সাকিব-তামিম দ্বন্দ্বের অবসানে ব্যর্থ বিসিবি সভাপতিও
জাতীয় দলে এক সময় সাকিব-তামিম ছিলেন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এমনকি দুই জনের সাফল্যও চলত হাত ধরাধরি করে। কিন্তু সেই সর্ম্পক এখন আর নেই। সেখনে ধরেছে বিরাট ফাটল। সর্ম্পকটা সাপে-নেউলে। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। দুই জনেই আবার তিন ফরম্যাটে দলকে নেতৃত্ব নিয়ে আসছেন। সাকিব টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি এবং তামিম ওয়ানডে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দলের দুই সিনিয়রের ক্রিকেটের এ রকম বিভেদ দলের ড্রেসিং রুমেও প্রভাব পড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২২ গজের খেলায়ও। দুই জনের এই বিভেদের মীমাংসা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন স্বয়ং বিসিবি সভাপত নাজমুল হাসান পাপন।
জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইপ ‘ক্রিকবাজ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সে কথাই জানিয়েছেন।
সাকিব ও তামিমের এখন মাঠের ক্রিকেট ছাড়া খুব একটা দেখা হয় না। ফলে তাদের পারস্পরিক সর্ম্পকের অবনতি শুধুমাত্র দলের ক্রিকেটাররাই প্রকাশ্যে দেখে থাকেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে একটি পুরস্কার বিতরনি অনুষ্ঠানে দুই জনের দেখা হলেও কেউ কারও সঙ্গে ন্যুনতম হাই, হ্যালো পর্যন্ত করেননি।
তারকা ক্রিকেটাররদের সাামজিক কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হলেও ভক্তরা তাদেরকে ঘিরে ভিড় করে থাকেন। সেলফি তোলার চেষ্টা করে থাকেন। সেই অনুষ্ঠানে তাদের ন্যূনতম সৌজন্যতা দেখিয়ে কথা না বলাতে বিষয়টি উপস্থিত কারও নজর কাড়েনি। যারা জানতেন না, তারাও বিষয়টি সে দিন জেনে যান।
দুই জনের এ সর্ম্পককে মধুর করে তুলতে গিয়ে নিজের না পারার কথা উল্লেখ করে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ড্রেসিং রুমের জন্য এটি কোনো ভালো খবর নয়। আমি তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছিল। কথা বলেছি দুই জনের সঙ্গেই। কথা বলার পর যা বুঝতে পেরেছি, তাতে করে মনে হয়েছে এই সমস্যা আপাতত সমাধান সম্ভব নয়।’
বিষয়টি সমাধান করতে না পারলেও বিসিবি সভাপতি দুই জনকেই কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছেন, যাতে করে তাদের এই দ্বন্দ্বের প্রভাব কিছুতেই মাঠে না পড়ে।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের দুই জনকেই একটি বার্তা দিয়েছি। তাদেরকে জানিয়েছি দুই জনের মাঝে কী হয়েছে আমি জানি না। তার প্রভাব যেন খেলা চলাকালীন কিছুতেই প্রভাব না ফেলে। তারা আমাকে আস্বস্ত করেছে।’
দুই জনের সর্ম্পকের উন্নতি করকে না পারলেও তিনি কথা বলার পর সেখানে কিছুটা হলেও পরিবেশ উন্নতি হয়েছে বলে জানান নাজমুল হাসান পাপন।
তিনি বলেন, ‘ খেলার মাঠে, ড্রেসিং রুমে দুই জনকেই কথা বলতে হয়। কিন্তু কথা না বলাতে ড্রেসিং রুমের পরিবেশ ভালো ছিল না। এখন কিছুটা হলেও সেখানে উন্নতি হয়েছে। এই রকম পরিবেশ আমি ইংল্যান্ডে বিপক্ষে সিরিজ থেকে চাই বলে জানিয়ে দিয়েছি। তাদের বাইরের কোনো কিছু নিয়ে আমার চিন্তা নেই।’
দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের সর্ম্পকের অবনতি থেকে তা অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় গ্রুপিং। যা একটি দলের উন্নতির পথে খুব বেশি অন্তরায়।
এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে বর্তমানে এই গ্রুপিং খুব বড় সমস্যা। এটাই নিমর্ম বাস্তবতা। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।’
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপে আমি তাদের হোটেলে ছিলাম না। না থাকার পরও যা শুনেছি, তা আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। আগামীর পথ সুন্দর করতে হলে সুন্দর ভবিষ্যৎয়ের জন্য এ রকম সমস্যার অবসান ঘটাতেই হবে। কারণ, একটা বিষয় সবারই বোঝা প্রয়োজন, এখানে গ্রুপিং করার কোনো সুযোগ নেই।’
দ্বিতীয় মেয়াদে জাতীয় দলের হয়ে কাজ শুরু করা লঙ্কান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সর্ম্পক আগে ভালো ছিল না। এবার তার দ্বিতীয় মেয়াদে এটিকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখছিলেন।
এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘দলের সিনিয়র ক্রিকেটার যারা আছেন, তারা যদি পারফরম করতে না পারেন, কোচ তাদেরকে নিশ্চয় দলে রাখবেন না।‘
এমপি/এমএমএ/