দীর্ঘদিনের দীর্ঘশ্বাস দূর করে ফাইনালে সিলেট
বিপিএলে দীর্ঘদিনের দীর্ঘশ্বাস দূর করে প্রথমবারের মত ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে মাশরাফির সিলেট স্টাইকার্স। আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সকে হারিয়েছে ১৯ রানে।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা সিলেটের ৭ উইকেটে ১৮২ রানের জবাবে রংপুর করে ৮ উইকেটে ১৬৩ রান। ১৬ ফেব্রুয়ারি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বিপক্ষে প্রথমবার শিরোপা জেতার লড়াইয়ে নামবে সিলেট। কুমিল্লা এখন পর্যন্ত শিরোপা জিতেছে ৩ বার।
লিগ পর্বে সিলেট দুইবারই সহজেই হার মেনেছিল রংপুরের কাছে। কিন্তু আজকের জয় তাদের সেই দুই হারের হতাশা দূর করে উল্লাসে ভাসিয়েছে।
সিলেটের জয়ে দেশি খেলোয়াড়দের পাশাপাশি বিদেশিরাও জ্বলে উঠেন। ব্যাট হাতে থিসারা পেরেরা, জর্জ লিন্ডে, রায়ান বার্ল যেমন অবদান রেখেছেন, তেমনি বল হাতে অবদান রাখেন লুক উড, জর্জ লিন্ডে।
লিগ পর্বে সিলেটের ১৭০ রানের জবাব দিতে নেমে রংপুরের দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ উদ্বোধনী জুটিতেই ১০০ রান এনে দিয়ে দলের জয়কে সহজতর করে তুলেছিলেন। আজ টার্গেট ছিল ১২ রান বেশি। প্রয়োজন ছিল আগের মতই সূচনার। কিন্তু আজ তারা পারেননি। উপরন্তু ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে রংপুর বিপাকে পড়ে যায়। সংগ্রহ করে ৩৭ রান।
ইংল্যান্ডের স্যাম বিলিংসকে নিয়ে আসায় ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখকে বাদ দিয়ে তাকে নেওয়া হয়। রনির সঙ্গে ওপেন করতে নেমে শুরুতেই আউট হয়ে যান ১ রান করে তানজিম সাকিবের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে।
রংপুরকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে নিয়ে আসা ম্যাচের নায়ক শামীম পাটোয়ারি আজ আর সুবিধা করতে পারেননি। রুবেলের শট বলকে ছক্কা বানাতে গিয়ে জর্জ লিন্ডের হাতে ধরা পড়েন ১১ বলে ১টি করে চার ও ছক্কা মেরে ১৪ রানে। দলের রান তখন ২ উইকেটে ৩৪।
দলের এই রকম বিপর্যয়ে রনির সঙ্গে জুটি বেঁধে নিকোলাস পুরান ত্রাতা হিসেবে হাজির হন। এক পর্যায়ে সিলেটের শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে চার-ছক্কার মেলা বসান। এর মাঝে ছিল পরপর ৩ বলে তিন ছক্কা। এই সময় যে বোলারই এসেছেন তার উপরই তিনি চড়াও হয়েছেন। সেই ধারা ধরে রাখতে গিয়েই তিনি লুক উডের বলে জর্জ লিন্ডের হাতে ধরা পড়েন ১৪ বলে ৪ ছক্কা ও ১ চারে ৩০ রান করে। রনির সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে তিনি ২.৪ ওভারে ৩৪ রান যোগ করেন।
পুরান আউট হলেও তার এই ব্যাটিংয়ের কারণেই রংপুরের রান ১০ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৮৩। যেখানে সিলেটের রান ছিল ২ উইকেটে ৭৯। পুরানের এই ইনিংসই সিলেটের বোলারদের শাসন দুর্বল করে রংপুরের ব্যাটসম্যানদের সাহসী করে তুলে। ৬৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর কারণে রনি শুরুতে একটু ধীরগতি ছিলেন। হাফ সেঞ্চুরি করেন ৪০ বলে। তার সঙ্গে যোগ দেওয়া অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও হাত খুলে খেলতে থাকেন। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৯.৪ ওভারে ৮২ রান যোগ করেন। এ সময় রংপুর দারুণভাবে খেলায় ফিরে এসে ম্যাচের পাল্লা নিজেদের দিকে নিয়ে নেয়। ২৪ বলে ৩৩ রান করে তানজিম সাকিবের বলে ছয় মারতে গিয়ে থিসারা পেরেরার হাতে ক্যাচ আউট হয়ে যান অধিনায়ক। ৩ বল পর রনি দুর্ভাগ্যবশত রান আউট হলে রংপুরের চাপ বেড়ে যায়। রনি ৫২ বলে ২ ছক্কা ৭ চারে ৬৬ রান করেন। এই চাপ আরও ঘনিভূত হয় দ্রুতই শেখ মাহেদি হাসান(২) ও ডুয়াইন ব্রাভো (০) ফিরে গেলে। ৩ ওভারে মাত্র ৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে রংপুর ম্যাচকে কঠিন করে তুলে। তাই শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২৮ রান তারা আর সংগ্রহ করতে পারেনি। রুবেলের করা ওভারের প্রথম ২ বলে শানাকা বাউন্ডারি মেরে উত্তেজনার আবাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর একটি রানও নিতে পারেননি। শেষ বলে আবার বোল্ড হয়ে যান।
লুক উড ৩৪ রানে নেন ৩ উইকেট। ম্যাচ সেরা তানজিম হাসান সাকিব অসাধারণ বোলিং করে ১৮ রানে ২ উইকেট নেন। রুবেলও ২ উইকেট নেন ৪২ রানে।
এমপি/আরএ/