আজ দু’জনার দু’টি পথ ওগো দু’টি দিকে গেছে বেঁকে!
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় গানগুলোর একটি হলো, ‘আজ দু’জনার দু’টি পথ ওগো দু’টি দিকে গেছে বেঁকে’-পংক্তিগুলো যেন বর্তমানে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের সর্ম্পকেরই ইঙ্গিত বহন করছে।
দুইজনের সর্ম্পকের অবনতি বেশ কয়েক বছর থেকেই। কিন্তু শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ক্রিকবাজ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। তিনি এমন একসময় বিষয়টি সামনে এনেছেন, যখন নতুন করে দায়িত্ব পালন করতে আসা চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কাজ শুরু করেছেন। দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে চলে এসেছে ইংল্যান্ড। কিন্তু নাজমুল হাসান পাপনের এমন মন্তব্যে ইংল্যান্ড সিরিজ অনেকটা আড়ালে পড়ে গেছে। এখন সাকিব-তামিম দ্বন্দ্বেরই চর্বিত চর্বণ হচ্ছে সর্বত্র।
আজ সাকিব-তামিমের পথ দু’দিকে চলে গেলেও একসময় দুইজনই ছিলেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুতে একসঙ্গে থাকতেন, খেতেন, ঘুমাতেন, ঘুরতেন। অনুশীলনেও আসতেন একসঙ্গে। এমনকি অনেক সাফল্যও আসত দুইজনের হাতধরাধরি করে আগে-পিছে, কখনো বা একসঙ্গে। সেই সবকিছুই এখন অতীত।
দুইজনের সর্ম্পকের অবনতি অনেক আগে থেকেই ছিল। দুইজনই পারিবারিক ও সামাজিক ব্যস্ততাকে উল্লেখ করে বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিসিবি সভাপতি প্রকাশ করার আগে সবাই সেভাবে জানতেন না। তারপরও তামিম যতটা সম্ভব বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫-১৬ বছর যাবৎ আমরা একসঙ্গে খেলছি। সে যখন উইকেট পায় আমি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি।’ নিজেদের সর্ম্পকের উন্নতি সম্ভব কি না- জানতে চাওয়া হলে তামিম বলেন, ‘কেন সম্ভব নয়? সবকিছুই সম্ভব। যেটাই হয়েছে আমাদের দু’জনের মধ্যে হয়েছে। এটি আমাদের দু’জনের মধ্যেই থাকা উচিত। এ বিষয় নিয়ে এখানে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’
বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ‘স্বাস্থ্যকর’ নয়। তামিম ইকবাল তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। দলের পরিবেশও খুব ভালো আছে। তা শুধু আজ না, অনেকদিন ধরেই। আপনারা এর ফলাফলও দেখেছেন। শেষ পাঁচ বছর ধরে আমরা ওয়ানডেতে ভালো। যখন ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ভালো থাকে, সবাই খুশি থাকে, তখনই এমন ফল আসে। সবকিছুই তাই স্বাভাবিক আছে।’
বিসিবি সভাপতি ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, দলের সবচেয়ে বড় সমস্যা এই গ্রুপিং। সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টিও উঠে আসে। তামিম তার জবাব দিয়ে বলেন, ‘আমি ১৭ বছর থেকে খেলছি জাতীয় দলে। ৫ বছর আগে, ১০ বছর আগে, ১৬ বছর আগে, যখনিই দল ভালো করতে পারে না, তখনই ‘ট্র্যামট’ ব্যবহার করা হতো। ওমুক গ্রুপ, তমুক গ্রুপ। আমি শুধু বলার জন্য বলা না। যারা আমাকে খুব ভালো করে চিনেন, জানেন, আমি খুবই স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড। আমি কোনো কিছু লুকিয়ে বলি না। কোনো কিছু কম দেখে বলি না। যা বলব সোজা বলব। এতে আপনি পছন্দ করেন বা নাই করেন, এটা আপনার বিষয়। আমি ১৬ বছর আগেও গ্রুপিং দেখিনি। ১০ বছর আগেও গ্রুপিং দেখিনি। এখনো দেখি না। শেষ ৬ মাস আমি দলের সঙ্গে ছিলাম না। এই জিনিসটা (গ্রুপিং) যদি শেষ ৬ মাসে হয়ে থাকে তাহলে আমি জানি না। আমি গত ৩-৪ দিন থেকে দলের সঙ্গে আছি। আমি এরকম কোনো কিছু জানি না। আমরা সবাই খুব এনজয় করছি। দুঃখজনক যখনই দল ভালো করে না, তখনই বিষয়টা উঠে আসছে। আর একটা দল মাশাআল্লাহ যখন বিশেষ একটি ফরম্যাটে এতো ভালো করছে, আমি আবারও একই বলব, ওই সময়েও দেখিনি, এখনো দেখছি না।
এমপি/এসজি