ফাইনালের টিকিট পেল কুমিল্লা, অপেক্ষা বাড়ল সিলেটের
প্লে-অফ রাউন্ড শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন দলের হয়ে খেলা পাকিস্তানের ক্রিকেটারার নিজ দেশে ফিরে যান পিএসএল খেলতে। এর ফলে প্লে অফের চার দল নতুন করে বিদেশি ক্রিকেটার সংগ্রহ করে। এতে করে দলগুলোর শক্তির ভারসাম্যের ব্যাপক হেরফের হয়। কোন দলের কতটা শক্তি খর্ব হয়েছে আর কোন দলের কতটা বেড়েছে তার একটা পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল। যেখানে এগিয়ে ছিল রংপুর রাইডার্স আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। মাঠের খেলায়ও মিলেছে সেই পূর্বাভাসের প্রতিফলন। প্রথম ম্যাচ ফরচুন বরিশালকে বিদায় করে টিকে থাকে রংপুর রাইডার্স। পরের ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৪ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস পেয়ে গেছে ফাইনালের টিকিট। লিগের শুরু থেকে সব কিছুতে এগিয়ে থাকা সিলেট এবার সবার আগে ফাইনালে যেতে পারেনি। সেটি পড়ে গেছে এখন চরম অনিশ্চয়তায়। শেষ সুযোগকে কাজে লাগাতে তারা ১৪ ফেব্রুয়ারি কোয়ালিফায়ার-২ খেলবে রংপুরের বিপক্ষে। এই ম্যাচে যে দল জিতবে তারাই ১৬ ফেব্রুয়ারি শিরোপার মঞ্চে লড়বে কুমিল্লার বিপক্ষে।
প্রথম ৩ ম্যাচ হেরে পরে টানা ৯ ম্যাচ জিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠা কুমিল্লা এই ম্যাচেও ছিল আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য। তারা আরও বেশি করে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠার কারণ বিশ্বমানের টি-টোয়েন্টির তিন সেরা ক্রিকেটার মঈন আলী, আন্দ্রে রাসেল ও সুনিল নারিনকে নিয়ে আসা। এই খেলোয়াড় সংগ্রহে আবার সিলেট পিছিয়ে পড়ে। যার খেসারত তারা দিয়েছে বাজেভাবে ম্যাচ হেরে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৭.১ ওভারে তারা ১২৫ রান করে অলআউট হয়। কুমিল্লা ৩.২ ওভার হাতে রেখে নির্বিঘ্নে সেই রান অতিক্রম করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান করে।
বলা যায় দুই দলের বিদেশি ক্রিকেটাররা ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেখানে কুমিল্লার অতিথিরা দলের জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বল হাতে সুনিল নারিন ৩.১ ওভারে ৮ রানে ১টি, মঈন আলী ২ ওভারে ২০ রানে ১টি ও আন্দ্রে রাসেল ৩ ওভারে ২২ রানে ২টি উইকেট নেন। পরে ব্যাট হাতে সুনিল নারিন ইনিংসের উদ্বোধন করতে এসে মাত্র ১৮ বলে ৪ ছক্কা ও ৩ চারে করেন ৩৯ রান। মঈন আলী ১৩ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে করেন ২১ রান। আন্দ্রে রাসেল ১০ বলে ২ ছক্কায় ১৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। লিগের শুরু থেকে খেলা চার্লস জনসন অবশ্যই এই ম্যাচে ভালো করতে পারেননি। ৪ রান করে রান আউট হয়ে যান।
সিলেটের চার বিদেশি শফিকউল্লহ গাফারি (৫), রায়ান বার্ল (০), জর্জ লিন্ডে (১৩) ও ইসুরু উদানার (০) সম্মিলিত সংগ্রহ ছিল মাত্র ১৭। আর এখানেই মূলত সিলেট ব্যাকফুটে চলে যায়। বল হাতেও তারা সফল হতে পারেননি। জর্জ লিন্ডে ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকেন। শফিকউল্লাহ গাফারি ৪ ওভারে ২১ রানে নেন ১ উইকেট। এখানেই পরিষ্কার দুই দলের ৮ বিদেশির অবদান।
কুমিল্লার টার্গেট মাত্র ১২৫ অতিক্রম করা। লিটনের সঙ্গে সুনিল নারিনকে ইনিংসের উদ্বোধন করতে পাঠিয়ে পুরো ম্যাচকে নিজেদের গ্রিপে নিয়ে নেয় কুমিল্লা। সুনিলের বিষ্ফোরক ১৮ বলে ৩৯ রানের ইনিংসের সুবাদে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান আসে ৩ উইকেটে ৫৮। এ সময় সুনিল নারিন ছাড়া একে একে আউট হন লিটন ৭, জনসন চার্লস ৪ রান করে।
সুনিল নারিন আউট হওয়ার পর কুমিল্লার রান সংগ্রহের সেই বিষ্ফোরক ধারা অব্যাহত ছিল না। তার প্রয়োজনও ছিল না। কারণ ব্যাটিং পাওয়ার প্লে( ৫৮//৩) শেষে তাদের জয়র জন্য প্রয়োজন ছিল ১৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৮ রানের। ওভার প্রতি পাঁচেরও কম। দলীয় ৭৩ রানে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ১৩ রান করে শফিকউল্লাহ গাফারির শিকার হয়ে ফিরে যাওয়ার পর মোসাদ্দেক ও মঈন আলী জুটি বাঁধেন।
মোসাদ্দেক পরিস্থিতি বুঝে দেখে-শুনে খেললেও মঈন আলী খেলেন আক্রমণাত্বক। ৪ ওভারে ৩৪ রান করে তারা বিচ্ছিন্ন হন। মঈন আলী ১৩ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ২১ রান করে রুবেলের বলে তানজিম হাসান সাকিবের হাতে ধরা পড়লে। রুবেল এক ওভরে জাকের আলীকেও কোনো রান না করে বিদায় করলে কুমিল্লার শুধু জয়ের ব্যবধান কমে আসে।
মঈন আলী আউট হওয়ার পর আন্দ্রে রাসেল এসে খেলেন যথারীতি তার ঢঙয়ে মারমুখি ইনিংস। ১০ বলে ২ ছক্কায় ১৫ রান করে অপরজিত থাকেন। জয়সূচক রান আসে রুবেলের ওভারে পরপর দুই ছক্কায়। মোসাদ্দেক তখন অপরাজিত ৩ চারে ২৭ বলে ২৭ রান করে। ম্যাচ সেরা হন তানভীর ইসলাম।
রুবেল ১৩ রানে নেন ৩ উইকেট। শফিকউল্লাহ গাফারি ২১ ও তানজিম হাসান সাকিব ২৮ রানে নেন ১টি করে উইকেট।
এমপি/এসআইএইচ