাই এ রকম যদি হয় তা হলে ব্যাটিং বেছে নিতে দিধা করবেন না টস জয়ী অধিনায়ক।
এমপি/এসআইএইচ