কাঙ্ক্ষিত পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ
যে রকমটি ভাবা হয়েছিল, হয়তো শেষ পর্যন্ত মিরপুর টেস্টে তার সে রকম কোন কিছু আর দেখা যাবে না। বাংলাদেশ এগুচ্ছে তার কাঙ্খিত পথেই। ১৩৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশন শেষ করেছে ২ হারিয়ে ৮৯ রান সংগ্রহ করে। জয়ের জন্য করতে হবে আর ৪৯ রান। আয়ারল্যান্ড তাদের ইনিংসে ২৯২ রান করে অলআউট হয়ে ১৩৭ রানে এগিয়ে ছিল।
৫ দিনের টেস্ট ক্রিকেটে বাকে বাকে রং বদল হয়ে থাকে। তার একটি রূপ দেখা গিয়েছিল মিরপুর টেস্টে। মুলত তৃতীয় দিন। যেখানে দিনের শুরুতেই কিংবা প্রথম সেশনেই ফলাফল হয়ে যাওয়ার কথা। চিত্রনাট্য লেখা হবে বাংলাদেশের জয়। বিসিবিও সে রকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল অতিথিদের মাঠে নিয়ে এসে। কিন্তু সেখানে বাক বদল হয় টেস্টের। সারাটা দিন আর আইরিশদের অলআউট করা কিংবা বাকি ৬ উইকেট নেওয়া আর সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের বোলারদের। উপরন্তু ১৩১ রানরে লিড নিয়ে হাতে ২ উইকেট রেখে আইরিশরা চোখ রাঙাণি দিচ্ছিল বাংলাদেশকে।
তৃতীয় দিনের এমন পালাবদলে চতুর্থ দিন কী হতে পারে তা নিয়ে অনেকে গবেষনায় মনোনিবেশ করেন। কেউ বলেন আয়ারল্যান্ড লিড আরও অনেক বাড়িয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দেবে। কিউবা বলেন আয়ারল্যান্ড খুব বেশি দূর যেতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছিল। মাত্র ৯ ওভারে ৬ রান যোগ করতেই আইরিশরা অলআউট হয়ে যায়। বিপজ্জনক হয়ে উঠা অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন ১ রান যোগ করে ৭২ রানে ও গ্রায়াম হিউম ৫ রান ডোগ করে ১৪ রানে আউট হয়ে যান। দুইটি উইকেটই নিয়েছিলেন এবাদত।
আয়ারল্যান্ডকে এভাবে দিনের শুরুতেই গুটিয়ে দিতে পারাটা ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য স্বস্তির। এই স্বস্তি থেকেই তারা ১৩৮ রানের লক্ষ্য পায় জয়ের জন্য। লক্ষ্য পাড়ি দিতে গিয়ে তারা আর কোনও রোমাঞ্চ ছড়াতে দেয়নি। ম্যাচে নিয়ে আসে স্বাভাবিক গতিতে। যেখানে থেকে বাংলাদেশ পাচ্ছে জয়ের সুবাস। যে সুবাস তারা পেতে শুরু করেছিল দ্বিতীয় দিন থেকেই।
লক্ষ্য ১৩৮- খুব বেশি না হলেও উইকেটের চরিত্র নিয়ে শঙ্কা কিন্তু ছিলই। কিন্তু সেই উইকেট আর তার রূপ বদল করেনি। কিন্তু বাংলাদেশ খেলতে নামে উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনে। তামিম ইকবালের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তকে না পাঠিয়ে লিটন দাসকে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে লিটন সর্বশেষ ইনিংসের উদ্বোধন করেছিলেন।
আজ আবার উদ্বোধন করতে নেমে শুরু করেন আক্রমণাত্বক খেলা। অনেকটা টি-টোয়েন্টি মেজাজে। তামিম ছিলেন আবার টেস্ট মেজাবে। লিটনের আক্রমণাত্বক মেজাজের কারণে ৫ ওভারেই বাংলাদেশের রান চলে আসে ৩২। কিন্তু তখনই হারাতে হয় উইকেট। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে ম্যাকব্রিনকে পুল করতে গিয়ে অদ্ভুত আউটের শিকার হন তিনি। বল তার ব্যাট না লেগে হেলম্যাটে লেগে বাহুতে লাগে। পরে লাগে ব্যাটে। সেখান থেকে বল গিয়ে আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। ১৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৩ রান করেন তিনি। এ সময় তামিমের রান ছিল ৮।
উদ্বোধনী জুটির মত বাংলাদেশ দল ব্যাটিং অর্ডারে পরে আরও পরিবর্তন আনে। তিনে মুমিনুলকে না পাঠিয়ে নাজমুল হোসেনকে পাঠানো হয়। কিন্তু নাজমুল প্রথম ইনিংসের মত আবারও ব্যর্থ হন। প্রথম ইনিংসে প্রথম বলেই আউট হওয়ার পর এবার আউট হন ৪ রান করে। ম্যাব্রিনের বলে পরাস্ত হন।বল তার ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে জমা পড়ে বালবার্নির হাতে। ৪৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন কিছুটা চাপে।
নাজমুল আউট হওয়ার পর প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক এসে তামিমমের সঙ্গে জুটি বাঁধার পর বাংলাদেশ আর কোনও শঙ্কায় পড়েনি। দলের অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার সব আক্রমণ মোকবেলা করে দলকে কাঙ্খিত পথে নিয়ে যাচ্ছেন। মুশফিক খেলছেন আক্রমণাত্বক। ২০ বলে ৫ চারে ২৯ রান করে তিনি আছেন অপরাজিত। তামিম জুটিতে তারা ৪৬ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন। তামিম ৪৮ বলে ২ চারে ২৪ রান করে মুশফিককে নিয়ে আবার ব্যাট করতে নামবেন।
এমপি