তৌহিদের হৃদয় কাড়া আর শান্তর অশান্ত ব্যাটিংয়ের লড়াই
স্বপ্নের বিপিএল ফাইনালে পৌঁছে গেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। অন্য দলগুলো যেখানে এক থেকে একাধিকবার ফাইনাল খেলেছে, তখন সিলেটের কাছে তা ছিল আকাশের চাঁদ। সেই চাঁদকে ছোঁয়ার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল সিলেট।ফাইনালে উঠে সেই চাঁদকে ছুঁয়েছে। চাঁদকে ছোঁয়ার মাধ্যমে সিলেট সেই স্বপ্নকে স্পর্শ করেলেও এখনো কাজ কিছু বাকি। এবার সেই স্বপ্নকে নিজেদের অন্দরে ঢুকানোর পালা। জিততে হবে শিরোপা। আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।
প্রতিপক্ষ তিনবারের চ্যাম্পিয়নকে হারাতে পারলে পূর্ণ হবে সিলেটের দীর্ঘদিনের লালিত বাসনার। সিলেটের সেই স্বপ্ন সারথিতে পথ পদর্শক হয়ে উঠতে পারেন দুই দেশি ব্যাটসমান নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। দুই জনের ব্যাটে ছুটছে রানের ফোয়ারা। তৌহিদের ‘হৃদয়’ কাড়া বাটিংয়ের মাঝে শান্তর ‘অশান্ত’ হয়ে উঠা সিলেটের জন্য বিশাল এক সম্পদ। নাজমুল ১৪ ম্যাচের সব কটিতে ব্যাটিং করে ৪৫২ রান করে সবাইকে টেক্কা দিয়ে আছেন শীর্ষে। তৌহিদ ১২ ম্যাচের ১১টি ব্যাটিং করে ৪০৩ রান করে অবস্থান করছেন তিনে। তারা দুই জন পাশাপাশিই ছিল্। কিন্তু দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রনি তালুকদার ৬৬ রানের ইনিংস খেলে ৪২৫ রান নিয়ে ঢুকে পড়েছেন তাদের দুই জনের মাঝে। অবস্থান করছেন দুইয়ে।
রনি তালুকদারের দল রংপুর রাইডার্স আসর থেকে বিদায় নিয়েছে। তারও আগে হৃদয়-শান্তকে অনুসরণ করা সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালও নেই। এক সময় সাকিবতো শীর্ষেই উঠে গিয়েছিলেন। কাজেই সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী লড়াইয়ে তারা দুই জনই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। ফাইনালে আসা একটি দলের জন্য এ এক মধুর লড়াই। শান্তর জবানিতে ‘হেলদি লড়াই । দলের জন্য খুবই ভালো। তৌহিদও ভালো করছে। এটা দলের জন্যও ভালো একটা দিক। আমাদের মাঝে ভালো একটা হেলদি প্রতিযোগিতা হচ্ছে। আমাদের দুই জনেরই লক্ষ্য ফাইনালে কতটা ভালো খেলে জিততে পারি।’
সিলেটকে এই পর্যায়ে আনার পেছনে এই দুই জনের অবদান অনস্বীকার্য। বিপিএলে দলগুলোর ভারসাম্য বিদেশি ক্রিকেটোরদের উপর নির্ভর করে। সিলেটও তার ব্যতীক্রম নয়। কিন্তু সিলেটের ব্যাটিং লাইনে নেই তাদের কোনো অবদান। এই দু্ই জনের পরের দুইটি স্থানও দেশি ক্রিকেটারদের মুশফিকুর রহিমের ২৮৩, জাকির হাসানের ২৫০। এরপর ১৬৫ রান করে পঞ্চম স্থান আছেন লঙ্কান থিসারা পেরেরা।
বিপিএলের শুরু থেকেই ব্যাট হাতে চমক দেখিয়ে রান সংগ্রহ করে অন্যদের অনেক পেছনে ফেলে তৌহিদ হৃদয় শীর্ষে উঠে যান। এ সময় তিনি ৪ ম্যাচের ৩টিতে টানা ফিফটি করে ৩টিতেই ম্যাচ সেরা হন। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে তিনি দুইটি ম্যাচ খেলতে পারেননি। আবার ফিরে আসার পর শুরুর ফর্মও ধরে রাখতে পারেননি।। অপরদিকে নাজমুল হোসেন শান্ত তৌহিদের মত টানা ফিফটি করতে না পারলেও ভালো-মন্দের মিশেলে রান করে যান।
তৌহিদ হৃদয় টানা ৩ ফিফটিসহ মোট ফিফটি করেছেন ৫টি। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৮৫। নাজমুলের ফিফটি ৩টি। সর্বোচ্চ ৮৯। তাও অপরাজিত। তৌদের স্ট্রাইক রেট ১৪১.৪০ নাজমুলের ১১৩.৬৫।
নাজমুল শুরু থেকেই ইনিংসের গোড়াপত্তন করে আসছেন। তৌহিদের স্থান ছিল তিনে। ইনজুরিতে থেকে ফিরে আসার পর রান না পাওয়াতে পরে তাকে নাজমুলের সঙ্গে ইনিংসের উদ্বোধন করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখানে এসেই তিনি খেলেন ৭৪ ও অপরাজিত ৮৫ রানের দুইটি ইনিংস।
সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের দিক দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত বেশ এগিয়ে আছেন। তৌহিদ হৃদয়ের চেয়ে তার রান ৪৯ বেশি। আজ দুই জনেই যদি উপরে উঠার লড়াইয়ে শামিল হতে পার্,তা’হলে তার সুফল ভোগ করবে সিলেটই। ফুলে ফেঁপে উঠবে সিলেটের ইনিংস। যা তাদের চূড়ান্ত বিজয়ের হাসি হাসতে রাখতে পারে বিরাট ভূমিকা। দুই জনের কেউই কিন্তু এখন পর্যন্ত শিরোপার স্বাদ নিতে পারেননি। দুই জনেরই আবার ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে। গতবার তারা দুই জনেই খেলেছিলেন একই দলে ফরচুন বরিশালে।
দুইজনে শুধু রান সংগ্রহ করেই যাননি, রসায়নও বেশ জমে উঠে। জুটি বেঁধে আছে ১০১,৮৮ ও ৬৫ রানের তিনটি ইনিংস। এ রকম ইনিংস আজও তাদের কাছে প্রত্যাশা সিলেটবাসীর।
নাজমুল ও তৌহিদ দুই জনেই রান করলে তখন তৌহিদের পক্ষে আর সম্ভব হবে না নাজমুলকে ছাড়িয়ে যাওয়া। এদিকে নাজুমলের সামনে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হওয়ার পাশাপাশি বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক আসরে ৫০০ রান করারও সুযোগ আছে। তার জন্য করতে হবে ৪৮ রান। বিপিএলে এক আসরে সর্বোচ্চ রান ৪৯১। ২০২০ সালে খুলনার হয়ে মুশফিকুর রহিম করেছিলেন এই রান। ৪৮ রান করতে পারলে এই রান ও ৫০০ রান করাও হয়ে যাবে নাজমুলের। তৌহিদকে তা অর্জন করতে হলে খেলতে হবে মোটামুটি সেঞ্চুরির কাছকাছি ৯৩ রানের ইনিংস।
এমপি/আরএ/