প্লে অফে পাকিস্তানিদের বিকল্প কেমন হবেন নতুন বিদেশিরা
আজ শুরু হচ্ছে বিপএলের প্লে অফ রাউন্ড। এবারের বিপিএলে অনেকে আগেই চার দলের প্লে অফ খেলা নিশ্চিত হয়ে যায়। চার দল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর তাদের মাঝে চলে শীর্ষ স্থানের লড়াই। সেই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের। এই দুই দল খেলবে কোয়ালিফায়ার-১। এলিমেনেটর খেলবে রংপুর রাইডার্স ও ফরচুন বরিশাল।
যে শক্তি নিয়ে চার দল প্লে অফে এসেছে, দেখছে শিরোপার স্বপ্ন, সেখানে ব্যাপক ছন্দ-পতন ঘটেছে। কারণ নবম বিপিএলের প্রাণ ভোমরা পাকিস্তানি সব ক্রিকেটার চলে গেছেন তাদের পিসিএল খেলার জন্য। এবারের বিপিএলে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা আলো ছড়িয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছেন। আর দলগুলোর কাছে হয়ে উঠেছিলেন আস্থার প্রতীক। তাদের গুরুত্ব এতটাই অপরিসীম ছিল চলে যাওয়ার পরও যে মাত্র একটি ম্যাচ খেলার জন্য সিলেট মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিমকে এবং বরিশাল ইফতেখার আহমেদকে ফিরিয়ে এনেছিল। এক ম্যাচ খেলে তাার আবার চলে গেছেন। পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা সর্বশেষ বিপিএলে খেলেছেন লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত (১০ ফেব্রুয়ারি)। প্লে অফের তিনটি ও ফাইনাল ম্যাচে তাদের আর পাওয়া যাবে না।
পৃথিবীতে কারো জন্যই কোনো কিছু থেমে থাকে না। হয়তো বিকল্প পাওয়া যায় না। পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা চলে যাওয়ায় দলগুলোও বসে থাকেনি। তারা নিজ নিজ সাধ্যমতো নিয়ে এসেছেন নতুন করে বিদেশি ক্রিকেটার। এই সব বিদেশি ক্রিকেটাররা কিন্তু আবার বিশ্ব ক্রিকেটোর পরিচিত মুখ। ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন তারা। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা এবারের বিপিএলে যে রকম দ্যুতি ছড়িয়েছেন, নতুন আসা বিদেশি ক্রিকেটাররা কি তার যোগ্য প্রতিদান দিতে পারবেন?
পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা সিলেটের কথাই ধরা যাক। চলে গেছেন মোহাম্মদ আমির, ইমাদ ওয়াসিম ও মোহাম্মদ হারিস। প্রথম দুই জন ছিলেন দলের সেরা একাদশের নিয়মিত সদস্য। দুইজনই দলের হয়ে সর্বাধিক উইকেট শিকারির তালিকায় আছেন সেরা তিনে। মোহাম্মদ আমির ১১ ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছেন ১৪টি। ইমাদ ওয়াসিমও সমান ম্যাচ খেলে শিকার করেন ১২টি। এই দুইজনের মাঝে দেশি তরুণ পেসার রেজাউর রহমান রাজ ১৩টি ও মাশরাফি ১২টি উইকেট নিয়েছেন।
১০ ম্যাচ খেলে মোাহম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিম চলে যাওয়ার পর সিলেট নিয়ে আসে পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইরফান ও আফগানিস্তানের গুলবাদিন নাইবকে। কিন্তু এই দুই জন তার যোগ্য প্রতিদান দিতে পারেননি। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খেলতে নেমে মোহাম্মদ ইরফান ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। সেই ম্যাচ আবার গুলবাদিন নাইব খেলেননি। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে আবার তাকে নামানো হয়। ইরফানকে সেরা একাদশ রাখা হয়নি। এই ম্যাচ আবার খেলেতে আবার পাকিস্তান থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিমকে। ৪ ওভারে ১০ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ইমাদ ওয়াসিম। মোাহম্মদ আমির ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। গুলবাদিন ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন।
প্লে অফের জন্য সিলেট নতুন করে উড়িয়ে এনেছে প্লে অফের জন্য নতুন করে নিয়ে এসেছে জর্জ লিন্ডে ও শ্রীলঙ্কান ইসুরু উদানোকে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে জর্জ লিন্ডে ১৪ ম্যাচ খেলে ১৫ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাত রান করেছেন ১১১। উদানা ৩৫ ম্যাচ খেলে ২৫৬ রান ও ২৭ উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া আগে থেকে আছেন জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল, টম মরিস, অ্যাকারম্যান, শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা। এ ছাড়া মোহাম্মদ ইরফান ও গুলবাদিন নাইবতো আছেনই।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চলে গেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, খুশদিল শাহ, নাসিম শাহ ও হাসান আলী। মোাহম্মদ রিজওয়ান ১০ ম্যাচে ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৫১ ও খুশদিল শাহ ১১ ম্যাচে ২৩৯ রান করেছেন। উইকেটও নিয়েছেন ৮টি।নাসিম শাহ ৩ ম্যাচে ৭টি ও হাসান আলী ৫ ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন। সুনিল নারিন ও আন্দ্রে রাসেলকে ইতোমধ্যে এনে দুইটি ম্যাচ খেলানো হয়েছে।
বরিশালের বিপক্ষে আন্দ্রে রাসেলতো খেলেন ১৬ বলে ৩০ রানের অপরাজিত ঝড়ো ইনিংস। তার এই ইনিংসই দলের জয়কে তরান্বিত করে। নতুন করে তারা নিয়ে এসেছে ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার মঈন আলী। দক্ষিণ আফ্রিকার ডু প্লেসিও আসার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আগে থেকেই খেলছেন এই আসরের চার সেঞ্চুরিয়ানের একজন উইন্ডিজের জনসন চার্লস, চাদ ওয়ালটন।
ফরচুন বরিশাল হারিয়েছে ইফতেখার আহমেদ, মোহাম্মদ ওয়াসিম ও হায়দার আলীকে। হায়দার আলী দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন না। ১১ ম্যাচের ১১ ইনিংসে ১০০ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেলে ইফতেখার ৩৫১ রান কর দলের হয়ে তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। তিনি বরিশালের জন্য অপরিহার্য ছিলেন। তার শূন্যস্থান পূরণ করতে দক্ষিণ আফ্রিকার ডোয়াইন পিটোরিয়াসকে উড়িয়ে এনে একটি ম্যাচ খেলিয়েছে। সেখানে তিনি তার যোগ্য প্রতিদান দিয়েছেন ২৯ বলে ৪৮ রান করে। বল হাতেও ৩ ওভারে ২৮ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। প্লে অফের জন্য তারা নতুন নিয়ে এসেছে শ্রীলঙ্কার ভানুকা রাজাপাকসে ও উইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচারকে। ভানুকা ৩৭ ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৬৭৮। ফ্লেচার ৫৪ ম্যাচে রান করেছেন ৯৫০। এ ছাড়া লিগের শুরু থেকেই ঘুরে-ফিরে খেলা ইব্রাহিম জাদরান, করিম জানাত, চাতুরাঙ্গা ডি সিলভা দলের সঙ্গেই আছেন।
পাকিস্তানের ক্রিকেটরদের শূন্যস্থান পূরণে রংপুর রাইডার্স বেশ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ নেওয়াজের মতো ক্রিকেটারর সার্ভিস না পেলেও তাদের বিকল্প হিসেবে আফগানিস্তানের মজিবুর রহমান ও শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকাকে নিয়ে এসেছে। আফগান বোলিং অস্ত্রের অন্যতম ধারালো বোলার অফ স্পিনার মজিবুর রহমান ৩৬ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৪৯টি। দাসুন শানাকা ৮৫ ম্যাচে ১৩২৮ রান করেছেন। উইকেট নিয়েছেন ২৩টি। নিকোলাস পুরান এবং ডোয়াইন ব্রাভোকেও তারা নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। দলের সঙ্গে রয়ে গেছেন রহমাতউল্লাহ গুরবাজ, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, নাভীন-উল-হক, অ্যারন জোনস ও টম কোহলার।
এমপি/এসএন