সর্বোচ্চ রান শান্তর দাপট দেশি ব্যাটসম্যানদের
বিপিএলের ইতিহাসে সেরা আয়োজন উপহার দিয়ে পর্দা নেমেছে নবম আসরের। দেশি ক্রিকেটারদের নজরকাড়া নৈপুণ্যে আলোকিত ছিল আসর। এবারের আসরে ৫১৬রান করে সবাইকে টেক্কা দিয়েছেন রানার্সআপ সিলেট স্ট্রাইকার্সের বাঁহাতি ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত।
১৫ ম্যাচের ১৫ ইনিংসেই ব্যাট করেছেন তিনি। তার ১৫টি ইনিংস ছিল ৬৪, ৪০, ৩৮, ৩, ১৫, ৬, ৬০, ৯, ৮৯*, ১৩, ১২, ৫৭, ১৯, ৪৮ ও ৪৩*। ১১৬.৭৪ স্ট্রাইক রেটে গড়ছিল ৩৯.৬৯। অপরাজিত ছিলেন ২টি ম্যাচ। হাফ সেঞ্চুরি আছে ৪টিতে।
নাজমুল হোসেন শান্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করার পথে নতুন ইতিহাসও গড়েছেন। এক আসরে এর আগে কোনো ব্যাটসম্যানই ৫০০ রানের উপরে করতে পারেনি। সর্বোচ্চ ৪৯১ রান করেছিলেন ২০২০ সালে খুলনার হয়ে মুশফিকুর রহিম।
সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের দৌড়ে শুরুতে নাজমুল ছিলেন না। এখানে ছিলেন তারই সতীর্থ তৌহিদ হৃদয়। প্লে অফের আগ পর্যন্ত লিগের মাঝামাঝি পর্যন্ত সবার উপরে ছিলেন তৌহিদই। কিন্তু ৪ ম্যাচ পর তৌহিদ ইনজুরির কারণে ২টি ম্যাচ খেলতে পারেননি। এই সুযোগে প্রথমে সাকিব উঠে আসেন সবার উপরে। পরে সাকিবকে হটিয়ে জায়গা করে নেন নাজমুল।
নাজমুল শীর্ষে উঠার পর তার সঙ্গে আবার শীর্ষে উঠার লড়াই টক্কর চলে সেই তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গেই। এমন কি ফাইনালেও । যদিও নাজমুলের রান তৌহিদের চেয়ে ৪৯ বেশি ছিল। কিন্তু ফাইনালে তৌহিদ রানই করতে পারেননি। সেখানে নাজমুল ৬৪ রানের ইনিংস খেলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হওয়ার পাশাপাশি ৫১৬ রান করে নতুন ইতিহাসও লিখেন। সর্বোচ্চ রান করার পথে তিনি ১২টি ছক্কা আর ৫৭টি চার মেরেছিলেন। তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল অপরজাতি ৮৯।
সর্বোচ্চ রানসংগ্রহের তালিকায় এবার ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দাপট।শীর্ষ ১০ জনের ৮ জনই বাংলাদেশের। এর মাঝে প্রথম ৭টি স্থানও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।
১৩ ম্যাচের ১৩ ইনিংস ব্যাট করে ৪২৫ রান করে দুইয়ে আছেন রংপুর রাইডার্সের রনি তালুকদার। তার হাফ সেঞ্চুরি ৩টি। সর্বোচ্চ রান ৬৭। ১২টি ছক্কার সঙ্গে ৫১টি চার মারেন তিনি স্ট্রাইকরেট ১২৯.১৭। গড় ৩৫.৪১।
তিনে সিলেটের তৌহিদ হৃদয়। ১৩ ম্যাচের ১২ ইনিংনে ৫টি হাফ সেঞ্চুরিতে তার রান ৪০৩। সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল অপরাজিত ৮৫। ৩৬.৬৩ গড়ে তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১৪০.৪১। তার ছক্কা ছিল নাজমুল ও রনির চেয়ে একটি বেশি ১৩টি। চার ছিল ৪৩টি।
ফাইনালে ৫৫ রানের ইনিংস খেলে সাকিব আল হাসানকে টপকে চারে উঠে আসেন কুমিল্লার ওপেনার লিটন কুমার দাস। ১৩ ম্যাচের সবকটিতে ব্যাটিং করে তিনি করেছেন ৩৭৯ রান। সর্বোচ্চ রান ৭০। গড় ৩১.৫৮। স্ট্রাইকরেট ১২৯.৩৫। ছক্কা মেরেছেন উপরে থাকা ৩ জনের চেয়ে বেশি ১৪টি। চার মারার সংখ্যা ৪৪টি।
৩৭৫ রান করে সাকিব পাঁচে থাকলেও এবার তিনি ছিলেন বেশ ছন্দে। ২২টি ছক্কা আর ৩৬টি চার যেন তার দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। শুধু ছক্কা নয় উপরে থাকা ৪ জনের চেয়ে তার স্ট্রাইকরেটও অনেক বেশি। ১৭৪.৪১। গড়ও প্রথম ৪ জনের চেয়ে বেশি ৪১.৬৬। সাকিব এবার ম্যাচ খেলেছেন ১৩টি। ব্যাট করেছেন ১১টিতে। হাফ সেঞ্চুরি ৩টি। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৮৯।
প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানই ছিলেন প্লে অফে খেলা দলের। ছয়ে থাকা নাসির হোসেনর দল ঢাকা ডমিনেটরস আবার প্লে অফ খেলতে পারেনি। ১২ ম্যাচের ১২টিতে ব্যাট করে নাসির রান করেছেন ৩। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৬৬। তার গড় বেশ ভালো। প্রথম ৫ জনের চেয়ে বেশি ৪৫.৭৫। স্ট্রাইকরেট ১২০.০০। ৩৪টি চার আর ৮টি ছক্কা মারেন তিনি।
সাতে সিলেটের মুশফিকুর রহিম। ফাইনালের আগে তিনি প্রথম ১০ জনে ছিলেন না। তার রান ছিল ২৮৪। ফাইনালে এবারের আসরে নিজের সর্বোচ্চ ৭৩ রানের ইনিংস খেলে ৩৫৭ রান করে তিনি উঠে আসেন লাকি সেভেনে। ১৩২.৭১ স্ট্রাইকরেটে তার গড় ৩৯.৬৬। চার-ছক্কার সংখ্যা ছিল ৩৬ ও ৯টি।
আটে এসে পাওয়া গেছে প্রথম বিদেশি। পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। ১০ ম্যাচের ১০ ইনিংসে ব্যাট করে ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে তিনি রান করেছেন ৩৫১। গড় ৫০.১৪। স্ট্রাইকরেট ১২৬.২৫। সর্বোচ্চ রান ৭৩। ২৭টি চার আর ১৪টি ছক্কা মারেন তিনি
নয়ে ফরচুন বরিশালের পাকিস্তানি ক্রিকেটার ইফতেখার আহমেদ। তার রানও ৩৫১। তিনি অবশ্য মোহাম্মদ রিজওয়ানের চেয়ে ম্যাচ একটি বেশি খেলেছেন। গড় ঈর্ষণীয় ৫৮.৫০। স্ট্রাইকরেট ১৫৭.৩৯ ৩টি হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে একটি সেঞ্চুরিও। সেই ইনিংসটি ছিল অপরাজিত ১০০ রানের। সবচেয়ে বেশি ছক্কা তারই ২৩টি। চার ১৯টি।
দশে প্লে অফে খেলতে না পারা আরেক দল চট্টগ্রাম ডমিনেটরসের আফিফ হোসেন। তারা অবশ্য পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে। আফিফের রান ৩৪৪। ম্যাচ খেলেছেন ১২টি। ব্যাট করেছেন ১১টিতে। তার স্ট্রাইকরেট ১২৬.৩৫, গড় ৩৮.২২। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৬৯। চার ৩৮টি। ছক্কা ৬টি।
এমপি/এসএন