সিলেটের ফাইনালে বিদেশিদের ভূমিকা
খেলা শুরু হতে আর বেশি সময় বাকি না। ঘড়ির কাঁটা ৩টা পার হয়ে গেছে। এমন সময় সিলেট স্ট্রাইকার্সের হোয়াটসআপ গ্রুপে একটি ম্যাসেজ। ইংল্যান্ডের বাহাতি পেসার লুক উড দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে তিনি খেলবেন। সিলেটের এই ম্যাসেজই বুঝিয়ে দেয় বিদেশি ক্রিকেটারের গুরুত্ব কতটা বেশি।
এবারের বিপিএলে বর্ণনাতীতভাবে ভালো করেছেন দেশি ক্রিকেটারার। যা অতীতে খুব একা দেখা যায়নি। পাশাপাশি ছিল বিদেশি ক্রিকেটারদের ভূমিকাও। তাদের ভূমিকাটা ছিল অনেক সময় যোগানদাতার মতোই। এই যোগানই পরবর্তীতে দলের মাঝে ভারসাম্য বজায় রেখেছে। দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছে।
পিএসএল খেলার জন্য বিপিএলের প্লে অফ রাউন্ড থেকে আর পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের দেখা যায়নি। তাদের শূন্যস্থান পূরণ করতে গিয়ে প্লে অফের চারটি দলকে অনেক হিমশিম খেতে হয়েছে। কেউ কেউ যথাযথভাবে পারলেও কেউ কেউ আবার পারেনি। এই না পারার তালিকায় ছিল সিলেট স্ট্রাইকার্সও। যার খেসারত তারা দিয়েছিল কোয়ালিফায়ার-১ ম্যাচ বাজেভাবে হেরে। সেই ম্যাচে খেলা চার বিদেশির অবদান ছিল খুবই বাজে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের আগে সিলেট তাই আরও ভালো মানের বিদেশি ক্রিকেটার পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। তারই ফসল ইংল্যান্ডের লুক উডের আগমন। তাক নিয়ে আসার যর্থাতথা তিনি প্রমাণ করেন ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে।
লুক উডকে পেতে সিলেট স্ট্রাইকার্স ২০ দিন আগে থেকেই যোগাযোগ করে যাচ্ছিল বলে খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। তখন তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি খেলছিলেন। ১২ তারিখ রাতে শেষ হয়ে সেই আসর। ফাইনালে তার দল গালফ জায়ান্ট হেরে যায। দুপুরে এসে বাংলাদেশ হাজির হন।
সিলেটকে বিপিএলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে তুলতে বিদেশি ক্রিকেটারদের ভূমিকা ছিল খুবই উল্লেখ করার মতো। সেখানে রংপুরের বিদেশিরা সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেননি।
এক লুক উডকে আনলেও সিলেট তাদের সেরা একাদশে বিদেশি কোটায় পরিবর্তন আনে দুইটি। লুক উড ছাড়াও সেরা একাদশে রাখে থিসারা পেরেরাকে। বাদ পড়েন ইসুরু উদানা ও শফিকউল্লাহ গাফারি। রংপুরের সেরা একাদশে বিদেশি কোটায় পরিবর্তন ছিল একটি। মজিবুর রহমানের পরিবর্তে খেলানো হয় স্যাম বিলিংসকে। ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে এসে তিনি ১ রান করে আউট হয়ে যান।
সিলেটের ৭ উইকেটে ১৮২ রানের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ছিল ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর ৪০। পরের দুইটি সর্বোচ্চ রানও ছিল দেশি ক্রিকেটারদের। মাশরাফি ২৮ ও তৌহিদ হৃদয় ২৫ রান করেন। এরপরই ছোট ছোট অবদান রাখেন জর্জ লিন্ডে, থিসারা পেরেরা ও রায়ান বার্ল। এর মাঝে জর্জ লিন্ডে ও রায়ান বার্লের স্ট্রাইকরেট ছিল দুইশর উপরে। দলের পূঁজি বাড়ানোতে তাদের এই অবদান রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
রায়ান বার্ল মাত্র ৬ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে ১৫ রান করেন। তার স্ট্রাইকরেট ছিল ২৫০.০০। জর্জ লিন্ডে ১০ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ২১ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার স্ট্রাইকরেট ছিল ২১০.০০। থিসারা পেরেরা ১৪০.০০ স্ট্রাইকরেটে ১ ছক্কায় ১৫ বলে ২১ রান করে ইনিংস শেষ হওয়ার এক বল আগে রান আউট হন। তিনি ও জর্জ লিন্ডে সপ্তম উইকেচ জুটিতে ৩.৩ ওভারে ৩৬ রান যোগ করেন।
বল হাতে জর্জ লিন্ডেকে দিয়ে মাশরাফি বোলিং সূচনা করান। ৪ ওভার তিনি ৩ স্পেলে করেন। প্রথম ওভোরে তিনি মাত্র৩ রান দেন। এরপর আবার সপ্তম ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে প্রথম ৪ বলে মাত্র ১ রান দেন। শেষ ২ বলে নিকোলাস পুরান তাকে ২টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। তৃতীয় ওভার করেন ইনিংসের ১১ নম্বর ওভারে। এক বাউন্ডারিতে রান দেন ৭। পরের ওভার করেন ১৩ নম্বার ওভারে। রান দেন ১০। তিনি কোনও উইকেট পাননি।
রংপুরকে বেকায়দায় ফেলে দেন উড়ে আসা লুক উড। ৩৪ রানে নেন ২ উইকেট। তারচেয়ে সবচেয়ে বড় শিকার ছিল দুর্ধর্ষ হয়ে উঠা নিকোলাস পুরান। মাত্র ১৪ বলে ৪ ছক্কা ও ১ চারে তিনি ৩০ রান করেন। তার এই ছোট্ট ক্যামিও সিলেট শিবিরে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। আর কিছুক্ষণ থাকতে পারলে ম্যাচের চিত্রনাট্য সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারতে! কিন্তু তা হতে দেননি এই লুক উড পুরানকে শিকার করে। এরপর একই ওভারে শেখ মাহেদি হাসান ও ডুয়াইন ব্রাভোকে আউট করে ম্যাচকে সম্পূর্ণ সিলেটের দিকে নিয়ে যান। দলের প্রয়োজনে রায়ান বার্লও এক ওভার হাত ঘুরিয়ে ১১ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকেন।
রংপুরের বিদেশিদের মাঝে বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন ডুয়াইন ব্রাভো ও দাসুন শানাকা। ব্রাভো ৩১ রানে ১টি ও শানাকা ৪৫ রানে নেন ২ উইকেট। ব্রাভোকে খেলতে কিছুটা সমস্যা হলেও শানাকাকে বেধড়ক পিটিয়েছেন সিলেটের ব্যাটসম্যানরা। শানাকার করা ইনিংসের শেষ ওভারে ২ ছক্কা ও ১ চারে ১৭ রান তুলে নেন জর্জ লিন্ডে। শানাকার আগের (ইনিংসের ১৫তম) করা ওভারে রায়ান বার্ল ১টি করে চার ও ছয় মেরে আদায় করেছিলেন ১৪ রান। অবশ্য প্রথম ২ ওভারে শানাকা রান কম দিয়েছিলেন। ৪ ও ১০ করে রান দিয়েছিলেন ১৪। ব্যাট হাতে শানাকা ৯ বলে ২ চারে ১০ ও ব্রাভো কোনো রান না করে আউট হয়েছিলেন।
এমপি/এসএন