রোড টু ফাইনাল: সিলেট
সিলেট স্ট্রাইকার্স খুব শক্তিশালী দল না গড়েও শুধুমাত্র দক্ষ নেতৃত্ব আর টিম স্পিরিটে বিপিএলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পৌঁছে গেছে শিরোপা জয়ের শেষ ধাপে। আজ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লাকে হারাতে পারলেই তাদের ষোলকলা পূর্ণ হবে।
সিলেট এবারের বিপিএলে শুরু থেকেই ছিল শীর্ষে। শেষ পর্যন্ত তারা সেই স্থান ধরে রেখেই প্লে অফে জায়গা করে নেয়। খেলে প্রথম কোয়ালিফায়ার। সেখানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কাছে ৪ উইকেটে হারলেও দ্বিতীয় কোয়ারিফায়ারে রংপুর রাইডার্সকে ১৯ রানে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয়। প্রথম কোয়ারিফায়ারে তারা আগে ব্যাট করে ১৭.১ ওভারে মাত্র ১২৫ রানে অলআউট হয়েছিল। কুমিল্লা সেই রান অতিক্রম করেছিল ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬.৪ ওভারে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারেও সিলেট আগে ব্যাট করে। এবার আর পড়তে হয়নি ব্যাটিং ব্যর্থতায়। ৭ উইকেটে ১৮২ রান করে। রান অতিক্রম করতে নেমে রংপুর ৮ উইকেটে ১৬৩ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছিল।
সিলেট লিগ পর্বে ১২ ম্যাচ খেলে ৯টি জয় পায়। তাদের এই ৯ জয়ের প্রথম ৫টিই ছিল টানা। এই সময় তারা চট্টগ্রামকে ৮ উইকেটে হারিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। এটি ছিল এবারের বিপিএলের প্রথম ম্যাচও। চট্টগ্রাম আগে ব্যাট করে পুরো ২০ ওভার খেলেও ৯ উইকেটে করেছিল মাত্র ৮৯ রান। সিলেট জয় পেয়েছিল ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১২.৩ ওভারে।
সিলেট দ্বিতীয় ম্যাচে পেয়েছিল ফরচুন বরিশালকে। এবার তাদের সামনে আগে ব্যাট করে বরিশাল ৭ উইকেটে ১৯৪ রানের বিশাল টার্গেট ছুড়ে দিয়েছিল। অদম্য সিলেট তাতে ভড়কে যায়নি। ১৯ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য পাড়ি দেয়।
সিলেটের এর পরের শিকার ছিল আজকে ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। আগে ব্যাট করে কুমিল্লা বড় পূঁজি দাঁড় করাতে পারেনি। ৬ উইকেটে মাত্র ১৪৯ রান করে হার মেনেছিল ৫ উইকেটে। সিলেট রান অতিক্রম করেছিল ১৭.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে।
সিলেটের চতুর্থ শিকার ছিল ঢাকা ডমিনেটরস। তাদের হারিয়েছিল ৬২ রানের বড় ব্যবধানে। এবার আগে ব্যাট করে সিলেট করেছিল ৮ উইকেটে ২০১ রান। এবারের আসরে এটিই ছিল প্রথম দ্বিশত রানের স্কোর। বিশাল লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে ঢাকা ১৯.৩ ওভারে ১৩৯ রান করেছিল।
সিলেট এই চারটি জয়ই পেয়েছিল ঢাকায়। এরপর তারা খেলতে যায় চট্টগ্রামে। সেখানে গিয়েও তারা ধরে রাখে জয়ের ধারা। আবারও হারায় ঢাকা ডমিনেটরসকে। এবার সিলেট জয় পায় ৫ উইকেটে। ঢাকা আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১২৮ রান করে। সিলেট ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে।
সিলেট ষষ্ট ম্যাচে এসে পায় প্রথম হারের স্বাদ। সেই তিক্ত স্বাদ তারা পেয়েছিল আজকের ফাইনালের মঞ্চের প্রতিপক্ষ কুমিল্লাকে। হারের ব্যবধান ছিল ঢাকায় তারা কুমিল্লাকে যেই ব্যবধানে হারিয়েছিল সেই ৫ উইকেটেই। আগে ব্যাট করে সিলেট অলআউট না হলেও পুরো ২০ ওভার খেলে ৭ উইকেটে মাত্র ১৩৩ রান করেছিল। যে রান পাড়ি দিতে গিয়ে কুমিল্লাকে হারাতে হয়েছিল ৫ উইকেট। খেলতে হয়েছিল ১৯ ওভার।
সিলেট জয় দিয়ে চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করার পর আবার ফিরে আসে ঢাকাতে। এখানে তারা একটি ম্যাচ খেলে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় ফরচুন বরিশালকে। আবারও তাদের হারায়। তবে এবার হারাতে প্রচন্ড ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। জয় পেয়েছিল মাত্র ২ রানে। সিলেটের করা ৫ উইকেটে ১৭৩ রানের জবাব দিতে নেমে বরিশাল করেছিল ৮ উইকেটে ১৭১।
সিলেট তৃতীয় বারের মত জয় দিয়ে পর্ব শেষ করার পর যায় নিজেদের ঘরে। কিন্তু যাত্রাটা সুখকর হয়নি। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে এক পর্যায়ে মাত্র ১৭ রানে ৭ উইকেটে হারিয়ে তারা বিপিএলেরি ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার লজ্জার মুখে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেই লজ্জা নিবারণ করে তারা করতে পেরেছিল ৯ উইকেটে ৯২। হার মেনেছিল ৬ উইকেটে। রংপুর ১৫.৪ ওভারে লক্ষ্য অতিক্রম করেছিল।
সিলেট নিজেদের মাঠে প্রথম ম্যাচ হারলেও পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায়। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারায় ৭ উইকেটে। চট্টগ্রাম বেশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিল ৬ উইকেটে ১৭৪ রান করে। সিলেট ৩ উইকেট হারিয়ে ১৮ ওভারেই জয়ের নাগাল পেয়ে যায়।
সিলেট অন্য নিজেদের মাঠেও খুলনা টাইগার্সকে ৩১ রানে হারিয়ে জয় দিয়ে পর্ব শেষ করে। আগে ব্যাট করে সিলেটের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১৯২। খুলনা জবাব দিতে পেরেছিল ৯ উইকেটে ১৬১ রান পর্যন্ত করে।
সিলেট ঢাকায় এসে পড়ে হারের মুখে। প্রতিপক্ষ ছিল নিজেদের মাঠে বাজে অবস্থার মুখে পড়ে হার মানা প্রতিপক্ষ রংপুর। এবার আর তারা ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েনি। ২ উইকেটে ১৭০ রান করেও পার পায়নি। রংপুরও ২ উইকেট হারিয়ে ১৮ ওভারে ১৭৬ রান করে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে। এবারের আসরে লিগ পর্বে একমাত্র রংপুরে কাছেই সিলেট দুইবার হেরেছিল।
সিলেট এবার টানা দুই ম্যাচ হারেনি। তাইতো লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে তারা খুলনা টাইগার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ স্থান ধরে রাখে। খুলনা ৮ উইকেটে ১১৩ রান করে মাত্র। সিলেট ১৭.৩ ওভারে ৪ উইকেটে ১৪৪ রান করে।
এমপি/আরএ/