এই কুমিল্লাকে রুখতে পারবে কি সিলেট
এবারের বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের সঙ্গে কোনো দলের ম্যাচ মানেই তাতে সব আলো থাকে সিলেটের দিকে। কিন্তু আজ ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে এই প্রথম সিলেটের দিক সব আলো নেই। সেখানে স্পটলাইট কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের দিকে। ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে ফেভারিট বলে কোনো শব্দ থাকে না। কিন্তু আজকের ম্যাচে সেটি থাকছে এবং সেটি কুমিল্লার দিকেই।
কিন্তু কেন কুমিল্লার দিকে? এর কারণও আছে। কারণ এই কুমিল্লা শুরুর কুমিল্লা নয়। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা যাত্রা শুরু করেছিল টানা তিন হারে। এমন সূচনায় তাদের শেষ চারে খেলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচ থেকেই তারা ঘুরে দাঁড়ায়। সেই ঘুরে দাঁড়ানো এমন যে পরে আর তারা কোনো ম্যাচ হারেইনি। জিতেছে টানা ৯ ম্যাচ। শুরুর ৩ হারের একটি ছিল যেখানে সিলেটের বিপক্ষে কাছে ৫ উইকেটে, সেখানে টানা ৯ জয়ে ধরাশায়ী করেছিল সিলেটকেও একই ব্যবধানে। যা ছিল এবারের বিপিএলে সিলেটের প্রথম হারও। এমন দুর্দান্ত নৈপুণ্যে কুমিল্লা প্লে অফ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পয়েন্টের দিক দিয়ে সিলেটকেও স্পর্শ করে ফেলে। নেট রান রেটে তারা নেমে আসে দুইয়ে। এমন অপ্রতিরোধ্য কুমিল্লাকে কি সিলেটের পক্ষে আটকানো সম্ভব হবে?
এরই মাঝে আবার পাকিস্তানের ক্রিকেটারা পিএসএল খেলতে চলে যাওয়ায় সবারই শক্তির উত্থান-পতন ঘটেছে। প্লে অফের চার দলকেই নতুন করে বিদেশি খেলোয়াড় সংগ্রহ করতে হয়েছে। এখানেও আবার এগিয়ে কুমিল্লা। তাদের গেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, খুশদিল শাহ, নাসিম শাহ ও হাসান আলী। মোহাম্মদ রিজওয়ান ১০ ম্যাচে ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৫১ ও খুশদিল শাহ ১১ ম্যাচে ২৩৯ রান করেছেন। উইকেটও নিয়েছেন ৮টি। নাসিম শাহ ৩ ম্যাচে ৭টি ও হাসান আলী ৫ ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন। সুনিল নারিন ও আন্দ্রে রাসেলকে ইতোমধ্যে এনে দুইটি ম্যাচ খেলানো হয়েছে। বরিশালের বিপক্ষে আন্দ্রে রাসেল তো খেলেন ১৬ বলে ৩০ রানের অপরাজিত ঝড়ো ইনিংস। তার এই ইনিংসই দলের জয়কে তরান্বিত করে। নতুন করে তারা নিয়ে এসেছে ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার মঈন আলীকে। এ ছাড়া আগে থেকেই খেলছেন এই আসরের চার সেঞ্চুরিয়ানের একজন উইন্ডিজের জনসন চার্লস। আছেন উইন্ডিজের আরেক ক্রিকেটার চাদ ওয়ালটন। কুমিল্লা দলে আছেন আপাতত এই চার বিদেশিই।
কুমিল্লা যেটা টানা তিন ম্যাচ হারের পর শুরু করেছে, সিলেট সেটা শুরু করেছিল শুরুতেই। প্রথম ৫ ম্যাচ তারা টানা জিতেছিল। এরপর কুমিল্লার কাছে ষষ্ঠ ম্যাচে হারার পর তারা বাকি ৬ ম্যাচে হার মানে আরও ২টিতে। এভাবেই সিলেট শুরু থেকে শীর্ষে থাকা অবস্থান ধরে রেখে লিগ শেষ করে।
আজকের ম্যাচে সিলেটকে শক্তিশালী করে তোলার পেছনে অন্যতম কারিকর পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিম চলে গেছে ন। মোহাম্মদ আমির ১১ ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছেন ১৪টি। ইমাদ ওয়াসিমও সমান ম্যাচ খেলে শিকার করেন ১২টি। এই দুই জনের মাঝে দেশি তরুণ পেসার রেজাউর রহমান রাজ ১৩টি ও মাশরাফি ১২টি উইকেট নিয়েছেন।
১০ ম্যাচ খেলে মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিম চলে যাওয়ার পর সিলেট নিয়ে আসে পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইরফান ও আফগানিস্তানের গুলবাদিন নাইবকে। কিন্তু এই দুই জন তার যোগ্য প্রতিদান দিতে পারেনি। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খেলতে নেমে মোহাম্মদ ইরফান ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। সেই ম্যাচ আবার গুলবাদিন নাইব খেলেননি। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে আবার তাকে নামানো হয়। ইরফানকে সেরা একাদশ রাখা হয়নি। এই ম্যাচ আবার খেলেতে আবার পাকিস্তান থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিমকে। ৪ ওভারে ১০ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ইমাদ ওয়াসিম। মোহাম্মদ আমির ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। গুলবাদিন ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন।
প্লে অফের জন্য সিলেট নতুন করে উড়িয়ে এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকার জর্জ লিন্ডে ও শ্রীলঙ্কান ইসুরু উদানোকে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে জর্জ লিন্ডে ১৪ ম্যাচ খেলে ১৫ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাত রান করেছেন ১১১। উদানা ৩৫ ম্যাচ খেলে ২৫৬ রান ও ২৭ উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া আগে থেকে আছেন জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল, টম মরিস, অ্যাকারম্যান, শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা। এ ছাড়া মোহাম্মদ ইরফান ও গুলবাদিন নাইবতো আছেনই।
আজকের ম্যাচে তাই সব দিক দিয়েই এগিয়ে কুমিল্লা। সিলেটের জন্য প্লাস পয়েন্ট হতে পারে একটিই। একটি দল শুধুই জয়ের মাঝে থাকতে পারে না। কোনো নো কোনো ম্যাচে তাদের হারতেই হয়। সেই হার যদি আজ কুমিল্লার ললাটে লেখা থাকে। তবে যে দলই হেরে যাক না কেন, আসর থেকে বাদ পড়বে না। ১৪ ফেব্রুয়ারি তারা ফাইনালে উঠার আরকেটি সুযোগ পাবে কোয়ালিফায়ার-২ খেলে। যেখানে প্রতিপক্ষ থাকবে এলিমিনেটরে জয়ী দল।
এমপি/এসএন