সাকিব যা পারেননি তাই করে দেখিয়েছেন মাশরাফি
বিপিএলের নবম আসরে মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্স ও সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল পাশাপাশি হাঁটছিল। সিলেট শীর্ষে, তাদেরকে ধাওয়া করছিল বরিশাল। শেষ পর্যন্ত সিলেট শীর্ষস্থান ধরে রেখে প্লে-অফে জায়গা করে নিলেও শেষ দুই ম্যাচ হেরে বরিশাল নিজেদের অবস্থান আর ধরে রাখতে পারেনি। চারে থেকে তারা প্লে-অফ খেলে।
অবস্থানের এরকম অবনতির কারণে প্লে-অফে বরিশাল একটি মাত্র ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়। যেখানে জয়ের বিকল্প ছিল না। কিন্তু শীর্ষে থাকার সুবাদে সিলেটের সামনে ফাইনালে ওঠার জন্য সুযোগ থাকে দুইটি। জিতলে ফাইনাল, হারলেও আরেকটি ম্যাচ খেলার সুযোগ।
সিলেট-বরিশাল দুই দলই হেরে যায়। বরিশালের হাতে অপশন না থাকায় বাদ পড়ে। সিলেটের হাতে অপশন থাকায় তাদের সামনে আরেকটি সুযোগ চলে আসে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে আসে।
বরিশালের বিদায়ে যেমন এলিমিনেটর ম্যাচে সাকিবের ব্যাটিং না করা এবং এলোমেলো নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি আবার মাশরাফির সাহসী নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়েছে।
রংপুর রাইডার্সের কাছে বরিশাল ৩ উইকেটে ১৭০ রান করেও ম্যাচ জিততে পারেনি। রংপুর ৩ বল বাকি থাকতেই ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে আসরে টিকে থাকে। কিন্তু বরিশাল যে রান করেছে, তাদের সেই সংগ্রহ আরও বেশি হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি, সাকিব তার পজিশনে ব্যাট করতে না নামায়। এমনকি পরে তিনি ব্যাটিংই করতে নামেননি। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলের ভালো অবস্থানে থাকার পরও সাকিবের এভাবে ব্যাটিং করতে না নামা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অবশ্য এটা স্বাভাবিকই। কারণ এবারের আসরে সাকিব ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে আছেন। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচের আগ পর্যন্ত ১৩ ম্যাচের ১১ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৭৫ রান করে তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তিনে ছিলেন। স্ট্রাইকরেট ছিল ১৭৪.৪১। তিনটি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। যার দুইটি ছিল পরপর অপরাজিত ৮১ ও অপরাজিত ৮৯।
সাকিব তার পজিশনে ব্যাটি করতে নামলে, তখন দলের রান ছিল ১৩.৩ ওভারে ২ উইকেটে ১১৫। কিন্তু তিনি নিজে না নেমে করিম জানাতকে চারে পাঠান। তবে তিনি দলের সেই চাহিদা পূরণ করতে পারেননি। ২৫ বলে ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। এমনকি ৬৯ রান করে মিরাজ আউট হওয়ার পরও সাকিব ব্যাট করতে নামেননি। তখনো দলের ওভার বাকি ছিল ৪.৫টি। এসময় তিনি ব্যাট করতে পাঠান নতুন আসা লঙ্কান রাজাপাকসেকে। রাজাপাকসে ১০ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত থাকেন।
সাকিব তার পজিশনে না নামায় দলের রান ৬.৩ ওভারে যোগ হয় ৫৫। কিন্তু সাকিব যে ফর্মে ছিলেন তিনি নামলে রান আরও বেশি হতে পারত বলে অনেকেই মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে বরিশালের জয়ের সম্ভাবনাও থাকত!
সাকিবের এভাবে ব্যাট করতে না নামায় অন্য অনেকের মতে অবাক হয়েছেন দলের কোচ ও সাকিবের মেন্টর নাজমুল আবেদীন ফাহিম। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, ব্যাটিং অর্ডারের পরিবর্তন সবই সাকিব অধিনায়ক হিসেবে নিজে নিয়েছে। তবে সাকিব তার পজিশনে ব্যাট করতে নামলে ভালো হতো বলেও জানান তিনি। সাকিবের এরকম সিদ্ধান্তে ম্যাচ হারের পর বরিশাল শিবিরে ক্ষোভ দেখা দেয়। ফরচুন বরিশালের ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি পোস্টও করা হয়। যদিও পরে তা মুছে ফেলা হয়েছিল।
সাকিবের বিপরীত অবস্থা ছিল মাশরাফির। প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে দলের ১৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরও সবাইকে চমকে দিয়ে মাশরাফি নিজে ব্যাট করতে নেমে যান। এই আসরে এর আগে তিনি ৩ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে রান করেছিলেন মাত্র ২৮। সেখানে দলের ক্রান্তিকালে ব্যাট করতে নেমে ঠিকই হাল ধরেন। রান করেন ১৭ বলে ২৬। যদিও তিনি হার বাঁচাতে পারেননি। এই ম্যাচ মাশরাফি অবশ্য ১ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছিলেন ১০।
প্রথম কোয়ালিফায়ার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারেও মাশরাফি একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এবার দলের ভালো পজিশনে নামেন ব্যাট করতে। ৮.৫ ওভারে ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হওয়ার পর মাশরাফি নামেন তিনে। আবারও সফল তিনি। প্রথম বলেই ছক্কা মেরে শুরু করেন। পরের বলে চার। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৬ বলে ২৮ রান করেন। যা ছিল দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। সর্বোচ্চ রান ছিল ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর ৪০। বল হাতেও তিনি ছিলেন বেশ সফল। উইকেট না পেলেও অন্তত রান নিয়ন্ত্রণের দিক দিয়ে। ৩ ওভার রান দেন ২৪। এর মাঝে সবচেয়ে ভাইটাল ছিল তার করা ১৬তম ওভার।
এসময় রংপুরের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩০ বলে ৪৬ রানের। হাতে ৭ উইকেট। ক্রিজে সেট দুই ব্যাটার রনি তালুকদার ৫৯ ও নুরুল হাসান সোহান ২৭ রানে ব্যাট করছেন। মাশরাফি এই ওভারে রান দেন মাত্র ৪। ম্যাচে তিনি ৩ ওভারে ২৪ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। এভাবেই মাশরাফি দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে যেমন আগে নামার সাহস দেখিয়েছেন, তেমনি বল হাতেও। তার এমন ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সবাই। তাইতো দলকে প্রথমবারের মতো ফাইনালে তোলার পর সিলেট স্ট্রাইকার্স ফ্রাঞ্চাইজির এক কর্মকর্তা মাশরাফিকে কোলে তুলে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এভাবেই ফুটে উঠেছে দুইজনের নেতৃত্ব ও গুণের ব্যবধান।
এমপি/এসজি