সিনিয়রদের সঙ্গে হাথুরুর সর্ম্পক টক, ঝাল না মিষ্টি!
দ্বিতীয় দফায় চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পালনের আগে থেকেই বাতাসে গুঞ্জন দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার সর্ম্পকে কেমন হবে? টক, ঝাল না মিষ্টি! এর কারণও আছে।
প্রথমবার তিনি আসার পরপরই উইন্ডিজে সিপিএল খেলতে যাওয়া সাকিব আল হাসানকে মাঝপথ থেকেই ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করেছিলেন। তার কারণেই মাশরাফি বিন মর্তুজা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। মুমিনুল হককে টেস্ট দলে থেকে বাদ দিয়েছিলেন। আবার তাকে লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংও করিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের শততম টেস্টে বাদ দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে।
এখানেই শেষ নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাকিব টেস্ট না খেলে ছুটি নেওয়ায় সেটাও তিনি ভালোভাবে নেননি। ক্রিকেটের প্রতি সাকিবের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। যদিও ওই সফরের মাঝপথেই তিনি বিসিবির চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন কোনোরকম পেশাদারিত্বের নিয়ম-কানুনের বালাই না করেই।
এবার মাশরাফি ছাড়া বাকিরা এখনো খেলছেন। এদের মাঝে একমাত্র সাকিবই খেলছেন আবার তিন ফরম্যাটেই। তিনি আবার টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কও। ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আবার ফিরে আসায় নতুনদের সঙ্গে কেমন হবে হাথুরুসিংহের সর্ম্পক। সাকিবের আন্তরিকতা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেটিকে বর্তমানে কীভাবে দেখছেন? এসব প্রশ্ন ছুটে গিয়েছিল তার দিকে। কথায় পটু হাথুরুসিংহে জবাব দিয়েছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে।
সিনিয়রদের সঙ্গে সর্ম্পক নিয়ে তিনি বলেন, ‘সিনিয়রদের সঙ্গে আমার একেবারেই কোনো সমস্যা নেই। সবার সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। সবাই চায় এখন দলের ভালো। প্রথমবারও আমি কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হইনি।’
সিনিয়রদের নিয়ে তিনি আশার কথাও শোনান। তিনি বলেন, ‘তারা ১০-১৫ বছর যাবৎ ভালো করে আসছে। যতদিন তারা খেলবে এইভাবে ভালো করে যাবে। তাদের ভূমিকার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা বিশ্বমানের খেলোয়াড়। তারা তাদের নিজেদের ভূমিকা সর্ম্পকে জানে।’
প্রথমবারের তুলনায় এবারের হাথুরুসিংহে অনেক পরিণত, অভিজ্ঞতায় পুষ্ট। এই দুই সময়ের ব্যবধানে তার মাঝে পার্থক্য কী কী? জবাব দেবেন, কি দেবেন না, এটা ভেবে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স বেড়েছে একটু।’
বয়স বাড়ায় নিজেকে আরও পরিণত মনে করছেন হাথুরু। প্রশ্নের শুরুতে একটু এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে হাসতে হাসতে বলেন, ‘এই চাকরি নেওয়ার সময় আমি ভেবেছি বড় পরিসরে। প্রথমবার বাংলাদেশে আসার সময় আমার আন্তর্জাতিক কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কোথায় এসেছি জানতাম না। যে কারণে আমার নিজেকেও দেখার একটা বিষয় ছিল। কিন্তু এবার সেসবের কোনো বালাই নেই। এবার আমি জানি বাংলাদেশে কীভাবে কাজ করতে হবে। আমি নিজের সম্পর্কেও জানি। আগের তুলনায় অনেক বেশি অভিজ্ঞ। আমার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতানো।’
এই বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনা দেখছেন জানিয়ে চন্ডিকা বলেন, ‘আমি বর্তমান বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনাও দেখছি। একই রকম সম্ভাবনা দেখছি দেশের কোচদের উন্নতির ব্যাপারটি নিয়েও। ডেভিড মুর এসেছে। সে আমাকে অনেক সহায়তা করবে। পরের প্রজন্মকে আমি সামনে নিয়ে আসতে চাই।’
মাশরাফি অবসর নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহের আমলেই। সেই মাশরাফি এখনো খেলছেন। এবারের বিপিএল তার বোলিং ছিল ঈর্ষান্বিত। মাশরাফির ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়েও প্রশ্ন উঠে সংবাদ সম্মেলনে। জবাবে হাথুরু সাফ ঠাট্টা করে জবাব দিয়েছিলেন, ‘নির্বাচনের জন্য?’ পরে সিরিয়াসলি জবাব দেন, ‘আমার মনে হয় না সে আর খেলবে।’
হাথুরুসিংহের যাত্রা শুরু হবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে। তার মতো করে কোনো ক্রিকেটারকে এই সিরিজে চাওয়ার চেয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন তিনি বেশি। হাথুরু বলেন, ‘আমি তাদের কারও সঙ্গে দেখা করিনি। নতুন কোনো ক্রিকেটারকে দেখিনি। আমি এই সিরিজে ক্রিকেটারদের পর্যবেক্ষণ করতে চাই। তাদের প্রসেস কী তা দেখতে চাই। ইদানিং তারা খুবই ভালো ক্রিকেট খেলছে। ভারতের বিপক্ষে তারা খুবই ভালো করেছে। দলের কোচিং স্টাফ ও দলের কাছ থেকে আমি অনেক বেশি তথ্য আশা করছি।’
এমপি/এসজি