বাংলাদেশের শিকল ভাঙার গান
২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ যখনই কোনো দেশের বিপক্ষে প্রথম খেলতে নেমেছে, সেখানেই হেরেছে। এভাবে হারতে হারতে বাংলাদেশ যেমন তাদের আগে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দেশের কাছে হেরেছে, তেমনি পরে সদস্য হওয়া দেশের কাছেও। এবার আর সেই পথে হাঁটেনি বাংলাদেশ। আায়ারল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ভেঙেছে শিকল। ১৩৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে।
গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউ জিল্যান্ডকে হারানোর পর এই টেস্টের আগে আর কোনো টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ যে এরকম আরামদায়কভাবে টেস্ট জিতবে, তা কিন্তু তৃতীয় দিন শেষে আলামত ছিল না। যদিও দ্বিতীয় দিন শেষে এ রকম আরামদায়কভাবেই টেস্ট জেতার কথা ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাদে তৃতীয় দিন। তৃতীয় দিনের নাটকীয় পরিবর্তনে মিরপুরের টেস্টে অনেক রোমাঞ্চ ছড়ানোর পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ দলের বিরোচিত প্রত্যাবর্তনে আয়াল্যান্ড খেই হারিয়ে ফেলে। সেই খেই তারা এতোটাই হারায় যে, ব্যাট হাতে আজ যেমন আর তেমন কোনো কিছু করতে পারেনি, তেমনি বল হাতেও । যে কারণে আগের দিনের রানের সঙ্গে মাত্র ৬ রান যোগ করে বাকি ২ উইকেট হারানোর পর ১৩৭ রারে পূঁজি নিয়ে বাংলাদেশের সামনে কোনো প্রতিরোধও গড়তে পারনি। কিছু বৈচিত্র্য এনে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের দাপুটে জয়ই হয়েছে।
আজ দিনের শুরুতে আইরিশরা দ্রুত ২ উইকেট হারানোতে তাদের ১৩৭ রানের পূঁজি বেশ নির্ভরযোগ্য ছিল। কারণ উইকেটের এ রকম আচরন যদি বাংলাদেশের ইনিংসেও অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশকে সেই কঠিন পরীক্ষায় যেতে দেননি শুরুতে লিটন দাস, পরে মুশফিকুর রহিম। দুই জনেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। লিটন দাস ১৯ বলে ২৩ আর মুশফিক ৪৮ বলে ৫১ রান করেন। এমন কি মুমিনুল ছিলেন আক্রমণাত্মক। তিনি ২২ বলে ২০ রান করতে ছক্কা হাঁকান ২টি, চার ১টি। এদের মাঝে টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করেন তামিম ইকবাল। খেলেন ৬৫ বলে ৩১ রানের ইনিংস। যে কারণে নাজমুল হোসেন শান্তর ৪ রান করে আউট হওয়াটা খুব বড় হয়ে আর দেখা দেয়নি। আয়াল্যান্ডের ১৩৭ রান বাংলাদেশ ওভার প্রতি পাঁচের উপর সংগ্রহ করে অতিক্রম করে ২৭.১ ওভারে।
দিনের শুরুতে আয়ারল্যান্ডকে ৯ ওভারেই ২৯২ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ জেতার জন্য টার্গেট পায় ১৩৮ রানের। উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনে তামিম ইকবালের সঙ্গে লিটন দাস নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন। আক্রমণকেই প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়ে লিটন দান ১৯ বলে ২৩ রান করে মার্ক অ্যাডায়ারের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যাওয়ার পর ওয়ান ডাউনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরে ৪ রান করে ম্যাকব্রিনের বলে স্পিলে বালবার্নির হাতে ধরা পড়ে। এরপর মুশফিক ও তামিম জুটি বেঁধে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান। তামিম টেস্ট মেজাজে খেললেও মুশফিক ছিলেন টি-টোয়েন্টির মেজাজে।
লাঞ্চের পরপরই তামিম ৩১ রানে বেন হোয়াইটের বলে কামিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার পর বাকি কাজ সারেন মুশফিক ও মুমিনুল। ধীরস্থির মুমিনুল আজ আক্রমণাত্মক খেলা খেলেন। দুই জনে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৭ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৫ রান যোগ করেন। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি করেন ৪৭ বলে। ৭ চারে। শেষ পর্যন্ত তিনি ৪৮ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন। জয়সূচক রান আসে তার ব্যাট থেকে। ম্যাচ সেরাও হন তিনি। মুমিনুল ২০ বলে ২২ রান করতে ছক্কামারেন ২টি, চার ১টি।
আইরিশদের মার্ক অ্যাডায়ার, ম্যাকব্রিন ও বেন হোয়াইট নেন ১টি করে উইকেট।
এমপি/এসএন